দক্ষিণ কোরিয়ায় নিঃসঙ্গতা এখন এক অব্যক্ত সংকট। প্রতি বছর হাজারো মানুষ সমাজের বাইরের জীবন বেছে নিয়ে একাকী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মানুষ অবসাদে ডুবে গিয়ে সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পরিবার ও বন্ধুদের ছেড়ে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, কখনো কখনো তাদের মৃত্যুর বিষয়টি জানতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কোরিয়ায় এ ধরনের একাকী মৃত্যু ‘গোডোকসা’ নামে পরিচিত, যা সমাজের এক গভীর ক্ষত হিসেবে বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে নিম্ন জন্মহারের দেশগুলোর মধ্যে একটি দক্ষিণ কোরিয়া। জন্মহার কমে যাওয়ার সাথে সাথে সমাজে একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতার হার বেড়ে চলেছে।
এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি সিউল শহরের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তারা এমন একটি শহর নির্মাণের লক্ষ্য নিয়েছে, যেখানে কেউ একা থাকবেন না। এই মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার ৪৫১.৩ বিলিয়ন ওন (প্রায় ৩২৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে।
এই প্রকল্পে থাকবে ২৪/৭ একাকিত্ব পরামর্শদাতার সেবা, একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে যে কেউ সরাসরি পরামর্শ নিতে পারবেন, এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিগত পরিদর্শনের সুযোগ। সিউলের মেয়র ওহ সেহুন বলেন, এটি শুধু ব্যক্তিগত সংকট নয়, এটি আমাদের সমাজের ব্যর্থতা। আমাদের সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে একে মোকাবিলা করার জন্য।
কেবল শহর নয়, কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারও একাকী তরুণদের পুনর্বাসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সমাজবিচ্ছিন্ন যুব সম্প্রদায়কে মাসিক ৬ লাখ ৫০ হাজার ওন (প্রায় ৪৭৫ ডলার) আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের কর্ম ও সামাজিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একাকিত্বের এ সংকটের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগিতামূলক কর্মসংস্কৃতি, অহংকেন্দ্রিক জীবনধারা, সামাজিক মিডিয়ার তুলনা-প্রবণতা, এবং একক পরিবারে বসবাসের উচ্চ হার এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া নিঃসঙ্গতার এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে হয়তো অনেক মানুষ আর একা মৃত্যুর পথে অগ্রসর হবেন না। তবে সরকার ও সমাজের সব স্তরের সমন্বিত প্রয়াসই দক্ষিণ কোরিয়ায় একাকিত্বের বিরুদ্ধে মানবিক জয় আনতে পারে।