শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

২০২৩ সালে রোমানিয়ায় আটক ৩ হাজার বাংলাদেশি

  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

অনিয়মিতভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৩ সালে রোমানিয়ায় আটক হয়েছেন তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বিষয়টি জানিয়েছে দেশটির সীমান্ত পুলিশ৷ ইউরোপের ভিসামুক্ত চলাচলের অঞ্চল শেঙেনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে রোমানিয়া৷ এরপর ওই দেশটি এবং হাঙ্গেরির সঙ্গে থাকা সীমান্ত অঞ্চল ঘুরে দেখেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷

সোমবার (৬ মে) ইনফোমাইগ্রেন্টসের সঙ্গে কথা হয় রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রুর৷

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ৪০০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে রোমানিয়া থেকে অনিয়মিত উপায়ে সীমান্ত অতিক্রমের আটক করে বর্ডার পুলিশ৷ তাদের বেশিরভাগই হাঙ্গেরিতে ঢুকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও জানান তিনি৷

অভিবাসীরা সাধারণত পণ্যবাহী লরি, ট্রাক অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোমানিয়া ছাড়ার চেষ্টা করেন৷

দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রায় ৪৯০০ অভিবাসী

বর্ডার পুলিশের মুখপাত্রের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছর অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা৷

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে৷

যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বৈধ ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তারা৷

গেল বছর সীমান্তে আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের নাম৷ দেশটির ৮১০ জন নাগরিকের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা আটকে দিয়েছে রোমানিয়ার সীমান্ত পুলিশ৷ এছাড়া নেপালের ৩৫৯ জন, শ্রীলঙ্কার ৩৩০ জন এবং ভারতের ২২০ জন অভিবাসীকে গত বছর সীমান্ত থেকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মুখপাত্র৷

সীমান্ত ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এর আগে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের আলোচিত নাদলাক-২ সীমান্ত ঘুরে দেখে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷ ২০২৩ সালে এই সীমান্ত পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি পারাপারের চেষ্টা দেখা গেছে৷

ওই সময় সীমান্ত আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু সীমান্তের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ও অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে নেয়া্তৃপক্ষের কার্যক্রম ব্যখ্যা করেন।

ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে কথা বলছেন রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু। ছবি : আরাফাতুল ইসলাম/ইনফোমাইগ্রেন্টস
ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে কথা বলছেন রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু। ছবি : আরাফাতুল ইসলাম/ইনফোমাইগ্রেন্টস

তিনি জানান, সীমান্তে বিপুল সংখ্যক তুর্কি-নিবন্ধিত মালবাহী গাড়ির চলাচল রয়েছে৷ এসব গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই মানবপাচারের অভিযোগ আসে৷ তাই সংকট নিরসে রোমানিয়া, হাঙ্গেরি এবং তুরস্ক কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করে আসছিল৷

দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু আরও যোগ করেন, তিন দেশের মধ্যে সফল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়া ও হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষকে সহায়তার জন্য তুর্কি সীমান্ত পুলিশের কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়৷ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তারা হাঙ্গেরিতে এবং ২০২২ সালের ২৫ মার্চ থেকে রোমানিয়াকে গাড়ি তল্লাশিসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা দিচ্ছে৷

রোমানিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার একটি চুক্তির আওতায় তুর্কি পুলিশ দেশটির ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়়েছে বুখারেস্ট।

রোমানিয়া পুলিশের সাথে নাদলাক-২ সীমান্তে আসা একটি লরি চেক করছে তুর্কি পুলিশের একজন সদস্য। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/আরাফাতুল ইসলাম
রোমানিয়া পুলিশের সাথে নাদলাক-২ সীমান্তে আসা একটি লরি চেক করছে তুর্কি পুলিশের একজন সদস্য। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/আরাফাতুল ইসলাম

রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত ছাড়াও হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে অবস্থিত রোজকে হাইওয়েতেও এমন আন্তঃদেশীয় যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি থাকার কথা জানিয়েছে রোমানিয়া বর্ডার পুলিশ৷

রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মতে, বলকান রুটে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিন দেশের যৌথ সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্ববপূর্ণ।

ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে কথা বলছেন নাদলাক-২ সীমান্ত দায়িত্বরত বর্ডার পুলিশের  একজন সদস্য। ছবি: আরাফাতুল ইসলাম/ইনফোমাইগ্রেন্টস
ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে কথা বলছেন নাদলাক-২ সীমান্ত দায়িত্বরত বর্ডার পুলিশের একজন সদস্য। ছবি: আরাফাতুল ইসলাম/ইনফোমাইগ্রেন্টস

বলকান রুটে সবার সহযোগিতায় অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই করাসম্ভব বলেও মনে করা হয়৷ এছাড়া এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার মধ্য দিয়ে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তাদের সীমান্তে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা হয়৷ এই অভিজ্ঞতা নিজ দেশে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সহায়তা করবে৷

তথ্য ঘাটতিতে অনিয়মিত অভিবাসন চেষ্টা

২০২০ সালের জুলাই থেকে রোমানিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন মো. দাউদ আলী৷

তিনি ৩০ এপ্রিল ইনফোমাইগ্রেন্টসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিগত তিন বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় এসেছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কিত জটিলতায় থাকলেও বড় একটি অংশ রোমানিয়ায় বৈধ অভিবাসী হিসেবে ভালো আছেন৷

রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, ‘‘কাজের ভিসায় বাংলাদেশিরা যেসব এজেন্টদের মাধ্যমে আসেন তারা প্রায়ই অভিবাসীদের গ্রস বা করসহ বেতন এবং নেট বা কর ছাড়া বেতনের বিষয়টি গোপন রাখেন৷ যার ফলে অভিবাসীরা রোমানিয়ায় এসে হতাশায় ভোগেন৷ এটি অনেক ব্যক্তিকে অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দিতে উৎসাহী করেছে৷ যার সুযোগ নিচ্ছেন সীমান্ত মানবপাচারে জড়িত অপরাধীরা৷ এসব জটিলতা এড়াতে আমরা রোমানিয়া কর্তৃপক্ষকে রোমানিয়ান ভাষা ও ইংরেজিতে কাজের চুচুক্তি অনুবাদ করার প্রস্তাব দিয়েছি।”

রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো: দাউদ আলী। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/আরাফাতুল ইসলাম
রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো: দাউদ আলী। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/আরাফাতুল ইসলাম

তিনি আরও বলেন, ‘‘কিছু নাম সর্বস্ব কোম্পানি ওয়ার্ক পারমিট বের করে অভিবাসীদের কাছ থেকে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে তারা কর্মীদের কোনো কাজ দিতে পারেনি৷ যার ফলে উপায় না দেখে অনেক অভিবাসীরা অনিয়মিত হয়ে পরেন৷ আমরা রোমানিয়া কর্তৃপক্ষকে যাছাই বাছাই করে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর আহ্বান করেছি৷’’

এই কূটনীতিক আরো বলেন,

রোমানিয়ায় আগে বাংলাদেশের দূতাবাস ছিল না৷ তবে এখন দূতাবাস নিয়মিতভাবে ফেসবুক পাতায়, হুয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এবং অভিবাসীদের সাথে বৈঠক করে ভুল তথ্য দূর করার চেষ্টা করছে৷ এছাড়া যারা নানা কারণে বৈধ ভিসায় এসে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন তাদেরকে যেন নিয়মিত করা হয় সেজন্য আমরা রোমানিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি৷

গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল রোমানিয়া বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের সাথে কথা বলেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷ তাদের মধ্যে অনেকেই কাজের ভিসায় এসে রোমানিয়ায় ভালো থাকার কথা জানালেও অনেকেই বলেছেন জটিলতায় পড়ার কথা৷

বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি রোমানিয়ার ভিসা পেলেও দেশটিতে নিয়মিতভাবে থাকার সংখ্যা কম৷ যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা প্রাপ্তির হার কমেছে বলে নিশ্চিত করেছেন বুখারেস্টে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত৷

তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ থেকে শেঙেন জোনে অন্তুর্ভুক্তির পর থেকে রোমানিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন অভিবাসী শ্রমিকদের এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর মেয়াদি অস্থায়ী রেসিডেন্ট পারমিট দিচ্ছে৷। যা অভিবাসীদের জীবনযাত্রা সহজ করবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com