শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

৫০ টাকা বেতনের কর্মচারী যেভাবে ওবেরয় হোটেলের মালিক হয়েছিলেন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী সিমলার একটি হোটেলে চাকরি করতেন মোহন সিং ওবেরয়। সে সময়ে যে ঘরটিতে তিনি থাকতেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল ১০ ফুট। প্রস্থেও প্রায় একই ছিল।

‘দ্য সেসল’ নামের ওই হোটেলে তাঁর কাজ ছিল কয়লার হিসাব রাখা। যে পাহাড়ে ওই নামী হোটেলটি ছিল, তার অনেক নিচে ছিল তাঁর থাকার জায়গা।

এই পাহাড় বেয়ে তাঁকে দিনে দু’বার যেতে হত। সকালে একবার কাজে যাওয়ার সময় এবং দ্বিতীয়বার দুপুর বেলায় যখন তিনি বাড়ি আসতেন স্ত্রী ইশরান দেবীর হাতে তৈরি সাদামাটা খাবার খেতে।

মি ওবেরয়ের বেতন ছিল পঞ্চাশ টাকা। এই অঙ্কটা ছিল ঠিক তার দ্বিগুণ যেটা তাঁর মা ভগবন্তী ১৯২২ সালে ঝিলামের (বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের চকওয়াল) বাহওয়ান ছেড়ে আসার সময় দিয়েছিলেন।

মোহন সিং ওবেরয়ের বাবা আত্তার সিং পেশায় ছিলেন ঠিকাদার। বয়স যখন ঠিক ছয় মাস, সে সময়ে বাবাকে হারান মি ওবেরয় ।

সাংবাদিক বাচি কারকারিয়া লিখেছেন, “কটূক্তি সহ্য করতে না পেরে মাত্র ষোল বছর বয়সে তাঁর মা দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বাপের বাড়ি চলে আসেন।”

গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষার পরে মোহন সিং রাওয়ালপিন্ডি থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি লাহোরে পড়াশোনা করছিলেন, কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

তার যা শিক্ষাগত যোগ্যতা, তা চাকরি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট না হওয়ায় এক বন্ধুর পরামর্শে টাইপিং এবং শর্ট হ্যান্ড শেখেন। কিন্তু তারপরেও চাকরি পাননি।

মি ওবেরয়ের কাকা লাহোরে তার জুতোর কারখানায় চাকরি দিয়েছিলেন। যদিও তহবিলের অভাবে সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায় এবং গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হন মি ওবেরয় ।

একই সময়ে, আশনাক রায়ের মেয়ের (ইশরাণ দেবী) সঙ্গে তার বিয়েও হয়ে যায়। বিয়ের পরে সরগোধায় সস্ত্রীক শ্যালকের বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন মি ওবেরয়।

মি ওবেরয়কে ভারতের কনরাড হিলটন বলা হত।

ছবির উৎস,OBEROI GROUP

ছবির ক্যাপশান,মি ওবেরয়কে ভারতের কনরাড হিলটন বলা হত।

প্লেগ মহামারী

যে সময়ে তিনি বাহওয়ান যখন ফিরে আসেন, তখন প্লেগ মহামারী দেখা দেয়। মি ওবেরয়কে তার মা সারগোধায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু একই সময়ে তিনি স্থানীয় সংবাদপত্রে একটি সরকারী অফিসে জুনিয়র ক্লার্ক-এর পদের জন্য চাকরির বিজ্ঞাপন লক্ষ্য করেন। মায়ের দেওয়া ২৫ টাকা পকেটে নিয়ে চাকরির পরীক্ষা দিতে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে সিমলায় চলে যান।

ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। মনের দুঃখে একদিন ‘দ্য সেসল’-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে হোটেলের ভিতরে গিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন মি ওবেরয়।

মোহন সিং ওবেরয় ১৯৮২ সালে গবেষক গীতা পিরামলকে নিজের কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “অ্যাসোসিয়েটেড হোটেলস অফ ইন্ডিয়ার মালিকানাধীন এই নামী হোটেলের ম্যানেজার ছিলেন একজন ইংরেজ। নাম ছিল ডি ডব্লিউ গ্রুভ। তাঁরা আমাকে মাসে ৪০ টাকা বেতনে বিলিং ক্লার্ক হিসাবে নিয়োগ করেন।”

“খুব তাড়াতাড়ি আমার বেতন বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে দেয়। আমার স্ত্রীও যখন সিমলায় চলে আসায়, আমরা আমাদের জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকতে শুরু করি। আমাদের ঘরের দেওয়ালগুলো নিজেরাই চুনকাম করেছি। সে সময়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের হাতে ফোস্কাও পড়েছে। কিন্তু মাথার উপরে ছাদ আছে বলে আমরা কৃতজ্ঞও ছিলাম,” তিনি যোগ করেছিলেন।

পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। মি ওবেরয়ের কথায়, “সেসেলের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হলে, ম্যানেজারের পদে আসেন আর্নেস্ট ক্লার্ক। আমি স্টেনোগ্রাফি জানতাম, তাই ক্লার্ক আমাকে ক্যাশিয়ার এবং স্টেনোগ্রাফারের পদ দিয়েছিলেন।“

“একদিন পণ্ডিত মতিলাল নেহরু সেসালে আসেন। সে সময়ে তিনি স্বরাজ পার্টির নেতা ছিলেন। তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন দ্রুত ও যত্নের সঙ্গে টাইপ করানোর প্রয়োজন ছিল। আমি সারা রাত জেগে ওই কাজটা শেষ করে পরদিন সকালে তার হাতে তুলে দিই। একশো টাকার একটা নোট বের করে কৃতজ্ঞতার সাথে তিনি আমাকে দিয়েছিলেন।”

“চোখে জল এসে গিয়েছিল আমার। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। একশো টাকা যা ধনীরা অনায়াসে ফেলে দেয়, তা আমার কাছে অনেক ছিল। টাকার ক্রয় ক্ষমতা এতটাই ছিল যে আমি স্ত্রীর জন্য একটা ঘড়ি, সন্তানের জন্য জামাকাপড় এবং নিজের জন্য একটি রেনকোট কিনেছিলাম।”

সিমলার কার্লটন হোটেলের ছবি।

ছবির উৎস,OBEROI GROUP

ছবির ক্যাপশান,সিমলার কার্লটন হোটেলের ছবি।

সিমলার কার্লটন হোটেল

অ্যাসোসিয়েটেড হোটেলস অফ ইন্ডিয়ার সাথে ক্লার্কের চুক্তি শেষ হওয়ার পরে, তিনি দিল্লি ক্লাব-এর ক্যাটারিং-এর চুক্তি গ্রহণ করেছিলেন। মোহন সিংও সেই চাকরিতে যোগ দেন। সে সময়ে তাঁর মাসিক বেতন ১০০ টাকা। দিল্লি ক্লাবের চুক্তিটি কেবল এক বছরের জন্য ছিল। তাই ক্লার্ক অন্য ব্যবস্থার খোঁজ শুরু করেন।

সিমলার কার্লটন হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ক্লার্ক সেটা লিজ দিতে চেয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল একজন গ্যারান্টরের।

মি ওবেরয়ের কথায়, “আমার কিছু ধনী আত্মীয় এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। কার্লটন ততদিনে ক্লার্ক হোটেলে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছর পরে, ক্লার্ক অবসর নেওয়ার এবং হোটেলটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। আমায় প্রস্তাব দেওয়ার সময় বলেছিলেন হোটেলটি চালিয়ে নিয়ে যেতে এবং তার ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে এমন কাউকে তার প্রাথমিক ভাবে পছন্দ।”

“প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য আমার কিছু সম্পত্তি আর স্ত্রীর গয়না বন্ধক রাখতে হয়েছিল। এই সময় এক কাকা আমার পাশে দাঁড়ান। তার সহায়তায় আমি ক্লার্ক হোটেলের মালিকানা নিয়েছিলাম।”

১৯৩৪ সালের ১৪ আগস্টের মধ্যে মোহন সিং দিল্লি ও সিমলাস্থিত ক্লার্কের হোটেলগুলির একমাত্র মালিক হন।

প্রসঙ্গত, মোহন সিং ওবেরয় এবং৫০পঞ্চাশ শতাংশ কম হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে দার্জিলিং, চণ্ডীগড় এবং কাশ্মীরে আরও কয়েকটি হোটেল তিনি লিজে নেন।

তার কথায়, “আমি আমার নিজের হোটেল তৈরির কথা ভাবতে শুরু করি। ওড়িশার সমুদ্রে গোপালপুরে একটি ছোট হোটেল এই প্রচেষ্টার প্রথম ফল।”

কাকতালীয় ভাবে তার জীবনের প্রায় প্রতিটি মোড় ঘোরানো ঘটনা কোনও না কোনও মহামারীর সাথে যুক্ত ছিল।

বাচি কারকারিয়ার লেখা বই।

ছবির উৎস,OBEROI GRAND

ছবির ক্যাপশান,বাচি কারকারিয়ার লেখা বই।

কলকাতায় কলেরার প্রকোপ

কলকাতায় কলেরার প্রকোপ দেখা দেয় ১৯৩৩ সালে। সে সময়ে আর্মেনিয়ান রিয়েল এস্টেট টাইকুন স্টিফেন আরাথনের গ্র্যান্ড হোটেলটি ১০০ জনেরও বেশি বিদেশী অতিথির মৃত্যুর পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ কলকাতায় যেতে ভয় পেত সে সময়ে।

কিন্তু মি ওবেরয় তার স্বভাবজাত বিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্প দিয়ে, তার হোটেল ব্যবসাকে একটি লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করেন।

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই কলকাতা সৈন্যে ভরে যায়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থাকার জায়গা খুঁজছিল সেখানে।

মোহন সিং ওবের‍য় বলেন, “মাথা পিছু দশ টাকা হিসেবে আমি তৎক্ষণাৎ দেড় হাজার সৈন্যের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে । মি গ্রুভকে প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা বেতনে ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগও করে ফেলি। আমাকে প্রথম চাকরি দিয়েছিলেন তিনি।”

এই হোটেলটি পরিচালনা করা মি ওবেরয়ের কর্মজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। ১৯৪১ সালে, ভারত সরকার ভারতীয় হোটেল শিল্পে তার সেবার স্বীকৃতি হিসাবে রায় বাহাদুর উপাধিতে দেয়।

১৯৪৩ সালে, মোহন সিং অ্যাসোসিয়েটেড হোটেলস অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের শেয়ার কিনেছিলেন এবং রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার, লাহোর, মুরি এবং দিল্লিতে নির্মিত হোটেলগুলির একটি বড় চেনের মালিকানা অর্জন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই হোটেলটিও কিনে ফেলেন যেখানে তিনি প্রথম চাকরি করতেন। দেশভাগের পর ১৯৬১ সাল পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডিতে ফ্ল্যাশ মেনস, লাহোরে ফ্লিটিস, পেশোয়ারে ডেনস এবং মুরিতে সেসেল এই কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল।

পরে, এটা অ্যাসোসিয়েটেড হোটেলস অফ পাকিস্তান নামে একটি সংস্থার সাথে এক হয়েছিল। তবে এর বেশিরভাগ শেয়ার সে সময় পর্যন্ত ওবেরয় পরিবারের কাছে ছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ওই সব হোটেলকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে বাজেয়াপ্ত করা হয়।

জেনারেল জিয়াউল হক।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,জেনারেল জিয়াউল হক।

জেনারেল জিয়াউল হকের মৃত্যু

সাংবাদিক পল লুইসের মতে, পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউল হক তাকে সেই মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মি ওবেরয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার আগেই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার (জেনারেল হকের)।

লুইস লিখেছেন যে মোহন সিং ওবেরয় ভারতীয় হোটেল শিল্পকে বিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন।

“তাকে (মি ওবেরয়কে) ভারতের কনরাড হিলটন বলা হত। জরাজীর্ণ এবং কম মূল্যের সম্পত্তি খুঁজে নিয়ে তার আধুনিকীকরণের বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি।”

“তিনি পুরানো এবং জরাজীর্ণ প্রাসাদ, ঐতিহাসিক ভবনগুলিকে বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করেন। যেমন- কলকাতার ওবেরয় গ্র্যান্ড, কায়রোর ঐতিহাসিক মিনা হাউস এবং অস্ট্রেলিয়ার উইন্ডসর। সিমলার ওবেরয় সেসাল বিল্ডিংটি বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তৈরি হয়। এটার নকশা বেশ জটিল। সাজসজ্জার পরে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে আবার খোলা হয়েছিল।”

ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিশর, অস্ট্রেলিয়া এবং হাঙ্গেরিতে প্রায় ৩৫ টি বিলাসবহুল হোটেল নিয়ে ওবেরয় গ্রুপ টাটা গ্রুপের পরে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হোটেল সংস্থা হয়ে ওঠে।

মি ওবেরয়ের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি তাদের দ্বিতীয় ব্র্যান্ড ‘ট্রাইডেন্ট’ শুরু করে। এটা পাঁচ তারা হোটেল।

এই গ্রুপের আরেকটি মাইলফলক ছিল ১৯৬৬ সালে ওবেরয় স্কুল অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠা।

বর্তমানে ‘দ্য ওবেরয় সেন্টার অব লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে পরিচিত। আতিথেয়তার বিষয়ে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দেয় এই স্কুলটি।

নারীদের চাকরি

এই হোটেলগুলিতে নারীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তটাও বেশ উল্লেখযোগ্য।

ওবেরয় গ্রুপ ১৯৫৯ সালে প্রথমবার ভারতে ফ্লাইট ক্যাটারিং-এর কাজ শুরু করে।

মোহন সিং ওবেরয় ১৯৬২ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সাফল্য পান। ১৯৬৭ সালে তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৪৬ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হন।

২০০১ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করে।

বাচি কারকারিয়ার লেখা মোহন সিং ওবেরয়ের জীবনী, ‘ডেয়ার টু ড্রিম: এ লাইফ অব রায় বাহাদুর মোহন সিং ওবেরয়’-তে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার কথা বলা হয়েছে।

এমবিএ ছাড়াই তিনি নিজের ‘হ্যান্ডস-অন স্টাইল’ এবং ‘ম্যানেজমেন্ট হাই ওয়াকথ্রু’ তৈরি করেছিলেন মি ওবেরয়। ১৯৩৪ সালে সিমলায় তার প্রথম ৫০ কক্ষের ক্লার্ক হোটেলে তিনি রান্নাঘর থেকে অতিথিরা যে তলায় আছেন সেখানে খাবার বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি লিফটও ডিজাইন করেন।

“রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাখনের অবশিষ্ট টুকরা আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে, তিনি মজাদার পেস্ট্রি তৈরি করতে সেই টুকরোগুলি পুনরায় ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি এবং ইশরাণ কেনাকাটার উপর বেশ নজর রাখতেন।”

কয়েক দশক পরে, ৯০ বছর বয়সে, পুত্র পৃথ্বীরাজ ‘বিকি’র দীর্ঘ অসুস্থতার সময় তিনি আনন্দের সঙ্গে আবারও কাজে যোগ দেন।

তার জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, “তিনি দিল্লির একটি হোটেলে গরম জলের থার্মোস্ট্যাটের সামান্য পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। এই পরিবর্তনের দিকে অতিথিদের নজর না গেলেও, ওই পদক্ষেপটি বিদ্যুতের বিলের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আনে। জলের গ্লাস থেকে ফুলদানিতে থাকা গোলাপের উচ্ছতা-সমস্ত দিকে নজর থাকত তাঁর।”

সিমলার সেসেল হোটেল।

ছবির উৎস,OBEROI GROUP

ছবির ক্যাপশান,সিমলার সেসেল হোটেল।

কাজের সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক

বাচি কারকারিয়া লিখেছেন যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাজ পরিবারের না হয়েও নিজের খামারে ব্যক্তিগত শ্মশান তৈরি করেছিলেন … রাজপুত স্টাইলের ছাতা সহ একটি শান্ত, গাছে আবৃত, বেলেপাথর দিয়ে তৈরি জায়গা। কিন্তু চার বছর পরে, অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে তাঁর ছেলে তিলক রাজ ‘টিকি’ এবংর স্ত্রী জন্য সেটা ব্যবহার করতে হয় মি ওবেরয়কে।

“মোহন সিং তার জন্মের বছরটি ১৮৯৮ থেকে ১৯০০ সালে পরিবর্তন করেছিলেন কারণ তিনি চাননি যে তিনি তাকে উনিশ শতকের মানুষ হিসাবে ভাবা হোক। এই কথাটা অবশ্য গোপনই থাকত যদি তাঁর ছেলে বিকি তাঁর ইচ্ছের উপর রাশ টানতে পারতেন । ১৯৯৮ সালে, বিকি জন্ম সালের বিষয়টি সংশোধনটি করিয়েছিলেন। তিনি চাননি, বাবার ১০০ বছরের উদযাপনটা বাদ যাক,” মিজ কারকারিয়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন।

রায় বাহাদুর মোহন সিং ওবেরয় ১০৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

তার দর্শন ছিল, শুধু অর্থের কথা ভাবলে সঠিক কাজ হবে না। কিন্তু কাজ সঠিক হলে টাকা আপনা থেকেই আসতে বাধ্য।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com