বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

সড়ক পথে ভূটান

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ মে, ২০২১

মনোরম আর পরিপাটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কোন শহর দেখলে যে কারোরই মন ভরে যাবে। আপনিও যদি পাহাড় পছন্দ করেন তবে কোনো এক রোদ ঝলমল দিনে হাতে কয়েকদিন সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন মনোরম পাহাড়ের দেশ ভূটানের উদ্দেশ্যে।

যেভাবে যাবেন
ভূটান ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা। এই ভিসা ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস (চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শাখাতেও পাওয়া যায়) থেকে নিতে পারেন। অন্যদিকে শ্যামলী বাসের টিকেটও অগ্রিমই করে রাখতে হবে। কারণ, এই বাসের টিকেট ট্রানজিট ভিসার কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হয়। ঢাকার আরামবাগ থেকে শ্যামলি পরিবহণের বাস ছাড়ে রাত ৮টায় এবং কল্যাণপুর থেকে রাত ৯টায়।

এরপর ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার বা টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিন। ও হ্যাঁ, ডলার এক্সচেঞ্জের রসিদ নিয়ে নিতে ভুলবেন না কিন্তু। পরে দরকার পড়তে পারে আপনার। ইমিগ্রেশন আর ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ শেষ হলে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে অপেক্ষারত শ্যামলী পরিবহণের বাসে উঠতে হবে। তারপর ময়নাগুড়ি নামক জায়গায় নেমে যেকোন একটা লোকাল বাসে উঠলেই সোজা হাসিমারা। এখানে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫০ রুপি করে। সেখান থেকে অটোতে করে জয়গাও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) যার ভাড়া জনপ্রতি ৭ রুপি করে। এত ঝামেলা না চাইলে, আপনি ট্যাক্সি করে চ্যাংড়াবান্ধা টু জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস যেতে পারেন। এতে ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপির মতো

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (পর্ব-১)

মনে রাখবেন, ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস শুধু বাংলাদেশি আর বিদেশিদের জন্য সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কোনো সরকারি বন্ধ নেই। ভূটানের লোকজন বাংলাদেশিদের খুবই সম্মান করেন। তবে ইমিগ্রেশন অফিসে আমাদেরকে বলেছিলেন, কিছু বাংলাদেশিরা শুধু পাসপোর্টে সিল লাগানোর জন্য অনেক দিনের ভিসা নেয় আর এক-দু’দিন পরই ফিরে আসে। আমাদের মাঝে অনেকের এই আচরণের কথা শুনলে আসলেই ভীষণ খারাপ লাগে। এভাবে করে আমরাই ওদের বিশ্বাস আর সম্মানের জায়গাটা নষ্ট করছি।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (পর্ব-১)

ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অন-অ্যারিভ্যাল ভিসা নিয়ে আপনি চার সিটের একটি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন ১,৮০০ রুপি দিয়ে যা সোজা চলে যায় থিম্পু। তবে মনে রাখবেন, অবশ্যই দর-দাম করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে আপনাকে। ড্রাইভার বেছে নিতে পারেন নেপালি অথবা ভুটানি। এদের আচরণ খুব আন্তরিক। তাই পরবর্তীকালে আপনি যে ক’দিন ভূটানে থাকবেন এদের ট্যাক্সিতে করেই ঘুরতে পারবেন। তাছাড়া সারাদিনের জন্যও ওদের গাড়িটি ভাড়া নিতে পারেন চাইলে। সারাদিনের জন্য নিলে খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ১১ হাজার রুপি। সুবিধা হচ্ছে এসব ড্রাইভার খুব ভালো ইংরেজি আর হিন্দি দুটোই জানে। তাছাড়া তারা গাইড হিসেবেও খুবই মিশুক ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

মনে রাখা ভালো ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু কেউ চাইলে বাসেও যেতে পারবেন। শেষ বাস ছেড়ে যায় বিকেল সাড়ে চারটায়। এর ভাড়া ২৪০ রুপি আর সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। চাইলে আগে থেকেই একটা হোটেলে রুম বুক করে রাখতে পারেন। কারণ, ভুটানে সব দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তাই হোটেল বা রুম ঠিক না করে রাখলে আর রাতের খাবার সেরে না নিলে পরে বিপদে পড়তে পারেন।

কোথায় থাকবেন 
ভূটানে দামি, কমদামি সব ধরনেরই হোটেল আছে। কিন্তু হোটেলে ওঠার সময় দামাদামি করে উঠতে ভুলবেন না। হোটেল ভাড়া পড়বে ৭০০-৮০০ রুপি থেকে ১৫ হাজার রুপি পর্যন্ত। মোটামুটি মানের হোটেল চাইলে  দিনপ্রতি সর্বনিম্ন ৮০০ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ১,৫৪০ রুপি দামের হোটেলে থাকতে পারেন। মোটামুটি সব হোটেলই পর্যটকদের জন্য নিরাপদ।

থিম্পু

যত সকাল সকাল বের হবেন, থিম্পু দেখার জন্য তত বেশি সময় পাবেন হাতে। তাই সকাল ৭ টার মধ্যে উঠে প্রস্তুত হয়ে ৮ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ুন। থিম্পুতে কোনো রেস্টুরেন্টই সকাল সাড়ে ৯টা-১০টার আগে খোলে না। আর নাস্তা তৈরি হতে হতে সাড়ে ১০টা। তাই কেউ আরও সকালে নাস্তা করতে চাইলে আগে থেকে শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখতে পারেন।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)

ভূটান গেলে ঘুরে দেখতে পারেন পুনাখা। মনে রাখা ভালো পুনাখা, হাভেলি, বুম্থাং এই জায়গাগুলোতে যেতে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হয়। সরকারি ছুটির দিনে ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ থাকে। এমন হলে আপনি চলে যেতে পারেন পারোতে। মনে করে দেওয়া ভালো থিম্পু থেকে পারোর রাস্তা অসম্ভব রকমের সুন্দর। তাই নিশ্চিত বলতে পারি সেই অসাধারণ সৌন্দর্য থেকে আপনি এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাতে পারবেন না

পারো পৌঁছার পর হোটেল ঠিকঠাক করে ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে যেতে পারেন টাইগার নেস্টে ওঠার উদ্দেশ্যে। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্টের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বা পার্কিং প্লেসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মতো। আর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড কাম পার্কিং প্লেস থেকে টাইগার নেস্টে পায়ে হেঁটে উঠতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। যাওয়াটা কষ্টকর হলেও, পৌঁছানোর পরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনার মনের যা অনুভূতি হবে তা লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)

পারো দেখা শেষ হলে বিকেলের মধ্যে থিম্পুতে ফিরে যেতে চেষ্টা করুণ। এরপর পুনাখা যাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে পারেন। রাতটা থিম্পুতেই কাটাতে পারেন। পরদিন ভোর থাকতে ঘুম থেকে উঠে রওনা দিতে পারেন পুনাখার উদ্দেশ্যে। নাস্তা পথেই সেরে নিতে পারেন। দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন পুনাখাতে।  আর যাওয়ার পথে নানা জায়গায় থেমে থেমে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্মৃতি ধরে রাখতে পারেন ক্যামেরায়। এরপর চাইলে বিকেলে থিম্পুতে ফিরে সেখানেই রাত কাটাতে পারেন।

পুনাখার চমৎকার যে জায়গাগুলো দেখলে আপনার মন ভরে যাবে তা হল দোচু-লা-পাস, পুনাখা ডিজহং, আর্চারি গ্রাউন্ড ইত্যাদি।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)

এরপর যেতে পারেন ফুন্টশোলিং দেখতে। দুপুর বারোটার দিকে রওনা দিলে বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে ফুন্টশোলিং পৌঁছে যেতে পারেন। বিকেল আর পুরো সন্ধ্যাটা ফুন্টশোলিংয়ে ঘুরেই কাটিয়ে দিতে পারেন। কেউ চাইলে রাতে ইন্ডিয়ান অংশে গিয়েকোন মুসলিম রেস্টুরেন্টে মজাদার গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ ডিনার করতে পারেন। চাইলে রাতেও থাকতে পারেন এখানে।

রাতটা ফুন্টশোলিং এ কাটিয়ে ভোর থাকতে ঘুম থেকে উঠে ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ডিপার্চার বা এক্সিট সিল নিতে হবে। তবে সকাল ছয়টা বা সাতটার দিকে গেলে প্রথমেই আপনাকে ৯টার পর আসতে বলতে পারে। সেক্ষেত্রে একবার ভালো করে অনুরোধ করতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে ডিপার্চার বা এক্সিট সিল দিয়ে দেবে। এখানে কাজ সেরে জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে আটটার মধ্যে। ওখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলে দুইভাবে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেন।

এক. জয়গাঁও থেকে হাসিমারা হয়ে ময়নাগুরি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা এবং তারপর বুড়িমারী। ঠিক যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থাকে যেভাবে গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে শিলিগুড়িতে শ্যামলী বাস কাউন্টারের সঙ্গে ফোন করে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি বুড়িমারী থেকে বাসে উঠবেন।

দুই. জয়গাঁও থেকে অটোতে করে আপনি চলে যান হাসিমারা রেলস্টেশনের উদ্দেশে। এখান থেকে শিলিগুড়ি যেতে কেউ ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বাসেও যেতে পারেন। সেজন্য আপনাকে জয়গাঁও থেকে সরাসরি বাসে উঠতে হবে। তবে এখানে খরচ বেশি পড়বে। হাসিমারা থেকে ট্রেন ১০টা ২০ মিনিটে আর ভাড়া জনপ্রতি ৬০ রুপি করে। টিকিটে কোনো বগি নির্দিষ্ট করা থাকে না। তাই চাইলেই একটা স্লিপার বগিতে উঠে পড়তে পারেন। ট্রেনে গেলে শিলিগুড়ি পৌঁছবেন দুপুর ২টার দিকে। চাইলে বিকেল ও সন্ধ্যায় এখান থেকে কিছু শপিংও করতে পারেন। রাতটাও চাইলে শিলিগুড়িতে কাটাতে পারেন।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)

কারও কাছে যদি ভারতীয় ট্রানজিট ভিসায় ভারতে অবস্থানকালের জন্য কিছুটা বেশি সময় পান, তাহলে এই সুযোগে দার্জিলিং থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। শিলিগুড়ির মানুষ বেশ আন্তরিক। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বেশ খোঁজখবর রাখে। সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমানের তারা খুব ভক্ত।

শিলিগুড়ি মালদাগুড়ি (শ্যামলী বাস কাউন্টার) থেকে বাস ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে (দিনের একমাত্র বাস যা রবিবার বন্ধ থাকে)। চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনে আসতে আসতে ৪টা বেজে যেতে পারে। তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারী সীমান্ত পার হলে দেখবেন বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিসের পাশেই অপেক্ষারত শ্যামলী পরিবহণের বাস। সেখানে থেকে এসি বা নন এসি বাসে ঢাকায় ফিরতে পারেন। কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড পৌঁছাতে পৌঁছাতে পরদিন সকাল ৭টা।

মনে রাখা ভালো যেভাবেই ফেরেন না কেন, ফিরে আসার বাসটিকিট শিলিগুড়িতে শ্যামলী বাস কাউন্টারে ফোন করে নিশ্চিত করতে হবে।

সড়ক পথে মায়াবী ভূটান (শেষ পর্ব)
খরচ
জনপ্রতি আপনার খরচ পড়বে ১৫-১৬ হাজার টাকা (শপিং ছাড়া)। উপরোক্ত জায়গা ছাড়াও হাভেলি ও বুম্থাং ঘুরলে খরচ কিছুটা বাড়বে। আর সবকিছুতে ট্যাক্সি বাদ দিয়ে পাবলিক বাসে ঘুরলে খরচ আরও কম পড়বে। কিন্তু তাতে সময় কিছুটা বেশি লাগবে।

কিছু সতর্কতা
এক. ভারতীয় ভিসাসহ পাসপোর্টের ফটোকপির কয়েক কপি, নিজের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কয়েকটি ফটকপি, আর কয়েকটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি রাখবেন নিজের কাছে।

দুই. ভুটানে সরকারি ছুটি অনেক বেশি, তাই সরকারি ছুটির লিস্ট দেখে ভ্রমণ প্লান করলে ভালো।

তিন. ভুটানে কোথাও কোনো মসজিদ ও মুসলিম রেস্টুরেন্ট আপনার চোখে পড়বে না। তবে ভুটানিজ ভাত, ডাল, সবজি খুবই মজার। তারপরও আপনার প্রয়োজন মনে হলে, বাংলাদেশ থেকেই কিছু, আচার, চাটনি, বিস্কুট নিয়ে যেতে পারেন।

চার. ভুটান শতভাগ ধূমপানমুক্ত দেশ। কিন্তু বার সবার জন্যই খোলা। কোথাও কোনো সিগারেট কিনতে পাবেন না, ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সিগারেট সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। যাওয়ার পরে যেকোন বারে, হোটেলে অথবা পাহাড়ে ধূমপান করতে পারবেন। কিন্তু ধরা পড়লে কোনো কথা নেই, নগদ মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে।

পাঁচ. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে গেলে ভালো হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com