পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের (পিজিডব্লিউপি) সংশোধিত নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ববিষয়ক সংস্থা (আইআরসিসি)। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। এই নিয়মে বিদেশি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে কলেজ স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
যেসব শিক্ষার্থী আগামী ১ নভেম্বরের আগে স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন বা পেয়েছেন, তাঁরা বিদ্যমান নিয়মের অধীনে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের যোগ্য হবেন। আর যাঁরা এই সময়ের সময়ে বা তার পরে আবেদন করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে। নতুন এই নিয়মে কলেজ ও নন-ডিগ্রি প্রোগ্রাম থেকে স্নাতকদের জন্য সুযোগ থাকবে।
আইআরসিসি নিশ্চিত করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই তিন বছর পর্যন্ত পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের যোগ্য থাকবেন। আর কলেজ স্নাতকদের জন্য কিছু প্রোগ্রামে নতুন নিয়মের অধীনে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে কলেজ প্রোগ্রামের স্নাতকদের অবশ্যই পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের যোগ্যতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আইআরসিসি নির্ধারিত ৯৬৬টি প্রোগ্রাম তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে কৃষি ও কৃষিখাদ্য; স্বাস্থ্যসেবা; সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স (স্টেম); স্কিলড ট্রেড এবং ট্রান্সপোর্টেশন—এই পাঁচ বিষয় তালিকাভুক্ত প্রোগ্রামগুলোকে কভার করবে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে জনপ্রিয় ক্ষেত্র যেমন ট্যুরিজম, হসপিটালিটি ও বিজনেস স্টাডিজ বিষয়গুলো এই তালিকায় রাখা হয়নি। এতে কানাডায় কাজের সুযোগ খুঁজছেন, এমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের যোগ্যতা সীমিত করার সিদ্ধান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থী, যারা এখন পড়াশোনার বিষয়গত কারণে অযোগ্য বলে বিবেচিত, তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের মধ্যে আছে।
ওল্ডস কলেজের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর কারেন ড্যান্সি লিংকডইনে বলেন, তালিকায় হসপিটালিটি বিশেষভাবে অনুপস্থিত। এটি গ্রামীণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ স্থানীয়দের জন্য বিপর্যয়কর হবে। বিশেষ করে সেই সব বিদেশি শিক্ষার্থী, যাঁরা এই কলেজে পড়াশোনা করছেন।
আঞ্চলিক শ্রম চাহিদা নিশ্চিতে সরকারকে প্রদেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে মার্ক মিলার লিখেছেন, ‘প্রদেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শের অভাব এবং স্থানীয় নিয়োগকর্তাদের কী প্রয়োজন, তা জানাতে জাতীয় শ্রমবাজারের তথ্যের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা খুব উদ্বিগ্ন।’
পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদনকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট ভাষার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীদের অনুমোদিত ভাষা পরীক্ষার মাধ্যমে ইংরেজি বা ফরাসি ভাষায় তাঁদের দক্ষতার প্রমাণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য ইংরেজিতে কানাডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বেঞ্চমার্কস (সিএলবি) ৭ বা ফরাসি ভাষায় তার সমমান নিভেক্স দ্য কমপিটেন্স লিঙ্গুইস্টিকস কানাডিয়ান (এনসিএলসি) স্কোর ৭ থাকতে হবে। কলেজ স্নাতকদের চারটি ভাষার ক্ষেত্রে (পড়া, লেখা, শোনা এবং কথা বলা) অবশ্যই সিএলবি স্কোর ৫ বা এনসিএলসি স্কোর ৫–এর যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে।
নতুন এই নিয়মে পড়াশোনা শেষে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যোগ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্য টরন্টো স্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কলেজ প্রোগ্রামের স্নাতকদের ৬৪ শতাংশ এই সুযোগ পেয়েছেন। শুধু বিজনেস স্টাডিজের ৪২ শতাংশ স্নাতক এই সুযোগ পেয়েছেন ৪২ শতাংশ আর স্টেমের সবগুলো ক্ষেত্র থেকে এই সুযোগ পেছেন ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবার নতুন নিয়মের আওতায় এই স্নাতকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষ করে যাঁরা বিজনেস স্টাডিজ ও তালিকার বাইরে থাকা ক্ষেত্রগুলোতে পড়াশোনা করছেন, তাঁরা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না।
প্রথম আলো