ওই সময় দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, এনামুল হকের মালিকানাধীন লিমিটেড কম্পানি, প্রপ্রাইটারশিপ ও পার্টনারশিপে থাকা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করা হয়। এ ছাড়া এনা প্রপার্টিজ, সালেহা-ইমারত কোল্ড স্টোরেজ, এনা-ডুঙ্গা লিজিং, নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড, এনা ইন্টারন্যাশনাল, এনা কারস, এনা এনার্জি লিমিটেডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর শেয়ার বা মালিকানার বিষয়টিও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি।
সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নেও এনামুল হক সম্পদের তথ্য গোপন করেছিলেন। তাঁর নামে ১৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছিল সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তবে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ), রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পিপলস লিজিং কম্পানি, ব্যাংক আল-ফালাহ, ব্র্যাক-ডেল্টা হাউজিং, রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার, বাগমারা, নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, নাটোর সাবরেজিস্ট্রার, ঢাকার ১৩টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে এনামুল হক এবং তাঁর স্ত্রী তহুরা হকের নামে অর্থ ও স্থাবর সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে।
সম্পদ গোপন করা ছাড়াও সাবেক এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে নারী কেলেঙ্কারির বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে। গত নির্বাচনের আগে ও পরে দুই নারীর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ ফোনালাপের রেকর্ড নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে আয়েশা আক্তার লিজা নামের এক নারীকে বিয়ে করে পরে তালাক দেন।
আক্তার হোসেন নামে বাগমারার এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, ‘এনামুলের বিরুদ্ধে বাগমারায় ইটের ভাটা ও জমি দখলের অভিযোগের শেষ নেই। সাবেক এই এমপি নৈশ প্রহরী, স্কুল-কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, তদবির বাণিজ্য, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যেও পটু ছিলেন।’
দুর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাবেক এমপি এনামুল।’ এ নিয়ে কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে আদালতের জব্দ করা সম্পত্তি দখলের অভিযোগও উঠেছে সাবেক এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে। জমির মালিক ও মেট্রো হোমস লিমিটেডের মধ্যে মামলা জটিলতার সুযোগে ওই জমি দখল করেন এনামুল। মেট্রো হোমসের তত্ত্বাবধানে নির্মীয়মাণ একটি বাণিজ্যিক ভবন ও জায়গা আদালত কর্তৃক জব্দ ও স্থিতাবস্থার আদেশ থাকার পরও এনামুল হকের এনা গ্রুপ ওই জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করে। মেট্রো হোমসের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম এই অভিযোগে করেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে সাবেক এমপি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মতো এনামুলও আত্মগোপনে আছেন।