সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

স্পেনের স্ট্রবেরি খামারে শোষণের শিকার অভিবাসীরা

  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

দক্ষিণ স্পেনের হুয়েলভার বিভিন্ন স্ট্রবেরি ক্ষেতে নিযুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের কাজ এবং জীবনমানের সমালোচনা করেছে কাউন্সিল অব ইউরোপের বিশেষজ্ঞদের একটি দল। কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ সত্ত্বেও শোষণের এই পরিস্থিতি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

১২ জুন প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের জন্য নেতিবাচক বলে মনে করছেন অভিবাসন ও অধিকার সংশ্লিষ্টরা।

মানবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে কাউন্সিল অব ইউরোপের বিশেষজ্ঞদের গ্রুপ (গ্রেটা) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনের হুয়েলভায় অবস্থিত বিভিন্ন স্ট্রবেরি ক্ষেতে কর্মরত অভিবাসীরা নিয়মিত শোষণের শিকার হচ্ছেন।

২০২২ সালের ৪ থেকে ৮ জুলাই দক্ষিণ স্পেনের বিভিন্ন স্ট্রবেরি ক্ষেতে কর্মরত অভিবাসীদের জীবনযাপনের অবস্থা পরিদর্শনের পর সর্বশেষ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কাউন্সিল অব ইউরোপে।

বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদনে ২৫টি অনানুষ্ঠানিক শিবিরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। যেখানে ৯৯ জন নারী অভিবাসীসহ ৯১৪ জন অভিবাসী অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে কর্মরত আছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই মরক্কো, মালি এবং ঘানা থেকে আসা অনথিভুক্ত অভিবাসী। এসব ব্যক্তিরা স্ট্রবেরি বাগান তৈরিতে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করেন।

সমীক্ষা অনুসারে, অভিবাসীদের এসব বাসস্থানে পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নেই।

অর্থয়ানের অভাবে হুমকির মুখে এনজিও কার্যক্রম

অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা রেড ক্রস, কারিতাস এবং স্প্যানিশ এনজিও এসিসিইএম এর সহায়তায় স্ট্রবেরি খামারগুলোতে কর্মরত অভিবাসীদের জন্য একটি যৌথ প্লাটফর্ম কাজ করছে। এটির মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা সরবরাহ করা হয়

তবে কাউন্সিল অব ইউরোপের বিশেষজ্ঞদের গ্রুপ (গ্রেটা) এর মতে, পর্যাপ্ত সরকারি অর্থায়নের অভাবে দীর্ঘ মেয়াদের এনজিওগুলোর কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

বিভিন্ন অভিবাসন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “স্ট্রবেরি খামারে কাজ করা অনেক অভিবাসী শ্রমিক শ্রম শোষণ এবং মানব পাচারের শিকার। বিশেষ করে তাদের দৈনিক কর্মঘণ্টা প্রায়ই আইনি সীমা অতিক্রম করে এবং ন্যূনতম মজুরির নিচে তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়। কখনও কখনও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় না। এছাড়া শিবিরগুলোতে নারী অভিবাসী শ্রমিকরা যৌন হয়রানিরও শিকার হয়ে থাকেন।’’

গ্রেটার বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনে, এসব ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা করেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্পেনের শ্রম পরিদর্শকদের অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আসার আদেশ নেই। শুধু সিভিল গার্ডের সেখানে যাওয়ার অধিকার আছে৷ তবে সেটা নির্ভর করে কোনো ঘটনার ওপর অথবা সন্তানসম্ভবা নারী বা ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের চিহ্নিত করা হয়।

স্পেনের প্রতিক্রিয়া

কাউন্সিল অব ইউরোপের প্রতিবেদনের জবাবে স্প্যানিশ সরকার বলেছে, হুয়েলভা অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা সচেতন। ২০২২ সালে শ্রম পরিদর্শনের কার্যালয় থেকে ৩২৯ বার সফর করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা সালে ছিল মাত্র ৫৭টি।

কর্তৃপক্ষের মতে, “মানবপাচারের অভিযোগ তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণকে শক্তিশালী করা হয়েছে। বিগত পাঁচ বছর ধরে অভিবাসী ও অংশীদারদের মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং ভাল অনুশীলনের জন্য বেশ কিছু নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়েছে।”

গ্রেটার প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েকদিন আগে ৭ জুন স্পেনের শ্রমমন্ত্রী ইয়োলান্ডা ডিয়াজ হুয়েলভা অঞ্চলের ডোনানা পরিদর্শন করে বলেন, “এই অঞ্চলের বেশিরভাগ ফল কোম্পানি কাজের ক্ষেত্রে আইনকে সম্মান করে। সেখানে শ্রমিকদের সঠিক কাজের পরিবেশ আছে।এটিও সত্য যে এমন কোম্পানি রয়েছে যা বলবৎ ত্রহাকা আইনকে সম্মান করে না।”

হুয়েলভা স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের একটি এলাকা। কৃষি ওই অঞ্চলের জিডিপির ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। স্ট্রবেরিসহ লাল ফলের চাষ হল একটি লাভজনক ব্যবসা। যা স্থানীয়ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বছরে প্রয়োজন এক লাখ লোক

ইন্টারফ্রেসার সংস্থার মতে, হুয়েলভা প্রদেশ প্রতি বছর তিন লাখ টন স্ট্রবেরি উৎপাদন করে, যা মোট স্প্যানিশ উৎপাদনের ৯০ শতাংশেরও বেশি।

অত্যন্ত গতিশীল এই খাতের জন্য যথেষ্ট কর্মী প্রয়োজন। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ফসল কাটার সময় এক লাখ কর্মীর প্রয়োজন হয়, যাদের বেশিরভাগই বিদেশি অভিবাসী কর্মী।

২০১৯ সালে হুয়েলভা অঞ্চলের মাত্র ৯৭০ জন নাগরিক ২৩ হাজার স্ট্রবেরি প্লটে কাজের আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এ অঞ্চলে বিদেশি শ্রমিক অপরিহার্য।

কর্তৃপক্ষ চলমান নিয়মে কাজ করার জন্য হাজার হাজার অভিবাসীকে স্বেচ্ছায় কাজের অনুমোদন দেয়। তবে তারা শ্রমিকদের শোচনীয় কাজের অবস্থা দেখেও চোখ বন্ধ রাখেন।

প্রায় দুই দশক ধরে একাধিক সংস্থা বারবার এসব অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে আসছে।

২০২০ সালের জুন মাসে প্রকাশিত কৃষি শ্রমিক ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুয়েলভায় স্ট্রবেরি কাটাতে যোগ দেয়া পাঁচ হাজার শ্রমিকের মধ্যে এক হাজার ৩০০ জনেরও বেশি অভিবাসী কুঁড়েঘর এবং অনানুষ্ঠানিক শিবিরে বসবাস করছিলেন।

তবে ২০ বছরেরও বেশি সময় পরে কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ একই রয়ে গেছে। আন্দালুসিয়া অ্যাকোজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোসে মিগুয়েল মোরালেস বলেন, “এই পরিস্থিতি সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের কারণে রয়ে গেছে। নির্দিষ্ট লোকদের অযোগ্য অবস্থায় রাখার জন্য এসব ব্যবস্থা টিকে আছে। আমরা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউরোপকে এটিকে এজেন্ডার একটি বিষয় করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছি।’’

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এনজিও এবং কর্মসংস্থানের বিষয় ইউরোপীয় কমিশনার নিকোলাস স্মিটের মধ্যে একটি বৈঠকের সময় এসব তথ্য তুলে ধরেছিলেন মোরালেস৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com