কেবল ভিয়েতনাম নয়, বিশ্বজুড়েই চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত হা লং বে বা হা লং উপসাগর। ভিয়েতনামী শব্দ ‘হা লং’ অর্থ ‘ভূমিতে নেমে আসা ড্রাগন।’ ভিয়েতনামবাসীরা এই উপসাগরকে ভিন হা লং নামে ডাকে। হা লং বে’কে নিয়ে স্থানীয় একটি প্রবাদও চালু আছে। ভিয়েতনামবাসীরা যখন দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে তখন দস্যুদের সঙ্গে তাদের প্রায় সময়ই যুদ্ধ বাধে। দস্যুদের থেকে রক্ষার জন্য সে সময় ঈশ্বর রক্ষাকর্তা হিসেবে একটি ড্রাগন পরিবারকে পাঠায়। ড্রাগনদের মুখের থুথু থেকে মণি-মানিক্য নির্গত হয়ে সাগরে পড়ে। মুক্তাগুলো সাগরে ছড়িয়ে আছে আর পাথরগুলো পরস্পর একত্রিত হয়ে দস্যুদের প্রতিরক্ষা ব্যুজ্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন দস্যুদের জাহাজ আক্রমণ করতে আসে তখন পাহাড়গুলোতে এবং পাহাড়কে পাশ কেটে যেতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের পরে ড্রাগনরা এই শান্তিময় স্থানে বাস করার ইচ্ছা পোষণ করে। যেখানে মা ড্রাগনরা অবতরণ করেছে, সেই স্থানের নাম হয়েছে ‘হা লং’ আর যেখানে শিশু ড্রাগনরা মায়ের সাথে থাকতো, সেই স্থানের নাম হয়েছে ‘বাই তু লং দ্বীপ।’
কল্পকাহিনী যাই থাকুক এই উপসাগরকে ঘিরে, এর সৌন্দর্য নিয়ে কারোর কোনও সংশয় নেই। সামনের কয়েকটা দিন আমাদের কাটবে হা লং উপসাগর ঘেরা শহরেই। এবারও আমরা উঠেছি হোস্টেলে। হা লং পার্টি হোস্টেলে ব্যাকপ্যাক রেখে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। সেদিন আর সাগর দেখার সময় নেই। ফলে ঘুরে দেখা যাক শহর।
হোস্টেল থেকে বের হয়ে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথে চলে গেলাম সানওয়ার্ল্ডের বিশাল পার্কে। পার্কে ঢুকেই কোনোদিকে না তাকিয়ে ক্যাবল কারের টিকিট করে ফেললাম। বেশ আরাম করে উপর থেকে শহর দেখা যাবে। ক্যাবল কার উপরে উঠতেই বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল আমাদের মুখ। যতদূর চোখ যায় সাগর। দূরে পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। সাগর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শহুরে সভ্যতা। শহরের গাড়ি, ব্রিজ, সমুদ্র, পাহাড় দেখতে দেখতে কাটলো আমাদের জার্নি। বিশাল পার্কের একদিক থেকে উঠে নামলাম আরেক দিকে। নেমে দেখি প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। পার্কজুড়ে আলোর ছড়াছড়ি। কী সুন্দর করেই না সাজানো পুরো পার্কটি! মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। কোথাও বিশাল চরকি ঘুরপাক খাচ্ছে আলোর নাচন নিয়ে, কোথাও আলো ঝলমলে গেইট তৈরি করে রাখা পর্যটকদের জন্য। সেই গেইট দিয়ে প্রবেশ করলেই আবার পেয়ে যাবেন মুগ্ধ হওয়ার নতুন কোনও উপকরণ। লম্বা লম্বা সব সিঁড়ি সেজেছে আলোকসজ্জায়। নিচ থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই সিঁড়ি কোথায় গিয়ে থেমেছে। বিশাল পার্কটি ঘুরতে ঘুরতে আপনার পা দুটো ক্লান্ত হয়ে যাবে, কিন্তু মন ক্লান্ত হবে না। পাপেট শো, ভিডিও গেম রয়েছে এখানে সেখানে। রয়েছে সাজানো গোছানো কৃত্রিম পাহাড় ও লেক। দুই-আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পরও পুরোটা শেষ করতে না পেরে ক্ষান্ত দিয়ে বের হয়ে আসলাম আমরা।
গাইড ঘুরে ঘুরে দেখালেন পুরো গুহাটি। গুহা থেকে বের হয়ে আবারও ক্রুজে উঠলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক দ্বীপে নোঙর ফেললেন নাবিক। জানলাম এখানে আমরা কায়াকিং করবো।
সিঁড়ি বাইছি তো বাইছিই। শেষ হওয়ার নাম নেই। ঘেমেনেয়ে একাকার আমরা। তবে উপরে ওঠার পর যে দৃশ্য দেখবেন, সেটা এই ক্লান্তি ধুয়েমুছে দেবে নিমিষেই- সেটা হলফ করে বলতে পারি।
জনমানুষের চিহ্ন না থাকা পাহাড়গুলো একসঙ্গে থেকেও যেন বড্ড একাকী। কারোর সঙ্গে যোগ নেই কারোর, নিভৃতে দাঁড়িয়ে হাজার বছর পার করে দেওয়া চুনাপাথরের এসব পাহাড়ই কিন্তু বাড়িয়ে দিয়েছে সাগরের সৌন্দর্য। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন ভাসছে ছোট-বড় সবুজ রঙের অসংখ্য দ্বীপ।
পরদিন আবার নতুন শহর ডা নাং- এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। অপরুপ সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চে ঠাসা ডা নাং শহর ভ্রমণের গল্প তোলা থাকলো পরের পর্বের জন্য।
ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।
অফিস : লেকসিটি কনকর্ড শপিং সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা।
ইমেইল : [email protected]
ওয়েবসাইট : www.cholojaai.com