সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন

জার্মানির সুদিন কি ফুরিয়ে গেছে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

জার্মানিকে এত দিন নানা অভিধায় আখ্যা দেওয়া হতো—ইউরো অঞ্চলের ইঞ্জিন, শিল্পের শক্তিকেন্দ্র, রপ্তানির চ্যাম্পিয়ন। এমন অনেকভাবেই বলা হতো ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশটি সম্পর্কে। তবে সময় পাল্টেছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত এই ধারণা দিচ্ছে যে জার্মানির সেই সুদিন সম্ভবত শেষ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা জার্মানির এই পরিণতির কারণ খুঁজছেন নিঃসন্দেহে। কত দিন এ অবস্থা থাকবে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার জার্মানির জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে এবং সবাই এখন সেদিকে তাকিয়ে আছেন। ভোক্তা মূল্যসূচক আগের বছরের একই সময়ের সাপেক্ষে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে; জুন মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

জুন মাসের শিল্প পরিসংখ্যানে বোঝা যাচ্ছে, দেশটির শিল্প খাতে কী ঘটছে। ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ গাড়ির জন্ম যে দেশে, সেই দেশের শিল্প খাতের বর্তমান অবস্থা কী। সেই সঙ্গে আছে ছোট ও মাঝারি প্রকৌশল খাতের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।

জুলাই মাসে যদি জার্মানির মূল্যস্ফীতি উল্লিখিত প্রত্যাশা অনুযায়ীও হয়, তাহলে ইউরো অঞ্চলের তুলনায় তা বেশিই হবে। জুলাই মাসে ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জার্মানির মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশিত হারের সঙ্গে যদি স্পেনের তুলনা করা হয়, তাহলে জার্মানির দুরবস্থা আরও বেশি বলে মনে হয়। জুলাই মাসের স্পেনের মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি জার্মানির বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার একটি অন্যতম কারণ। বিশেষ করে তার সঙ্গে যদি প্রবৃদ্ধির হার কমে আসে, তাহলে বিষয়টি জটিল হয়। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটি হচ্ছে ‘স্লোসেশন’। অর্থাৎ একদিকে অর্থনীতির গতি শ্লথ, অন্যদিকে উঁচু হারের মূল্যস্ফীতি।

গত মে মাসেই নিশ্চিত হয়ে যায় যে জার্মানি মন্দার কবলে পড়েছে। সরকারের সংশোধিত পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রথমে যা ভাবা হয়েছিল জার্মানির অবস্থা তার চেয়েও করুণ। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; এর আগে ২০২২ সালের শেষ ত্রৈমাসিকেও দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পারিবারিক ব্যয় কমে গেছে। কিন্তু এর প্রভাব অর্থনীতিতে যে ঠিক কতটা হতে পারে, প্রথম দিকে তা ঠিক বোঝা যায়নি।

বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়েও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিশ্লেষকেরা ভেবেছিলেন, কিছুটা হলেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়নি, অর্থাৎ শূন্য শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতি ছিল স্থবির।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলেও মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া হার অনুযায়ী নীতি সুদহার নির্ধারণ করেছে জার্মানি, বর্তমানে যা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সে কারণেও জার্মানির অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে।

জার্মানির করপোরেট খাতও ভালো অবস্থায় নেই। মিউনিখভিত্তিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ব্যবসায়িক পরিবেশসূচক জুলাই মাসে টানা তিন মাস ধরে কমেছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি এবং সেই সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতিবিষয়ক আশঙ্কা এবং চীনে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে।

জার্মানির রপ্তানির বড় গন্তব্য হচ্ছে চীন—দ্রুতগামী গাড়ি থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি এমন অনেক কিছুই চীন জার্মানি থেকে নেয়। ফলে চীনের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া জার্মানির মতো দেশের জন্য ভালো বিষয় নয়।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, জার্মান সরকারের উচিত, এ মুহূর্তে সংস্কার কর্মসূচি পেশ করা। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজসহ সংসদ সদস্যরা এখন গ্রীষ্মাবকাশে আছেন, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যদের মতো।

তবে উৎপাদন–সংক্রান্ত কিছু তথ্যে আশার আলো দেখছে জার্মানি। মে-জুন সময়ে কারখানার ক্রয়াদেশ ৭ শতাংশ বেড়েছে। মূলত যন্ত্রপাতি ও বিমানের ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এয়ারবাস জানিয়েছে, জুন মাসে তাদের ক্রয়াদেশ বেড়েছে।

আরেকটি আশার খবর হলো, জুলাই মাসে জার্মানিতে মৌসুম-সমন্বিত বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জুন মাসের চেয়ে কিছুটা কম।তবে জার্মানি এখন মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, নাকি বিষয়টি সাময়িক, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com