১। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশের কাছে থেকে স্বাধীনতা পায় কুয়েত। কুয়েতে প্রথম তেলের খনি পওয়া যায় ১৯৩৮ সালে। দেশটিতে ১৯৪৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। তবে গত শতাব্দীর আশির দশকে দেশটিতে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। শেয়ারবাজারে ধস নামায় শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট। ১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করে নেয় ইরাক। আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীর হস্তক্ষেপের পর ১৯৯১ সালে এই দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারো অর্থনীতি এবং দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে জোর তৎপরতা শুরু হয়।
কুয়েত জাতিসংঘে যোগদান করে ১৪ মে ১৯৬৩ সালে।
২। ১৭ হাজার ৮১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৪৬ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৫২ তম দেশ। তবে দেশটির মোট জনসংখ্যার মধ্যে কুয়েতি মাত্র ১৪ লাখ, আর বিদেশি ৩২ লাখ। অর্থাৎ কুয়েতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশই বিদেশি।
৩। দেশটির সরকারী ভাষা আরবি। বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা বহুল প্রচলিত। ইংরেজিতেই বেতার-টিভির অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
৪। কুয়েতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এবং খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য ধর্ম পালন করে।
৫। কুয়েতের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হচ্ছে কুয়েত সিটি। পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটিতেই দেশটির প্রধান প্রধান সরকারী ভবনগুলো অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে পুরো অমিরাতের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র, কুয়েতের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহ ইত্যাদি।
৬। দেশটিতে প্রচণ্ড গরম পড়ে এবং ১২ জুলাই ২০১২ সালে রেকর্ড করা হয় সব চাইতে বেশি তাপমাত্রা, যা ছিল ৫৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস; এখানে এতটায় গরম পড়ে যে গরমে অতিষ্ট হয়ে এদেশের সরকার দেশটির জাতীয় দিবস পরিবর্তনে বাধ্য হয়। যা বিশ্ব ইতিহাসে ছিল প্রথম।
১৯৬২ সালের আগ-পর্যন্ত দেশটিতে ১লা জুন ছিল জাতীয় দিবস কিন্তু জলবায়ুর বিচারে এই সময়টায় গরমের উত্তাপ থাকে অনেক বেশি; তাই ১৯৬২ সালের পর থেকে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী দেশটির জাতীয় দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
৭। কুয়েতে প্রাকৃতিকভাবে কোন পানযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। মাটির নিচে যা পাওয়া যায় তা হলো তেল। কুয়েতের অর্থনীতিতে প্রায় ৯০ শতাংশ আয়ই আসে এই তেল সম্পদ থেকে।
৮। কুয়েত বিশ্বের প্রথম দেশ যেখানে সাধারণ মানুষের দ্বারা পরিচালিত পার্লামেন্ট আছে, এখানে মহিলাদের ভোটে দাঁড়ানোর উপর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে যা বাকি আরবীয় দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
৯। কুয়েতের আইনব্যবস্থা অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলির মত নয়। এই দেশের আইনি ব্যবস্থাকে বলা হয় civil law system যা ফ্রান্সের অনুকরণে বানানো হয়েছে।
১০। কুয়েতে মাদক দ্রব্য কেনা-বেচাতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
১২। এখানে রমজান মাসে পাবলিক প্লেসে খাওয়া-দাওয়া এবং জোরে গান বাজিয়ে পার্টি করা পুরোপুরি নিষেধ।
১৩। আপনি জেনে অবাক হবেন, কুয়েতের কোন রাষ্ট্রীয় সংগীত কোন শব্দ নেই।
১৪। এটি এমন একটি দেশ যেখানে কোন রেললাইন নেই।
১৫। এটি একইসাথে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে কোনও প্রাকৃতিক জলাশয় নেই। এখানকার মানুষ সমুদ্রের নোনা জলকে পান যোগ্য করে তোলে, এতে প্রচুর পরিমাণে টাকাও খরচা হয়।
১৬। দেশটি পৃথিবীর অন্যান্য অর্থশালী দেশগুলোর থেকে আকৃতিতে ছোট হলেও কুয়েতের কারেন্সি কুয়েতি দিনার যার মূল্য বর্তমানে সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি। একটি কুয়েতি দিনারের মূল্য তিন আমেরিকান ডলারের থেকেও বেশি।
১৭। কুয়েতের বেশির ভাগ মানুষ কোটিপতি। দেশটিতে চাষবাস হয়না বললেই চলে। কারণ মাত্র ১% চাষ যোগ্য জমি আছে এখানে।
১৮। কুয়েতেই আরব বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হার বিদ্যমান। দেশটিতে সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ।
১৯। কুয়েতে দুইটি বিমানবন্দর আছে। এদের মধ্যে কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দেশটির প্রধান বিমানবন্দর।
২০। দেশটির পর্যটন খাতও দিনকে দিন উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে কুয়েতের মোট জিডীপির প্রায় ১.৫ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে।
২১। কুয়েতে ৩৬৩ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ১৮ প্রজাতির পাখি শুধুমাত্র এদেশেই পাওয়া যায়।
২২। যেমনটি আগেই বলেছি, দেশটির প্রধান আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে তেল শিল্প।
২৩। কুয়েতের সরকারী মুদ্রা কুয়েতি দিনার। ১ কুয়েতি দিনার সমান প্রায় ২৭৭ টাকা।
২৪। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২৯ হাজার মার্কিন ডলার।
২৫। কুয়েতের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৬৫।