দুবাই শহরে গেলে কোনটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, শহরের পথঘাট নাকি এর ধনী বাসিন্দাদের। এই প্রশ্ন অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগের মতো হয়ে যায়। সে জন্য নিরাপদ উত্তর হচ্ছে, এই শহরের সবকিছুই ভালো লাগে।
সেই শহর উপভোগের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো, হয় আপনাকে মারাত্মক রকমের ধনী হতে হবে, অথবা আপনার থাকতে হবে একটি দুবাই ফার্স্ট রয়্যাল ক্রেডিট কার্ড। বলা হচ্ছে, দুবাই শহর ভ্রমণে ধনীদের সেরা বন্ধু হচ্ছে এই ক্রেডিট কার্ড, যে কার্ড দিয়ে প্রমোদতরিও কেনা যায়। সূত্র লাক্সারিলঞ্চেস ডটকম
এই কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, ব্যয়ের কোনো সীমা না থাকা। সেই মহা আরাধ্য সেঞ্চুরিয়ান কার্ডের মতো এই দুবাই ফার্স্ট রয়্যাল ক্রেডিট কার্ড মূলত আমিরাতের ধনী মানুষদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। দুবাই ফার্স্টের সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান অমিত মারাওয়াহ বলেন, এই কার্ড দিয়ে যত খুশি কেনাকাটা করা যায়, যতবার খুশি ততবার; এমনকি গ্রাহকেরা যদি দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে গিয়ে প্রমোদতরিও কিনতে চান, এই কার্ড দিয়ে তা সম্ভব।
সাধারণ চাকরিজীবীদের পক্ষে তো আর ছুটি কাটাতে গিয়ে প্রমোদতরি কেনা সম্ভব নয়। তা কিনতে অতিধনী হতেই হবে। সুতরাং এই কার্ড পকেটস্থ করতে সেই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। সে জন্য এই কার্ড অনেকটা জেপি মর্গানের রিজার্ভ কার্ডের মতো হবে, যা নিতে আপনার ব্যাংক হিসাবে অন্তত এক কোটি ডলার থাকতে হবে।
জানা যায়, এই কার্ড নিতে হলে শুরুতে ২০০ ডলার মাশুল দিতে হয়, তবে বার্ষিক মাশুল কত দিতে হবে, সেটি প্রকাশ করা হয় না। তবে এই কার্ডধারীদের জন্য নির্ধারিত রিলেশনশিপ ম্যানেজার থাকেন, যাঁর কাজ হলো গ্রাহকের রাজকীয় জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সহায়তা করা।
দুবাই ফার্স্টের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম আল আনসারিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এই কার্ড নিতে গ্রাহকদের কী করতে হবে। জবাবে তিনি বলেন, ‘মানুষ কী চায়? তারা কিন্তু টাকা চায় না, চায় সেবা। মানুষ যদি হাতে চাঁদ চায়, তাহলে আমরা তাকে চাঁদই এনে দেব।’ এসব সুবিধার কারণে মূলত আরব আমিরাতের মানুষেরাই এই কার্ডের মূল ভোক্তা। তবে যাঁদের সেই পরিমাণ ব্যাংক স্থিতি আছে, তাঁরাও এই কার্ডের আবেদন করতে পারেন।
এই কার্ডে কিন্তু ছোটখাটো ছাড় বা বিনা পয়সায় খাবারের অফার নেই। তবে দুজন ব্যবস্থাপক সার্বক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের আর্থিক ও লাইফস্টাইলের খোঁজখবর রাখেন। বিষয়টি অনেকটা আধুনিক যুগের জাদুর কাঠির মতো। ধরা যাক, গ্রাহকেরা অস্কার অনুষ্ঠানের টিকিট চান বা বিশ্বের যেকোনো দেশে থাকা অবস্থায় সর্বাধুনিক পোরশে গাড়ির টেস্ট ড্রাইভ করতে চান বা ছোট্ট কুটিরে বসে ফর্মুলা ওয়ান উপভোগ করতে চান—ফার্স্ট দুবাই এর কোনো কিছুই অযৌক্তিক বা অদ্ভুত মনে করে না।
এ ধরনের কার্ড দেখতেই-বা কেমন হবে, নিশ্চয়ই রাজকীয়। কার্ডটির দুই ধার খাঁটি সোনায় মোড়ানো, যার কেন্দ্রে আছে দশমিক ২৩৫ ক্যারেটের হীরা। কালো ব্র্যাক গ্রাউন্ডে খোদাই করা থাকে কার্ডধারীর নাম, দুবাইয়ের ৬৭ হাজার মিলিয়নিয়ার বা ধনীদের একজনের নাম।