জনসংখ্যার তুলনায় নিউইয়র্ক সিটিতে আবাসন ঘাটতি চরমে। এ পরিস্থিতির মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী ১৫ বছরে, অর্থ্যাৎ ২০৪০ সালের মধ্যে সিটির শহরতলীর উপকূলীয় এলাকাগুলোর কয়েক ডজন নেইবারহুডের ৮০,০০০ হাজারের বেশি সংখ্যক বাড়ি বন্যাকবলিত হয়ে পানির নীচে হারিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির প্রায় এক লাখ বাসিন্দা অপেক্ষাকৃত নিচু উপকুলবর্তী এলাকায় বসবাস করে, যে এলাকাগুলো প্রায়ই জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং ২০১২ সালের সাইক্লোন স্যান্ডিতে ওইসব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি ঝড়ের তান্ডবে উড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বাড়িগুলো নতুন করে নির্মাণ অথবা ব্যাপক সংস্কার করতে হয়েছে।
নিম্ন এলাকাগুলোতে বসবাসকারী লোকদের প্রায় অর্ধেকই বাস করে জ্যামাইকা বে’র আশপাশের এলাকায়। সিটির যেসব এলাকার বাড়িঘর পানির নীচে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, সাউথ-ইস্ট কুইন্স এবং নিউইয়র্ক সিটির পূর্বে শহরতলির ৮০,০০০ এরও বেশি বাড়ি আগামী ১৫ বছরের মধ্যে মুদু জলমগ্ন হওয়া নয়, পুরোপুরি পানির নীচে তলিয়ে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানিরা তাদের নতুন এক গবেষণা ফলাফলে বলেছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এর ফলে নিউইয়র্ক সিটির বিদ্যমান আবাসন সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে।
‘রিজিওনাল প্ল্যান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি নন-প্রফিট সংগঠন গত সোমবার প্রকাশিত তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, নিউইয়র্ক সিটির প্রতিটি বরোর ভূমি ব্যবহার জটিল হয়ে উঠবে এবং আগামী ১৫ বছরে কেবল ৮০ হাজার বাড়ি পানির নীচে ডুবে যাওয়া নয়, বরং সিটিতে বিদ্যমান বাড়ি ঘাটতি ১২ লাখের মতো দাঁড়াতে পারে।
অ্যাসোসিয়েশনের হাউজিং এন্ড নেইবারহুড প্ল্যানিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এই রিপোর্ট প্রনেতা মোজেস গেটস বলেছেন যে, পৌর এলাকাগুলোকে যারা বন্যার কারণে তাদের বাড়ি হারাবে তাদের জন্য বাড়ি পুন:স্থাপন করার কাজই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। তাদের পক্ষে বাড়ি ঘাটতি পূরণের জন্য নতুন বাড়ি তৈরির কাজ করা সম্ভব হবে না এবং সম্ভব হলেও নাগরিকদের ওপর করের বোঝা ও বাড়ি ভাড়া পরিমাণ বর্তমান হারের চেয়ে অনেক বেশি হবে। রিপোর্টে পৃথিবী জুড়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বৈত হুমকি এবং আবাসনের ঘাটতি সংক্রান্ত এটি সর্বশেষ রিপোর্ট।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিগত কয়েক দশক যাবত নিউইয়র্ক সিটি এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বাড়ি নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বাড়িভাড়া এবং বাড়ির দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। পাশাপাশি সিটিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উদ্ভুত বন্যা এবং চরম আবহাওয়র সঙ্গে খাপ খওয়ানোর জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।