ইউরোপের পর্যটনসমৃদ্ধ দেশ হাঙ্গেরি। দানিয়ুব নদীর উপত্যকায় অবস্থিত এই দেশের বেশিরভাগ এলাকা। হাঙ্গেরীর মানুষ নিজেদের ‘মজর’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এশিয়া মহাদেশ থেকে ‘মজর’ নামক এক যাযাবর গোষ্ঠী হাঙ্গেরীতে আসে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরী ও সার্বিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। যেসব মানুষের ইতিহাসের প্রতি ভালোবাসা আছে, সেসব মানুষ হাঙ্গেরী ভ্রমণ করে থাকেন বেশি। হাঙ্গেরীতে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো হাঙ্গেরীর সেরা ১০ জায়গা সম্পর্কে। আসুন জেনে নেয়া যাক-
১. গ্যায়র
কেল্টিক ও রোমান যুগে গ্যায়র মোঙ্গল, মজর, চেক এবং অটোমান সুলতানদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। বুদাপেস্ট ও ভিয়েনার মর্ধবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি মানুষের কাছে মনোরম জায়গা হিসেবে পরিচিত। কাপ্তালান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শহরটি রেবকা নদীর তীরে অবস্থিত। সেন্ট ইগন্যাটিয়াস অব লয়োলা নামে একটি গীর্জা দর্শনার্থীদের কাছে পছন্দের একটি জায়গা।
২. হর্তবাগী ন্যাশনাল পার্ক
হাঙ্গেরীর প্রথম ন্যাশনাল পার্ক হর্তবাগী। ১৯৭৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশটির সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত অঞ্চল। বরফ যুগে এখানে বন্য ঘোড়াসহ বিভিন্ন জীবজন্তু ঘুরে বেড়াতো। পার্কটি ইউরোপের মানুষের কাছে সুপরিচিত একটি জায়গা। প্রতি বছর সব বয়সের দর্শনার্থী এখানে আসেন।
৩. দেব্রিকেন
কয়েক শতাব্দি ধরে দেব্রিকেন হাঙ্গেরীর রাজধানী ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। দেব্রিকেন শহরে একটি বুদ্ধি বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে যা ক্যালভিনিস্ট কলেজ নামে পরিচিত। ১৫৩৮ সালে এর প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এটি ইউনিভার্সিটি অব দেব্রিকেন নামে পরিচিত। দর্শনার্থীদের কাছে স্থাপত্যের জন্য এটি আকর্ষণীয় একটি জায়গা।
৪. হেভিজ
লেক বালাতনের কাছে অবস্থিত হেভিজ শহরটি একাধিক রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত। সাঁতারপ্রিয় মানুষ লেক বালাতনে ভ্রমণ করে থাকেন। এখানে যেকোনো উৎসব বা কনসার্টে অনেক লোকের সমাগম দেখা যায়। হেভিজ শহরটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
৫. আগতেলেক ন্যাশনাল পার্ক
বুদাপেস্ট থেকে আগতেলেক ন্যাশনাল পার্কে যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। পার্কটি উত্তর হাঙ্গেরীতে অবস্থিত। পার্কটি সংরক্ষিত স্থান এবং মানুষের কাছে অত্যন্ত পছন্দের। এর কোনো কোনো অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
৬. পেকস
ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম পেকস। হাঙ্গেরীর সাংস্কৃতিক শহর। হাঙ্গেরীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ১৩৬৭ সালে শহরটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পেকস শহর রোমান, খ্রিস্টান এবং অটোমান সুলতানদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। শহরটিতে ইউরোপের মধ্যযুগে নির্মিত ভবন, বড় বড় মিউজিয়াম রয়েছে।
৭. সপ্রন
রোমান সাম্রাজ্যের সময় অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সপ্রন শহর গঠিত হয়। কয়েক দশক এই শহরে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরীর মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই শহরে অসংখ্য ইউরোপের মধ্যযুগের স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে।
৮. এগার
উত্তর হাঙ্গেরীর দ্বিতীয় বড় শহর। হাঙ্গেরীর প্রথম খ্রিস্টান রাজা সেন্ট স্টিফেন দশম শতকে এই শহর গঠন করেন। অভিজাত ভবনের জন্য শহরটি মানুষের কাছে অনেক বেশি আলোচিত হয়ে থাকে। সেন্ট স্টিফেনের শাসনামলে শহরটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় এপিস্কোপাল ক্যাথেড্রাল নামে একটি গীর্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৯. লেক বালাতন
লেক বালাতনকে ঘিরে হাঙ্গেরী গড়ে উঠেছে। সাঁতারপ্রেমী পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করে থাকেন। লেক বালাতন ইউরোপের সবচেয়ে বড় লেক হিসেবে পরিচিত। এটি ব্যবহৃত হয় রিসোর্ট হিসেবে।
১০. বুদাপেস্ট
বুদাপেস্ট হাঙ্গেরীর রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। ইউরোপের মনোমুগ্ধকর শহরগুলোর অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটিতে অসংখ্য ইহুদিকে হত্যা করা হয়। শহরটি বুদা ও পেস্ট দুই অংশে বিভক্ত। এই শহরে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।