রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন

হারিয়ে যাচ্ছে আভিজাত্যের ঘোড়ার গাড়ি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে আভিজাত্যের ঐতিহাসিক ঘোড়ার গাড়ি। এক সময় ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়িতে কেবল রাজা-জমিদাররাই চড়তে পারত। এটি ছিল মূলত ধনাঢ্য পরিবারের মানুষের বাহন। এ প্রজন্মের কেউ বাস্তবে রাজা-বা রাজকুমারকে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলার দৃশ্য দেখেনি। তবে প্রায় সবাই দাদি-নানির কাছে রূপকথার গল্পের রাজা-রাজকুমারের ঘোড়ায় চড়ার কথা জানে। রূপকথার গল্পের রাজকুমার আসেন ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধে যাওয়ার দৃশ্য বাস্তবে আমাদের এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা না দেখলেও, কিছু ঘোড়ার গাড়ির আধুনিক সংস্করণ এখনো দেখা যায়। বিজ্ঞানের কল্যাণে ডিজেল-তেল মবিলের গাড়ির আধিক্যে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সেই ঘোড়ার গাড়ি।

ইতিহাস: জানা যায় ১৮৩০ সালে পুরান ঢাকায় সর্বপ্রথম ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। এই বাহনটি ছিল মূলত জমিদারদের। এই গাড়ি একসময় আর্মেনীয়দের ব্যবসার মাল টানার কাজে ব্যবহূত হতো। এরপর নবাবি শাসনামলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বর্তমান রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলে জ্ঞান চর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার প্রভাবে এ অঞ্চল পরিচিত ছিল। ধারণা করা হয়, বৈদিক যুগ থেকে ভাওয়াল ও সোনারগাঁও রাজধানী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী। বিক্রমপুর ছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজধানী। ঐ এলাকায় বাংলার বহু কীর্তিমান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে। সে সময় থেকেই যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহূত ঘোড়ার গাড়ি। যা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

কেমন এই ঘোড়ার গাড়ি :এ প্রজন্মের কেউ হয়তো ঠিকভাবে বলতেও পারবে না ‘ঘোড়ার গাড়ি’ দেখতে কেমন।  সহজ কথায় মূলত ঘোড়া দিয়ে চালিত গাড়িই ‘ঘোড়ার গাড়ি’ নামে পরিচিত। এই গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট। আগের সেই ঘোড়ার গাড়ি—বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তৈরি হতো। একটি বাঁশের দুই পাশে দুটি চাকা থাকত। আর চাকার ওপরে বিছানো থাকত বসার জায়গা। কোনো কোনো গাড়ির বসার জায়গার ওপরে ছাউনি দেওয়া থাকত। গাড়ির সামনের দিকে থাকত একটি পুরু বাঁশ, যার নাম ‘জোয়াল’। সেই জোয়ালের দুই পাশে দুটি ঘোড়া গাড়িটি টানত। ঘোড়ার লালনপালন ব্যয়বহুল হওয়ায়, গাড়ির সামনের অংশের পরিবর্তন করে, একটি ঘোড়া দিয়ে গাড়ি টানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই গাড়ির সামনের অংশে বসেন চালক। যার নাম—গাড়োয়ান বা গাড়িয়াল। আর গাড়ির পেছনের অংশে বসেন যাত্রীরা।

রাজধানীতে মাঝেমধ্যে এই ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে। রাজধানীর গুলিস্থানে কিছু ঘোড়ার গাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখতে এই ঘোড়ার গাড়ি চালান বলে জানা যায়। কথা হয় একজন ঘোড়ার গাড়ির চালকের সঙ্গে। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কে ছুটির দিন কিংবা কোনো বিশেষ দিনে দেখা যায় এই ঘোড়ার গাড়ি। গাড়ির চালক আশরাফ আলী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা চালাত এই গাড়ি। তখন আমাদের অনেকগুলো ঘোড়া ছিল। কিন্তু ঘোড়ার খাবারের দাম বাড়ায়, একটা একটা করে ঘোড়া বিক্রি করে এই ব্যবসা ছোট করেছি। এখন আছে কেবল একটি ঘোড়া। আমিই চালাই, আমার ছেলে লেখাপড়া করে, সে এই কাজ করতে চায় না। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষের ঘোড়ার গাড়ি এখানেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। আমার পরিবার এই গাড়ি ও ঘোড়া বিক্রি করে দিতে বলে, কিন্তু মায়ায় পড়ে ঘোড়া ও গাড়ি রেখে দিয়েছি, লাভ কিছু নাই, তবুও চালাই শখের বশে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com