শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

হাওরের রূপ টানছে পর্যটক

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন এলাকা হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালের কয়েক মাস কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলরাশি মেলে ধরে পর্যটন এলাকার মোহনীয় রূপ। এ ছাড়া হাওর অঞ্চল জুড়ে যে শত শত ছোট গ্রাম অথৈ জলরাশির বুকে জেগে আছে, তাতে মনে হবে এটি যেন একটি আলাদা দ্বীপরাষ্ট্র।

হাওরের কাদাজলে বেড়ে ওঠা মোঃ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে হাওরের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে যুক্ত করে সাবমারসিবল আরসিসি রাস্তার পাশাপাশি হাওরের বুকে গড়ে তুললেন প্রায় ৩০ কিলোমিটার হাইওয়ে। নাম ‘অলওয়েদার রোড’। পাল্টে গেল হাওরের চেহারা, সূচনা হলো যুগান্তকারী যোগাযোগব্যবস্থার। এই সড়ক ও ২২টি দৃষ্টিনন্দন সেতু হাওরের সৌন্দর্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল। বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলের অবিচ্ছিন্ন জলরাশিকে সাগরের মতো মনে হয়, তখন এই সড়কের সৌন্দর্যে অভিভূত হতে হয়। ফলে কয়েক বছর ধরে দেশের নানা প্রান্তের মানুষের মধ্যে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের এক দুর্নিবার আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে বর্ষাকালের চারটি মাস হাওরের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক রূপ যেন অনাবিল সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরে। তখন দূরদূরান্তের মানুষ ছুটে আসে হাওরে। হাওরের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত করিমগঞ্জের বালিখলা ঘাট, চামড়া ঘাট, নিকলীর বেড়িবাঁধ ও বাজিতপুরের পাটলি ঘাট বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। শত শত রংবেরঙের ট্রলার সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা থাকে। পর্যটকরা সেগুলো দিন চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বিস্তীর্ণ হাওরে ঘুরে বেড়ান। ট্রলারভেদে ভাড়া ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন পর্যটকের সমাগম বেশি। গত শুক্রবার বালিখলা ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পর্যটক এসেছেন হাওর দর্শনে। এসেছে বিভিন্ন বাইকার গ্রুপ। তারা ট্রলারে বাইক তুলে নিয়ে যাচ্ছে হাওরের হাইওয়েতে ঘুরে বেড়াবে বলে। সাভার থেকে এসেছিল ‘ইউ লি গ্রুপ লিমিটেড’ নামে একটি কোরীয় ক্যাপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ৮০ জন প্রতিনিধি। সবাই লাল ক্যাপ আর সাদা গেঞ্জি পরিহিত। এ দলের সদস্য সাকিব জানালেন, তাদের হাওর ভ্রমণের পুরো খরচ কোম্পানি বহন করেছে। তারা সবাই এদিনই প্রথম হাওর দেখতে এসেছেন। দুটি ট্রলার নিয়ে তারা হাওরে ঘুরতে গেলেন।

মিঠামইনের ট্রলার মাঝি মতি মিয়া আর ইটনার মাঝি আব্দুল খালেক জানান, তারা বর্ষাকালে চুক্তিতে ট্রলার চালান। মতি মিয়ার ট্রলারের ধারণক্ষমতা ১০০ জন। বালিখলা থেকে মিঠামইন যাওয়া-আসার ভাড়া নেন ৬ হাজার টাকা। আব্দুল খালেকের ট্রলারের ধারণক্ষমতা ৬০ জন। বালিখলা থেকে ইটনার ভাড়া নেন ৪ হাজার টাকা। বালিখলা থেকে অন্তত ৪০০ ট্রলার যাতায়াত করে। এ রকম নিয়মিত আয় হয় কেবল বর্ষাকালের চার মাস। আবার কিছু স্পিডবোটও চলাচল করে। একটি স্পিডবোটে ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী বহন করা যায়। বালিখলা থেকে মিঠামইন পর্যন্ত প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।

শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি নেমে যায়। হাওরের আকর্ষণ কমে যায়। এখন বর্ষার পানিও অনেকটা কমে গেছে। এ সপ্তাহ শেষে পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস আছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান। তখন হাওরের সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com