শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন

হেবাং রেস্টুরেন্ট

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঢাকায় পাহাড়ি নারীদের রেস্তোরাঁ ‘হেবাং’

কংক্রিটের ভবনেই রেস্তোরাঁটি। তবে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে ভিন্ন পরিবেশ। প্রথমেই চোখ আটকাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট ঘরে। দেয়ালের গায়েও বাঁশের নানা কারুকাজ। বাঁশের এত ব্যবহার হবে নাইবা কেন? এ যে পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ। রাজধানী ঢাকার কংক্রিটের পাহাড়ে আসল পাহাড়ের রূপ আনতেই বাঁশের এই প্রাধান্য, জানান রেস্তোরাঁর পরিচালনাকারীরা।

এখানে যে ঘরের কথা বলা হচ্ছে, চাকমা ভাষায় এর নাম ইজর। এটা পাহাড়িদের প্রথাগত ঘরের বাইরের অংশ। যেখানে বসে মানুষ সময় কাটায়। নগরবাসী যেন বসে পাহাড়ি খাবার খেতে খেতে সময় কাটতে পারে, সে ব্যবস্থাই আছে এখানে। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ার এ রোস্তোরাঁর নাম ‘হেবাং’। কাজীপাড়ার পদচারী সেতুটির উত্তর দিকের একটি ভবনের তিনতলায় এর অবস্থান।

হেবাং নারী পরিচালিত প্রথম পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ। চার বোন এর পরিচালনায় আছেন। রেস্তোরাঁ চালুর আগে ২০১৬ সাল থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে পাহাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করত হেবাং।

গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ চালু হয় হেবাং। অনলাইনে পাহাড়ি খাবার সরবরাহের মাধ্যমে রেস্তোরাঁর চিন্তা আসে চার বোনের। ‘হেবাং’- চাকমা ভাষায় যার অর্থ ভাপে রান্না করা খাবার। এ রান্নার একটি বৈশিষ্ট্যই হলো সেদ্ধ বা ভাপে রান্না। বাঁশের ভেতরে মুরগি বা অন্য মাংস দিয়ে সেই বাঁশ পুড়িয়ে রান্না করা খাবার বেশ জনপ্রিয়। ‘সুমোত দি তোন’ নামের এ খাবার এখানে নিয়মিত মেলে। জুমের বিন্নি চালের ভাতের সঙ্গে নানা পাহাড়ি তরকারির মিশ্রণ ‘পাজন’ও পাওয়া যায় নিত্যদিন। পাহাড়িদের বর্ষবিদায় ও বরণের উৎসব বৈসাবিতে পাজন অপরিহার্য, এটি পাওয়া যায় প্রতিদিন। আছে শুটকির নানা আইটেম। ছোট শামুক বা শীতের সময়ে সেদ্ধ বাঁধাকপির সঙ্গে ঝালের মিশ্রণ।

হেবাংয়ে ঝকঝকে পাত্রে রাখা খাবারের মধ্যে দেখা যায় হাঁস, বেলে মাছ, কাঁকড়ার নানা পদ। ব্রয়লার মুরগি আছে। তবে পাহাড়ের বনমোরগও পাওয়া যায়। বর্ষার দিনে বাঁশ কোড়ল দিয়ে তৈরি নানা পদ থাকে। কোড়লের মধ্যে মুরগির মাংস ঢুকিয়ে ‘বাচ্চুরিমালা’ তো বিখ্যাত।

দুপুর ও রাতের খাবারের বিভিন্ন পদের সঙ্গে আছে নানা পাহাড়ি পিঠা। বিন্নি চালের পিঠা, কলা পিঠা গরম-গরম পরিবেশিত হয়। আছে নানা ফলের জুস। তিন থেকে চার ধরনের চা আছ্ েএর মধ্যে তেঁতুল চা, পুদিনাপাতার চা, রোজেলা চা অন্যতম। এখানে পাহাড়ের জুমে হওয়া টক ফল আমিল্যার পাতা শুকিয়ে তৈরি রোজেলা চা তাদের নিজেদের আবিষ্কার।

দুপুরের জন্য জন্মদিন বা কোন পার্টি করতে চাইলে বেলা ১১ টার মধ্যে আর রাতের খাবারের জন্য বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে অর্ডার দিতে হবে। দুপুর সাড়ে ১২ টায় হেবাং খোলে, চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

রেস্তোরাঁটি পাহাড়ি খাবারের হলেও এখানে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশর বেশি বাঙালি। হেবাংয়ে শব্দযন্ত্রে ধীরলয়ে বাজে পাহাড়ি নানা ভাষায় গান। বিভিন্ন দিবসে এখানে গানের আসরও বসে। চার বোনের একজন প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘এ রেস্তোরাঁ আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিঃসন্দেহে। তবে খাবার, পরিবেশ, পরিবেশনা- সবকিছুর মধ্যে পাহাড়কে তুলে ধরতে চাই। নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি অন্যকে জানাতে চাই।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com