সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গত সোমবার ছিল বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ। হাজারো দর্শনার্থী সেদিন ভিড় জমিয়েছিলেন বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের নতুন একটি উড়োজাহাজের উড্ডয়ন দেখতে। রিয়াদের আকাশে খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বেগুনি রঙের সেই উড়োজাহাজের গায়ে লেখা রয়েছে ‘রিয়াদ এয়ার’। এটি সৌদি আরবের নতুন জাতীয় বিমান সংস্থা।
খালিজ টাইম ও টারবো নিউজের খবরে বলা হয়, গত সোমবার দেশটির কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে রিয়াদ এয়ারের নতুন বিমান সবার সামনে উন্মোচন করা হয়। উদ্বোধনের পর বিমানটি কিং আবদুল্লাহ ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট, বুলেভার্ড সিটিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এর উদ্দেশ্য ছিল, নতুন জাতীয় উড়োজাহাজকে একঝলক দেখিয়ে দেশটির জনসাধারণকে রোমাঞ্চিত করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৌদি রাজপরিবারের সদস্য ও সৌদি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার প্রিন্সেস হাইফা আল সৌদ ও রিয়াদ এয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) টনি ডগলাসসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় টনি ডগলাস জানান, রিয়াদ এয়ার ২০২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে।
সৌদি আরবের যুবরাজ ও দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিন সালমান গত মার্চে রিয়াদ এয়ার চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের বিকাশে সৌদি সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু মেগা বা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। রিয়াদ এয়ার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
বৈশ্বিক বিমান চলাচল ব্যবসায় সৌদি আরবের অবস্থান নতুন নয়। এত দিন সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ছিল দেশটির একমাত্র জাতীয় বিমান সংস্থা। এটি সৌদিয়া নামেও পরিচিত। সৌদিয়া ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৭৮ বছর পর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী আরও একটি বিমানসংস্থা পেল দেশটি। রিয়াদ এয়ার হচ্ছে সৌদি আরবের দ্বিতীয় জাতীয় বিমানসংস্থা।
সৌদিয়া মূলত দেশটির জেদ্দা শহরভিত্তিক বিমানসংস্থা। জেদ্দা ও পবিত্র শহর মক্কায় ব্যবসায়িক কাজে এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি ভালো বিমানসংস্থা হিসেবে সুনাম রয়েছে সৌদিয়ার। সেখানে রিয়াদ এয়ার সৌদি আরবের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা নিয়ে রিয়াদকে একটি বৈশ্বিক এয়ারলাইন হাব হিসেবে তৈরি করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
খালিজ টাইমস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে রিয়াদ এয়ার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে বিশ্বের ১০০টির বেশি গন্তব্যে যাতায়াত করবে। ভৌগোলিকভাবে সৌদি আরবের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে বিশ্বের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ আট ঘণ্টা ফ্লাইং সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। অর্থাৎ বিমান সংস্থাটি এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ—এই তিন মহাদেশকে সহজেই সংযুক্ত করতে পারবে। এতে দেশটির জাতীয় পরিবহন, সরবরাহ ও পর্যটন খাতে প্রবৃদ্ধি ঘটবে।
অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও বড় প্রতিযোগিতা তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো এমনিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় উড়োজাহাজ চলাচল কেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত। যেমন দুবাইয়ের এমিরেটস, আবুধাবির ইতিহাদ ও দোহার কাতার এয়ারওয়েজ বিশ্বের সব অঞ্চলেই জনপ্রিয়। এসব বিমান সংস্থার সঙ্গে নতুন প্রতিযোগী হিসেবে নাম লেখাল রিয়াদ এয়ার।
রিয়াদ এয়ারের সিইও টনি ডগলাসের বিমান চালনা, পরিবহন ও লজিস্টিকস খাতে ৪০ বছরের বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া রিয়াদ এয়ার ড্রিম টিমে সৌদি আরব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
সৌদিয়া প্রতিবছরই নতুন গন্তব্য ও উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এখন দেশটির নতুন আরেকটি জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থার আগমনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে সৌদিয়া।