পারিবারিক অশান্তি সহ্য করতে না পেরে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন তিনি। সেসময় হাতে ছিল মাত্র ৩০০ টাকা। এক জোড়া জুতা আর দুটি জামা নিয়ে বের হয়ে তিনি আজ কোটি টাকার মালিক। কঠিন সেই টানাপোড়েনের জীবনকে যিনি করে তুলেছেন রাজকীয় তার নাম চিনু কালা। বর্তমানে তিনি রুবানস অ্যাকসেসরিজের মালিক।
তবে ১৫ বছরের সেই অসহায় মেয়ে থেকে চিনু কালা হয়ে ওঠার যাত্রাটা সহজ ছিল না তার। প্রথম দু’দিন খুব ভয়ে কেটেছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দিন কাটিয়েছিলেন। তারপর একটা আশ্রয়ের সন্ধান পান। প্রতি রাতে ২০ টাকার বিনিময়ে একটি ডর্মিটরিতে তিনি থাকার ব্যবস্থা করে ফেলেন। কয়েক দিনের মধ্যে একটা কাজও জুটিয়ে নেন।
দরজার দরজায় ঘুরে ছুরির সেট, কোস্টার ইত্যাদি বিক্রি করার কাজ। সারাদিন ঘুরে কয়েকটাই মাত্র বিক্রি করতে পারতেন। কোনোদিন ২০ টাকা, কোনোদিন ৬০ টাকা উপার্জন হত তার। বেশিরভাগ বাড়িতেই তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হত। এসব নিয়ে প্রথম প্রথম খুব ভেঙেও পড়তেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি।
মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনিই আবার এই পেশায় এতটাই দক্ষ হয়ে ওঠেন যে, তাকে ওই সেলস কোম্পানি সুপারভাইজারের পদে উত্তীর্ণ করে। নানা রকমের কাজ করেছেন চিনু। রেস্তোরাঁয় ওয়েট্রেসের কাজও করেছেন। এমন দিনও গিয়েছে তার যখন সারাদিন সেলস এর কাজ করার পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেস্তোরায় খাবার পরিবেশন করে উপার্জন করেছেন। উপার্জন করেছেন মডেলিং থেকেও।
২০০৪ সালে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা অমিত কালার সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। তার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট আসে ২০০৮ সালে। বন্ধুদের কথা মেনে মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন চিনু। প্রতিযোগিতার ফাইনালেও পৌঁছান। তবে ইংরেজিতে ঠিক মতো উত্তর দিতে না পারায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন।
এরপর থেকেই তার মডেলিংয়ে আসা। আর মডেলিংয়ে আসার পরই ফ্যাশন জুয়েলারিতে আগ্রহ জন্মায় চিনুর। এরইমধ্যে আর্থিক ভাবে অনেকটা সাবলম্বী হয়ে উঠেছিলেন। ফলে এবার চিনু নিজের ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করে ফেলেন। ২০১৪ সালে শুরু করে দেন অনলাইন জুয়েলারি ব্যবসা। নাম দেন রুবানস অ্যাকসেসরিজ।
অনলাইনের পাশাপাশি বেঙ্গালুরুর ফোরাম মলেও রুবান অ্যাকসেসরিজের আউটলেট রয়েছে। বর্তমানে চিনুর কোম্পানির টার্নওভার এখন সাড়ে ৭ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে ১০ অক্টোবর রাজস্থানে জন্ম তার। প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ তিনি পাননি। বাস্তব অভিজ্ঞতাই তার শেখার মূল প্রেরণা। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।