ছে উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেট। নদীমাতৃক বাংলাদেশে জন্ম আর বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দা হবার কারণে নদী তো আমার কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু ওয়াঙ্গানুই নদী দেখার পর আমার সে ধারণা পাল্টে যেতে শুরু করে। কারণ এ তো অপূর্ব সুন্দর, দূষণমুক্ত, ঝকঝকে পানির নদী।
দেখতে পেলাম নদীর পাড় বাধাই করা যেখানে আছে সুন্দর হাঁটার ব্যবস্থা, সেখানে সাজানো আছে সুন্দর বসার জায়গা, আছে দাবা খেলার ব্যবস্থাও। দেখতে পেলাম দুটি শিশু বিশাল আকৃতির দাবার গুটি দিয়ে, দাবার কোর্টের উপর দাঁড়িয়ে দাবা খেলছে। মনে হলো এ তো সেই ওয়াঙ্গানুই নদী যাকে এ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম দেয়া হয়েছে মানুষের সমান অধিকার, তাই হয়তো সে এতো সাজানো, গোছানো।
ভার্জিনিয়া লেক ও বাড়তি পাওয়া, ওয়াঙ্গানুই উইন্টার গার্ডেনঃ
উন্মুক্ত ফার্মার্স মার্কেট থেকে বাসে চেপে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ভার্জিনিয়া লেকে। এ লেকটির বৈশিষ্ট্য হলো এর চারপাশে আছে সুন্দর পার্ক। আছে লেকের পার দিয়ে হাঁটার রাস্তা। পুরো লেক পার ঘুরে আসতে আপনার সময় লাগবে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। লেকের পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরণের বিরল প্রজাতির হাঁস। প্রকৃতি যেন অপুরূপ সাজে সাজিয়ে রেখেছে এ ভার্জিনিয়া লেক।
লেকের পারে দুপুরের খাবার শেষে বাড়তি হিসাবে পেয়ে গেলাম ওয়াঙ্গানুই উইন্টার গার্ডেন। এ ইনডোর বাগানে প্রবেশ করে আমি অভিভূত হয়ে যাই। এতো সুন্দর এবং হরেক রকমের ফুল আমি কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। মনে হচ্ছিলো যেন এ গার্ডেনেই দিনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেই।
ডুরি হিল টাওয়ার এবং টানেলঃ
ভার্জিনিয়া লেকে দুপুরের খাবার শেষে আবার বাসে চেপে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে হাজির হলাম ডুরি (Durie) হিল টাওয়ার এবং টানেল দেখতে। প্রথমে আমরা যাই টানেল দেখতে। প্রায় ৭০০ ফুট (২১৩ মিটার) দীর্ঘ টানেল দেখতে আমরা সবাই লিফটে চেপে ডুরি পাহাড়ের উপর থেকে নীচে নামি। নীচে নেমে দেখতে পাই বিশাল এক টানেল যার ভিতর শব্দ করলে প্রতিধ্বনি কানে ভেসে আসে। ১৯১৯ সালে এ টানেলটির যাত্রা শুরু হয় এবং যে লিফটে চড়ে আমরা নীচে নামি সেটিও ১৯১৯ সাল থেকে আজোবধি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। টানেল থেকে বেরিয়ে লিফটে না উঠে আমরা সবাই পায়ে হেটে প্রায় ২১৭ ফুট (৬৬ মিটার) উচ্চতা বেয়ে আবার পূর্বের জায়গায় অর্থাৎ পাহাড়ের উপর ফিরে আসি।
সবশেষে পুরো বিকাল আমরা কাটিয়ে দেই ডুরি হিল টাওয়ারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত এই এলাকার ৫১৩ জন নিউজিল্যান্ডারের স্মরণে ১৯২৫ সালে এই টাওয়ারটির উদ্ভোধন করা হয়। এ টাওয়ারটি নির্মাণে শত বছরের পুরানো পাথর ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর উচ্চতা ১০৪ ফুট (৩৩.৫ মিটার)। এ টাওয়ারের উপর থেকে পুরো ওয়াঙ্গানুই শহরকে দেখা যায়। এবার আবার ১০৪ ফুট উচ্চতা বেয়ে আমরা টাওয়ারে উঠে শহরকে দেখার চেষ্টা করি।
টাওয়ারে সময় কাটাতে কাটাতে আমাদেরও যেন ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছিলো। পশ্চিম দিকে সূর্যটাও হেলে পড়ে জানান দিচ্ছে, ফিরে চলো এবার। গত মার্চে এ দেশটিতে আসার পরই আটকা পড়েছিলাম করোনা ভাইরাসের লকডাউনে। গত ৮ই জুন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডর্ন নিউজিল্যান্ডকে করোনামুক্ত ঘোষণা করলেও আবার এসেছিলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলে নিউজিল্যান্ডে করোনার কারণে মারা গেছেন মাত্র ২৫ জন। আর করোনা ভাইরাস থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত নিউজিল্যান্ড। আর আমাদের জনা পঞ্চাশ এর দলবেঁধে এ ভ্রমণ তো সেটাই প্রমান করে।
মু: মাহবুবুর রহমান