১। “কানাডা” নামটি সম্ভবত এসেছে সেন্ট লরেন্স ইরোকোয়াইয়ান শব্দ “কানাটা” থেকে, যার অর্থ “জেলেদের ক্ষুদ্র গ্রাম”, “গ্রাম” অথবা “বসতি”। কানাডার অধিকৃত ভূমিতে প্রথম বসবাসের জন্য চেষ্টা চালায় আদিবাসী জনগোষ্টিসমূহ। ১৫তম শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলস্বরূপ ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব উপনিবাস ইংরেজদের কাছে ছেড়ে দেয়।
১৮৬৭ সালে, মৈত্রিতার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। এর ফলে আরো প্রদেশ এবং অঞ্চল সংযোজনের পথ সুগম এবং ইংল্যান্ড থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮২ সালে জারীকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে, দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজ্যতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে। রাষ্ট্রের প্রধান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কানাডা দ্বিভাষিক এবং বহুকৃষ্টির দেশ।
২। ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম দেশ।
৩। ইংরেজি ভাষা ও ফরাসি ভাষা যৌথভাবে কানাডার সরকারি ভাষা। কানাডার কেবেক প্রদেশে ফরাসি ভাষা প্রাদেশিক সরকারি ভাষা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাধারণত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
৪। দেশটির প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয় এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ শতাংশ। দেশটিতে মুসলিম রয়েছে প্রায় ৩.২ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
৫। কানাডার রাজধানী হচ্ছে অটোয়া।
এবং এই দেশের বৃহত্তম শহর হচ্ছে টরন্টো। টরন্টো কানাডার বৃহত্তম মহানগর এলাকা (মোঁরেয়াল ২য় বৃহত্তম) ও গোটা উত্তর আমেরিকার ৪র্থ বৃহত্তম নগরী (মেক্সিকো সিটি, নিউ ইয়র্ক সিটি এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের পরেই)। অর্থনৈতিকভাবে কানাডার সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ অন্টারিও-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে এটি দেশটির আর্থিক ও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র। টরন্টো শহরটি অন্টারিও হ্রদের উত্তর-পশ্চিম তীরে অবস্থিত।
৬। এই দেশের জলবায়ুতে গ্রীষ্মকালে হালকা ভ্যাপসা ঠান্ডা, ভিজা কুয়াশা এবং শীতকালে ভীষণ ঠান্ডা, বরফাচ্ছন্ন, শুষ্ক এবং তুষারপাত ইত্যাদি নিত্যদিনের ঘটনা।
৭। কানাডা বছরে প্রায় ৮ মাস বরফে আচ্ছন্ন থাকে।
৮। কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম এক ভয়াবহ কর খেকো দেশ। এই দেশে একজন মানুষের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এইজন্য এখানে ধনী এবং গরিবদের ব্যবধান খুবই কম।
৯। ১৯৭১ সালে কানাডা প্রথম মাল্টিকালচার দেশ হিসাবে নিজের নাম প্রস্তাব করে।
১০। নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। আমেরিকাতে জলপ্রপাতটি পিছন থেকে দেখতে হয়। কানাডাতে সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায় ফলে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালমতো দেখা যায়। নায়াগ্রা ফলসে প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের সমাগম হয়ে থাকে।
১১। কানাডা শিক্ষার হারের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। এই দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের কলেজ ডিগ্রি আছে।
১২। কানাডাতেই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেক অবস্থিত। পৃথিবীতে যতগুলো লেক আছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ কানাডাতে অবস্থিত।
১৩। কানাডা বিশ্বের মধ্যে ৭ম শান্তিপূর্ণ দেশ।
১৪। কানাডা তাদের নতুন নাগরিকদের ১ বছরের ফ্রি কালচারাল এক্সেস পাস দিয়ে থাকে। যা দিয়ে এখানকার প্রায় ১০০০ জাদুঘর এবং কালচারাল সেন্টারে যাওয়া যায়। কানাডা সরকার এইটা এই কারনে করে যে, যাতে নতুন নাগরিকত্ব পাওয়া নাগরিকরা কানাডা সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পারে।
১৫। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সীমানা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যেই অবস্থিত। যা ৮,৮৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ।
১৬। সৌদি আরব এবং ভেনেজুয়েলার পর কানাডাতেই বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম তেলের মজুদ বিদ্যমান।
১৭। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা বাস্কেটবল কানাডাতেই আবিষ্কৃত হয়।
১৮। বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ পোলার বিয়ার কানাডাতে পাওয়া যায়।
১৯। কানাডাতে একটি সংস্থা আছে যার নাম ইউনাইটেড নর্থ আমেরিকা। এই সংস্থাটির লক্ষ হচ্ছে কানাডাকে ইউএস এর সাথে যুক্ত করে দেওয়া।
২০। এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ মুল শহরগুলাতেই বাস করে।
২১। কানাডার বেশিরভাগ শহর গুলো এই দেশের দক্ষিন সিমান্তের দিকে অবস্থিত। কারন এর পূর্ব সিমানার দিকের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা।
২২। ১৯৪৭ সালে কানাডাতে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ নেমে গিয়েছিলো।
২৩। প্রায় এক কোটি বর্গ মাইলের বিশাল দেশ হওয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবস্থা অনুসরণ না করে মোট ছয়টি সময় এলাকা বা টাইম জোনে ভাগ করা হয়েছে কানাডাকে।
২৪। কানাডার রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হচ্ছে কানাডিয়ান ডলার। ১ কানাডিয়ান ডলার সমান বাংলাদেশী প্রায় ৬৪ টাকা।
২৫। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ১.৮২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৪৮,৬০১ মার্কিন ডলার।
২৬। কানাডার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +১।