যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়……
সত্যিই আমাদের নুহাশপল্লীতে আগমন হয় এক বরষায়! প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ঢাকার অদূরে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন এই প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লী। পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র ও শুটিংস্পট হিসেবে এটি বেশ পরিচিত।
একটু লম্বাপথ। ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশপল্লী। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বেশ সকাল সকালই আমরা রওনা হই।
এটা ছিল একটি পারিবারিক ভ্রমণ। মাইক্রোবাসে আমরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করি। পথিমধ্যে একটি রেস্টুরেন্টে আমরা সেরে নেই সকালের নাস্তা, অতঃপর চা চক্র। যাত্রাপথেই আমাদের সঙ্গী হয় তুমুল বৃষ্টি! রাস্তার দুপাশে ভাওয়ালের সবুজের সমারোহ। এরই মাঝে ঝুম বৃষ্টিতে চলছে আমাদের গাড়ি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। এরপর আমরা উপনীত হই চূড়ান্ত গন্তব্যে।
নুহাশ পল্লীর মূল ফটক পেরোলেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসের গালিচা। যা দেখলে যে কারো চোখ ও মন দুই ই জুড়িয়ে যাবে। হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি করেছেন ’নুহাশ পল্লী’। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এ বাগান বাড়িতে ফল, কাঠ ও ভেষজ গুণাবলীর কয়েকশ’ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। শুটিং এর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি ঘরগুলো আবাক করবে আপনাকে।
হুমায়ূন আহমেদ শৈল্পিক চিন্তা দিয়ে এখানে তৈরি করেছেন স্যুটিং স্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সকল নাটক সিনেমার অন্যতম শুটিং স্পট এটি। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নামে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নারিকেল গাছ। এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎস্য কন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা সুইমিং পুল, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য।
নুহাশ পল্লী এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি টিকেট মূল্য ২০০ টাকা। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য ১টি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিনগুলোতে ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা।
আমরা নুহাশপল্লী ভ্রমনে গিয়েছিলাম বিশেষ আমন্ত্রনে। তাই একটু বাড়তি সুযোগ হয়েছিল হুমায়ুন আহমেদ “হোয়াইট হাউস” নামক যে কটেজে থাকতেন তার অন্দরে প্রবেশের। অসাধারণ শৈলীতে নির্মিত এ কটেজেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল আমাদের বিশ্রাম এবং আহারের। এখানে রয়েছে হুমায়ুন সাহিত্যকর্মের বিশাল সম্ভার। নুহাশপল্লী প্রস্থানের সময় এখান থেকে পছন্দসই বই আমাদের দেয়া হয় উপহার স্বরুপ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই নুহাশ পল্লীতে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। স্মরনীয় আতিথেয়তা এবং হুমায়ুন স্মৃতি বিজরিত আবেগঘন এক দিন শেষে আমরা নুহাশপল্লী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
আল আমিন রনি