শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

পর্তুগাল

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

পর্তুগালের সরকারী নাম “পর্তুগিজ রিপাবলিক”। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এছাড়াও দুইটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণাধীন; এগুলি হল আসোরেস দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ, যারা উভয়েই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।

পর্তুগাল মোটামুটি আয়তাকৃতির। এর উত্তরের ভূমি পর্বতময় ও সবুজে ছাওয়া; এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া শীতল। এই অঞ্চলটি, বিশেষ করে দোউরু নদীর উপত্যকা আঙুরক্ষেতের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে পর্তুগালের বিখ্যাত পোর্ট ওয়াইনের জন্য আঙুর উৎপাদিত হয়। পর্তুগালের মধ্য ও দক্ষিণ ভাগ উষ্ণতর এবং শুষ্কতর। এখানে আঙ্গুর ছাড়াও গম ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য উৎপাদিত হয়। এখানে কর্ক, ওক ও জলপাই গাছও জন্মে। দেশের একেবারে দক্ষিণে আলগার্ভে নামের অঞ্চলটি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত রৌদ্রোজ্জ্বল বেলাভূমির জন্য পরিচিত।

১। দৌরু নদীর মোহনায় অবস্থিত প্রাক্তন রোমান বসতি পোর্তুস থেকে পর্তুগাল নামটি এসেছে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান শাসনের অবসানের পর ইউরোপের অভ্যন্তরভাগ থেকে জার্মানীয় জাতির লোকেরা এসে পর্তুগাল শাসন করে। এরপর উত্তর আফ্রিকা থেকে মুসলমানেরা এসে দেশটি দখল করে নেয়। এরপর এলাকাটি স্পেনীয় রাজাদের অধীনে আসে। ১২শ শতকে পর্তুগাল একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়।

২। ৯২ হাজার ২১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০৯ তম বৃহত্তম দেশ।

৩। পর্তুগালের সরকারী ভাষা পর্তুগিজ। বর্তমানে পর্তুগিজ ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষার একটি, যা তার অতীতের বিশাল সাম্রাজ্যের পরিচয়বহ।

৪। দেশটির সিংহভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। অন্যান্য কোন ধর্মের মানুষ দেশটিতে নেই বললেই চলে।

৫। লিসবন পর্তুগালের রাজধানী ও প্রধান শহর। লিসবন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি শহর।

ইউরোপের একদম দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে দেশটি, ভৌগোলিক কারণেই বহু শতাব্দী পূর্ব থেকে নৌ বিদ্যা আর জাহাজ চলাচলে পারদর্শী। শহরের তাগুস নদীর মোহনায় ভাস্কোদা গামার ভারত অভিযান বা আবিষ্কার সৌধ।

৬। ১৫শ শতকে পর্তুগাল ইউরোপের প্রধান সমুদ্রাভিযান কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর পর্তুগিজ নাবিকেরা বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে যান এবং বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন।

এই নাবিকদের সহায়তায় পর্তুগাল ইউরোপের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের উপনিবেশ ছিল।

৭। ১৬শ শতকের শেষ নাগাদ পর্তুগালের শক্তি ও সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং দেশটি তার বেশির ভাগ এশীয় উপনিবেশ হারায়। পর্তুগাল তার বৃহত্তম উপনিবেশ ব্রাজিলের উপর ১৯শ শতক পর্যন্ত এবং তার বিশাল আফ্রিকান সাম্রাজ্যের উপর ২০শ শতক পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।

সর্বশেষ ম্যাকাউকে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয় ১৯৯৯ সালে। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন। বিশ্বে বর্তমানে পর্তুগিজ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫ কোটির বেশি।

৮। পর্তুগাল বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে ১৭ তম।

৯। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে পর্তুগিজ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। পর্তুগিজ ৯ টি দেশের সরকারি ভাষা। এই ভাষায় বিশ্বের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কথা বলে থাকেন।

১০। লিসবনে অবস্থিত ভাস্কো দা গামা ইউরোপ এর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এর মোট দৈর্ঘ্য ১৭,১৮৫ মিটার।

১১। বিশ্বের সর্ববৃহৎ কিত্রিম আন্ডারওয়াটার পার্ক পর্তুগালে অবস্থিত।

১২। ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে লিসবনে প্রতিষ্ঠিত কুইমব্রা বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, যা পর্তুগালের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম।

১৩। পর্তুগাল টাইলস এর দেশ হিসাবেও পরিচিত। লিসবনের জাতীয় জাদুঘরে গেলে সেই অতিত কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পর্তুগিজ টাইলসের ইতিহাস এবং শৈল্পিক বিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়।

১৪। পর্তুগাল নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে আছে। এই দেশ জলবিদ্যুৎ, বায়ু এবং সৌরশক্তির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শক্তির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। পর্তুগাল সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।

১৫। দেশটির জাতীয় পানীয় হল পোর্ট (ওয়াইন), যা এই দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত রপ্তানিয় পানিয়।

১৬। পর্তুগালে ইউরোপ এর মধ্যে জন্মহার সবচেয়ে কম। ২০১৮ সালে এই দেশে মাত্র ৮২,৩৬৭ জন শিশু জন্মগ্রহন করে।

১৭। মাদাইরা দ্বীপ, “আটলান্টিকের ভাসমান বাগান” নামে পরিচিত, যা পর্তুগালের মালিকাধিন একটি দ্বীপ।

১৮। ভারতীয়দের মরিচ, আলু, টমেটো ইত্যাদির সাথে পর্তুগিজরাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।

১৯। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অমলেট তৈরির বিশ্বরেকর্ড পর্তুগালের অধিনে। তারা ৬.৪ টন ওজনের অমলেট তৈরি করে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ নিজেদের নাম লেখায়।

২০। পর্তুগাল ও ইংল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কূটনৈতিক জোট। এঙ্গোলো-পর্তুগিজ জোট ১৩৭৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং এটি আজ পর্যন্ত কার্যকর আছে!

২১। পর্তুগিজ ফাদো  ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ফাদো পর্তুগালের সাধারণ মানুষের দ্বারা গাওয়া দুঃখজনক ও হৃদয়গ্রাহী লোক সঙ্গীত। এবং এটি পর্তুগালের জাতীয় সঙ্গীত।

২২। এই দেশের বেশিরভাগ শহরে কমপক্ষে একটি করে সিনেমা হল আছে। ক্যাফের সংস্কৃতিটিও পর্তুগিজদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য।

২৩। ১৭৫৫ সালের একটি ভূমিকম্পে প্রায় ২৭৫,০০০ এরও বেশি পর্তুগিজ বাসিন্দা মারা গিয়েছিল, যা লিসবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের একটি বলে বিবেচিত হয়।

২৪। ৩১ শে মে, ২০১০ সালে ইউরোপ এর ষষ্ঠ দেশ হিসাবে পর্তুগাল সমকামী বিবাহর বৈধতা প্রদান করে।

২৫। দাস প্রথা প্রচলনে পর্তুগিজদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। যদিও পরবর্তীতে পর্তুগালই ছিল দাসত্ব বিলুপ্ত করার প্রথম ঔপনিবেশিক শক্তি।

২৬। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ১৯৮৫ সালে পর্তুগালের সান্তো অ্যান্টোনিতে জন্মগ্রহণ করেন। কোন সন্দেহ নেই যে, ফুটবল এই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।

২৭। পর্তুগীজরা জোরালো ভাবে ভাগ্যে বিশ্বাসী এক জাতি।

২৮। ১৯৪২ সালে পর্তুগিজরাই প্রথম ইউরোপিয়ান হিসাবে জাপানে পা রাখে।

২৯। ১৭স শতকের দিকে পর্তুগিজরাই জলদস্যু আইন তৈরি করে।

৩০। পর্তুগিজরাই ইংল্যান্ড এ চা খাওয়ার অভ্যাস প্রচলন করে।

৩১। পর্তুগালের সরকারী মুদ্রা ইউরো

৩২। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২৩,৩১১ মার্কিন ডলার।

৩৩। পর্তুগালের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৩৫১।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com