মাস ছয়েক ধরে পশ্চিম জার্মানির পুলহাইম শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন মোহাম্মদ এ.৷ সিরিয়া থেকে আসা এই শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রটিতে তার দুঃসহ জীবনযাত্রার কথা বলেছেন জার্মানির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ডাব্লিউডিআর-কে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেখানে থাকছি, সেখানে গোসল করারও সুযোগ নেই৷ শুধু একটি গোসলাখানা আছে, যেটি পরিষ্কার৷’’
পুরো আশ্রয়কেন্দ্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ৷ এমন বাজে অবস্থা যে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না আশ্রয়প্রার্থীরা৷ মোহাম্মদ এ. বলেন, ‘‘দুর্গন্ধের যন্ত্রণা যাদের সইতে হচ্ছে আমি তাদের একজন৷’’
আশ্রয়প্রার্থীদের মাধ্যমে পাওয়া বেশকয়েকটি ছবিতেও নোংরা পরিবেশের প্রমাণ মিলেছে৷ পুরো কেন্দ্রজুড়ে বেড়েছে ইঁদুরের উৎপাত৷ ইঁদুরের সমস্যাটি শুধু আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের নয়, শহরবাসীর কাছেও একটি বড় সমস্যা৷ নগর কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ডব্লিউডিআর জানিয়েছে, সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন তারা৷
এমনকি, আবর্জনা এবং খাবার উচ্ছিষ্ট ব্যবস্থাপনা নিয়েও শরণার্থীদের সঙ্গে তারা নিয়মিত আলোচনা করেন বলেও দাবি করেছেন নগর কর্তৃপক্ষ৷
একটি কক্ষে চার জন
ডব্লিউডিআর-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলহাইম শহরের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আরো তিনজন শরণার্থীর সঙ্গে একটি কক্ষে থাকেন মোহাম্মদ এ.৷ ৫০ হাজার মানুষের শহর পুলহাইম৷ আর শহর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এই মুহূর্তে বাস করছেন ৭৪০ জন আশ্রয়প্রার্থী৷
প্রায় প্রতিদিনই আশ্রয়কেন্দ্রটির খোঁজখবর রাখছেন শরণার্থী সহায়তা উদ্যোগ ‘পুলহাইম হেল্পস’-এর একজন কর্মী৷ তিনি জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে আশ্রয়কেন্দ্রটি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা এবং অন্য এনজিওগুলো৷ অন্তত আর কিছু না হোক, কিছু পুরনো ভবন পুননির্মাণ বা সংস্কারেরও দাবি জানিয়ে আসছেন তারা৷
নগর কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ডাব্লিউডিআর জানিয়েছে, নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলেও তা নির্মাণে কাজ শুরু করা এবং সংস্কারে আরো সময় প্রয়োজন৷
ওই কেন্দ্রটিতে অবস্থানরত আশ্রয়প্রার্থী বা শরণার্থীদের মানসিক অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পুলহাইম হেল্পস৷
সংস্থাটির একজন অধিকারকর্মী বলেন, ‘‘এমন অনেক উদ্বাস্তু আছেন যারা নানা যন্ত্রণা সয়ে এই কেন্দ্রটিতে এসে পৌঁছান৷ সেখানে এসে এমন মানবেতর জীবন দেখে আরো হতাশ হয়ে পড়েন তারা৷ ফলে তারা ভাবতে থাকেন, এই জীবনে তাদের আর মুক্তি নেই৷’’
জার্মানিজুড়ে অনেক ছোট এবং বড় পৌরসভাগুলো ইউক্রেন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে৷ এমন বাস্তবতায় গেল সপ্তাহে দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জার্মানির ১৬টি রাজ্যের শীর্ষ নেতারা৷ ওই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের সমর্থনে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজ্যগুলোর দাবি মেনে নিয়েছে ফেডারেল সরকার৷