সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

৫ হাজার দিয়ে শুরু, এখন মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

‘নারীর আবার শখে ব্যবসা করতে হয় নাকি, মাথায় কোনো সমস্যা হয়েছে। তুমি মেয়ে, তুমি পড়াশোনা করে ঘর-সংসার সামলাবে, এটাই স্বাভাবিক।’

এ ধরনের কথা অনেক উদ্যোক্তা নারীকেই শুনতে হয় আমাদের সমাজে। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেন কিছুতেই এরকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে পারছে না। তবুও কিন্তু পিছিয়ে নেই আমাদের নারীরা। প্রতিটা সেক্টরই নারীরা রাখছেন অসামান্য অবদান। তথ্য–প্রযুক্তির এ যুগে নারীরা অনলাইনেও উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা পাচ্ছেন।

বলছি নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা পারভিন এর কথা। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চল বারেকটারী গ্রামে বাস করেন ফাতেমা। করোনার সময়ে যখন সবাই অলস সময় পার করছিলেন, তখন এক অসাধারণ আইডিয়া আসে ফাতেমার মাথায়। কুষ্টিয়ার ছোট বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে শখের বাজার অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। শখের বসেই যেহেতু তার এই উদ্যোগ তাই তিনি নাম রাখেন ‘শখের বাজার’।

কীভাবে একজন উদ্যোক্তা হয়ে পথ চলা শুরু করেন—এ প্রশ্নে ফাতেমা বলেন, ‘শখের বশেই পথচলা শুরু আমার। আমি লালমনিরহাট বাঁধন–এর কর্মী ছিলাম, তাই অনেক পরিচিত ছিলাম। সেখানকার সবাই অনেক হেল্পফুল ছিলেন। কলেজের অনেক শিক্ষক আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমার মা আমাকে সব থেকে বেশি সাপোর্ট দিয়েছেন। শখ  থেকে শুরু করলেও যখন দেখলাম এটা অনেক ভালো এগিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি এই কাজকে পেশা হিসেবেই নিলাম।’

শখ দিয়ে ফাতেমার এই উদ্যোগী হয়ে ওঠা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। তবুও কখনো নিরাশ হননি তিনি। বর্তমানে ফাতেমা পারভিন শখের বাজার নামে একটি শোরুম দিয়েছেন জেলা সদরে। তিনি বর্তমানে অনলাইন ও শোরুম দুটোতেই পণ্য বিক্রি করেন। ৫০০০ টাকা বিনিয়োগ থেকে বর্তমান মাসিক আয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঁদল, কুমড়ার বড়ি, সরিষার তৈল, গাওয়া ঘি, নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খাদ্যপণ্য বিক্রয় করেন তিনি। এছাড়াও মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র বিক্রি করেন।

নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা পারভিন তার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মনে করি বাইরের তুলনায় পরিবারের কিছু মানুষ আমাকে বেশি বাধা দিয়েছেন। তারা অনেক রকমের বাধা তৈরি করছেন, যাতে আমি ব্যবসা করতে না পারি। কিন্তু আমার মা আমাকে অনেক মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন, যার কারণে আমি ভেঙে পরিনি। অবশ্য আমার পরিবার আমাকে বাধা দিয়েছে বলেই হয়তো আমার মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার এই জেদ তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি এটার জন্য আমাদের সমাজের যে তথাকথিত মনোভাব, তা দায়ী।’

ফাতেমা তার এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘অনেকদূর আসতে পেরেছি আমি। ভবিষ্যতে আমি চাই আমার শখের বাজার দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। নারীদের নিয়ে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। সেটা হলো আমার এখানে সকল কর্মী হবে নারী। যেসব নারীরা উদ্যোগী হতে চান, তাদের আমি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’

এ বছর ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস এ ফাতেমা পারভিনকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ। তরুণ বয়সে ফাতেমা পারভিন যে সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন, তা এ দেশের নারী সমাজের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com