শ্বেত মহাদেশ নামে সুপরিচিত অ্যান্টার্কটিকা বর্তমানে সবুজ হয়ে উঠছে। কেবল ৪০ বছরে গাছপালার পরিমাণ ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপে – এমনই দাবি গবেষকদের।
অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে এ গবেষণাটি করেছেন ‘ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে’-এর বিজ্ঞানীরা।
১৯৮৬ সালে সেখানে উদ্ভিদ ছিল মোট এক বর্গ কিলোমিটারেরও কম। তবে ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২ বর্গ কিলোমিটারে। গবেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা আরও বাড়ছে, বিশেষ করে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সবুজায়ন বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
“অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে আমরা যে ধরনের উদ্ভিদ দেখতে পাই এর বেশিরভাগই শ্যাওলা। সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে এগুলো,” বলেন, এ গবেষণার সহ-লেখক ‘ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটার’-এর অধ্যাপক ড. টমাস রোল্যান্ড। আর এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।
“এখনও প্রায় সম্পূর্ণভাবে তুষার, বরফ ও শিলায় আবৃত অ্যান্টার্কটিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য। কেবল এর ক্ষুদ্র অংশে বেড়ে উঠেছিল উদ্ভিদের জীবন। তবে এই ক্ষুদ্র অংশটি নাটকীয়ভাবে বেড়ে উঠেছে। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, অ্যান্টার্কটিক মহাদেশের মতো বিশাল ও বিচ্ছিন্ন প্রান্তরেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে।”
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ উষ্ণ হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন মেরু অঞ্চল। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণতম প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার কাছাকাছি অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপটি, যেখানে বিশ শতকের শেষার্ধে দক্ষিণ গোলার্ধের অন্য যেকোনও জায়গার তুলনায় উষ্ণতা বেশি বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
এসব বাস্তুসংস্থান আরও বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ও জলবায়ু এভাবেই উষ্ণ হতে থাকলে সম্ভবত অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের সবুজায়নের পরিমাণ বাড়বে, বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ার’-এর অধ্যাপক ও সহ-লেখক ড. অলি বার্টলেট।
“অ্যান্টার্কটিকার মাটি বেশিরভাগই খারাপ মানের। তবে উদ্ভিদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেলে এখানের মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ হবে, যা মাটির মানকে আরও ভাল করবে। ফলে সম্ভবত আরও সহজ হবে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে অন্যান্য গাছপালা জন্মানোর পথ।
“জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা বর্তমানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে উষ্ণায়নের কারণে এই বিশেষ অঞ্চলের জীব এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের মৌলিক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব,” বলেছেন অধ্যাপক রোল্যান্ড।
“অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপ ও সার্বিকভাবে মহাদেশের পরিবেশগত ভবিষ্যত সম্পর্কে গুরুতপূর্ণ উদ্বেগ উঠে এসেছে গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন তথ্যে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই এসব পরিবর্তন বুঝতে হবে এবং এগুলো ঠিক কী কারণে ঘটছে তা শনাক্ত করতে হবে।”