প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও সাফল্যে, ঐতিহ্যে, অবকাঠামোয় নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে ঢের পিছিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি। তবে ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান কিনে নেওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে ক্লাবটি। বিশেষ করে গত এক যুগে একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে।
ক্লাবের সমর্থক ও দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এবার বড় ধরনের পদক্ষেপই নিল ম্যানচেস্টার সিটি। অবকাঠামোগত উন্নয়নে নগর পরিষদে পরিকল্পনা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে সিটি। বিষয়টি আজ নিজেদের ওয়েবসাইটে এক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে তারা।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে থাকছে ৪০০ শয্যার বিলাসবহুল হোটেল, স্থায়ী জাদুঘর, পানশালা, বিপণিবিতান, ফ্যান জোন ও স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা বাড়ানো। এসব বাস্তবায়নে ম্যানচেস্টার সিটি ৩৪ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
এ ব্যাপারে ক্লাবের কার্যনির্বাহী বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যানি উইলসন বলেছেন, ‘ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সমর্থকদের সর্বোচ্চ মানের সুযোগ-সুবিধা, বিনোদন, অবকাশযাপন ও আবাসন নিশ্চিত করতে আমরা অনেক দিন ধরে ভেবে আসছি। আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ম্যানচেস্টার নগর পরিষদে এ–সংক্রান্ত পরিকল্পনা আবেদনপত্র জমা দিয়েছি।’
নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামের বর্তমান ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার। সেটাকে বাড়িয়ে ৬০–৬১ হাজারে উন্নীত করতে চায় সিটি কর্তৃপক্ষ। ২০২৮ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের যৌথ আয়োজক হতে বিড করবে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড। প্রতিযোগিতার সম্ভাব্য ১০ ভেন্যুর একটি হতেই ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্লাবটির চেয়ারম্যান আমিরাতের বাণিজ্য মহারথী খালদুন আল মুবারক।
ক্লাবের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতীক বিবেচনা করা হয় জাদুঘরকে। ক্লাবের সব অর্জনের স্মারক এখানেই সাজিয়ে রাখা হয়। তবে এ মুহূর্তে ম্যান সিটির যে জাদুঘর আছে, সেটাকে প্রদর্শনী হল বললেই জুতসই হয়। সিটি কর্তৃপক্ষও সংগ্রহশালাটির নির্দিষ্ট কোনো নাম দেয়নি। মূল মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়াম, ট্রেনিং গ্রাউন্ড, একাডেমি, সদর দপ্তর আর ওই সংগ্রহশালা—পাশাপাশি অবস্থিত পুরো এলাকাকে সিটি স্কয়ার ডাকা হয়।
তবে দিন যতই গড়াচ্ছে, ম্যান সিটির সাফল্যের গ্রাফ ততই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর ১৩০ বছরে শীর্ষ পর্যায়ে মাত্র ১২টি ট্রফি জিতেছিল সিটিজেনরা। সেই তারাই আমিরাতের মালিকানায় আসার পর জিতেছে ১৭টি শিরোপা! একটা স্থায়ী জাদুঘর নির্মাণ তাই আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩২১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২৪৭ টাকার টিকিট কেটে পুরো সিটি স্কয়ার ঘুরে দেখতে পারেন দর্শনার্থীরা। আলাদা জাদুঘর হলে স্বাভাবিকভাবে এর জন্য আলাদা টিকিট কাটতে হবে।
ম্যানচেস্টার বা এর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আগত সিটি সমর্থকেরা খেলা দেখেই ফিরে যেতে পারেন। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে আসা সমর্থকদের থাকতে হয় নগরীর বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে। তাঁদের কষ্ট লাঘবে সিটি স্কয়ারেই গড়ে তোলা হবে ৪০০ শয্যার হোটেল।
ম্যান সিটি ক্লাবটি নগরের পূর্বে অবস্থিত। এসব অবকাঠামো বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার মানুষ উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস উইলসনের, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের অগ্রাধিকার তালিকার প্রথমে থাকবে। আশা করি এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি হবে।’