সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০০ অপরাহ্ন
Uncategorized

পেডং-এর রূপোলি জ্যোৎস্না ও নীল পাহাড়ের গল্প!

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

কালিম্পং জেলার অন্তর্গত এই ছোট পাহাড়ি শহরের বর্ণনা নিয়ে আমার এই লেখনী। আমি সাধারণত পাহাড় ভালোবাসি। তবে, ভিড় এড়িয়ে থাকাটাই আমার বেশি ভালো লাগে। পাহাড়ের এমন এমন জায়গা আছে যেখানে আজও টিকে আছে সরল হৃদয়, নিষ্পাপ ভালোবাসা। মনে হবে, চারিদিকে শুধু পরিচিত মুখ, কত সরল-নিষ্পাপ-চাহিদাহীন সেই সব মুখ। কালিম্পং থেকে ৩২ কিলোমি দূরে এই পেডং শহর।

কলকাতায় হ্যালোজেন বাতির নিচে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা আর পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ২০১৮ সালে ২৫শে অক্টোবর ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা। চার তলার ব্যালকনিতে বসে কোজাগরী চাঁদ দেখতে দেখতে আমরা ছ’জন ঠিক করে ফেললাম যে কাল রাত্রেই আমরা বেড়িয়ে পড়ব বাংলার রূপসী কন্যা উত্তরবঙ্গের কোনো এক অচেনা পাহাড়ে। অজানা জঙ্গলই ছিল আমাদের লক্ষ্য। অনেক লড়াই করে শেষমেশ নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছালাম।

মনে পড়ে গেল, আমার আর এক পাহাড়ি ভাই তার হোমস্টেকে সে নতুন রূপে সাজিয়েছে। আমরা সেখানেই যাবো। ওই হোমস্টের মালিক, আমার পূর্ব পরিচিত। তাঁকে ফোনে সব জানিয়েদিলাম। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও চাকরি না করে পেডং-এ ১৫ একর জমির উপর গড়ে তুলেছে এক সুন্দর হোমস্টে। এই প্রকৃতির দেওয়া রুপটাতে নিজেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়েছে। পেডং যেতে NJP স্টেশন থেকে গাড়িতে চার ঘণ্টা লাগে। ভাড়া চার হাজার কিন্তু হোমস্টে থেকে গাড়ি পাঠালে পড়বে ৩ হাজার ৮০০ টাকা।

NJP থেকে পেডং প্রায় ৯২ কিলোমিটার। সেবক রোড হয়ে কালিম্পং পেরিয়ে গিয়েছে এই পথ। দারুন সুন্দর এই হোমস্টে। গত পরশু ইট পাথরের শহরের চার তলার ব্যালকনির থেকে দেখা পূর্ণ চন্দ্র আর আজকের এই পেডং পাহাড়ের কোলে শুয়ে তৃতীয়ার চাঁদ দেখা একেবারে ভিন্ন স্বাদ। যখন রিসর্ট-এ পৌঁছলাম তখন চাঁদের সাদা আলোতে সারা হোমস্টেতে ছেয়ে গিয়েছে। আর তার শরীর জুড়ে সাদা আলো আর নানা রং-এর ফুলের বাহারে মেতে রয়েছে গোটা প্রকৃতি।

নীল পাহাড়ের গল্প

নীল পাহাড়ের গল্প

আমি মুগ্ধ হয়ে এই স্বর্গীয় রূপ দেখছিলাম। কখন জানি না, অভ্যাসবশত একটা সিগারেটে ধরাতে গিয়ে হঠাৎ ছেঁকা লাগল। মনে হল এই মিষ্টি চাঁদের আলোতে দেশলাই আগুন একেবারেই বেমানান। সাদা আলোর মাঝে এই লাল, হলুদ ফুলের রংটাই যেন মানান-সই। সিগারেটের লাল আগুনটা একেবারেই বেমানান!

আমরা গেটা রাত কটেজের বারান্দাতে বসে এই শান্ত পাহাড়ি পরিবেশে নিজেদের উজাড় করে দিলাম গানে আবৃত্তিতে। আর সব শেষে নিঃশব্দতার শব্দ শুনতে শুনতে কখন জানি কানে ভেসে এল দূরের নাম না জানা পাখিটার প্রভাতি গান। যখন, ভোর চারটে তখন শুতে গেলাম। তখন, সেখনকার তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি।

নীল পাহাড়ের গল্প

নীল পাহাড়ের গল্প

আমরা যেখানে এসেছি সেখানকার নাম ধোবি ধারা। মাথা পিছু একজনের ভাড়া হাজার টাকা। পেডং এর পূর্ব দিগন্তে জুড়ে আছে জুলুক, নাথাং ভ্যালি মানে সিল্ক রুট। সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে থামবি পয়েন্ট থেকে দেখা জিগ জাগ রোডটাও দেখা যাবে। সঙ্গে বরফ ঢাকা নাথান ভ্যালি। গাড়িতে করে যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। দক্ষিণ প্রান্তে লাভা লোলেগাঁও ও রিশপ রয়েছে। পেডংয়ের উচ্চতা প্রায় ৫০০০ ফুট। কিন্তু ঠান্ডা বেশ ভালোই পরে। সকালে পেডংকে দেখেছি কুয়াশার চাদরে মোরা এক মিষ্টি সকালে। যখন ফুলেরা পাপড়ির আড়ালে ঢেকে ছিল। রাতে পেডংকে দেখেছি পূর্ণিমার আলো মেখে ঘুমন্ত অবস্থাতে। সকালে চেয়ার পেতে বারান্দায় বসে থাকলে সময়কে ধরতে পারবেন না। বাঁদিকে সাদা বরফে মোরা পাহাড় আর সোজাসুজি সবুজে ঢেকে থাকা রিশপ, লাভা প্রভৃতি পাহাড়ি শহর ভোলা যায় না।

কীভাবে পৌঁছবেন পেডং?

পেডং থেকে সেলারি গাও ১১ কিলোমিটার, লাভা ২২ কিলোমিটার, লোলেগাঁও ৩৮ কিলোমিটার, রিশপ ৩২ কিলোমিটার, ইচ্ছে গাও ৪২ কিলোমিটার, ডেলো ৩৫ কিলোমিটার, এছাড়া কোলাখাম,ঝান্ডি, ফাফারখেতি, দলগাঁও, ডামডিম, চাইল খোলা একদম কাছাকাছি। মালবাজার থেকেও পেডং যাওয়া যায়। গরুবাথান , চেইল খোলা, ঝান্ডি, লাভা, রিশপ হয়ে পেডং আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: