সেশেলস (Seychelles) ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি ১১৫টি ছোট-বড় দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেশেলস তার স্বচ্ছ নীল জল, সাদা বালির সৈকত এবং অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।
সেশেলসের দ্বীপগুলো মূলত দুটি প্রধান গোষ্ঠীতে বিভক্ত:
১. গ্রানাইট দ্বীপপুঞ্জ: মূলত প্রধান দ্বীপ মাহে, প্রাসলিন এবং লা দিগ এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
2. প্রবাল দ্বীপপুঞ্জ: ছোট ছোট দ্বীপ, যা বেশিরভাগই জনমানবশূন্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ।
সেশেলসের জলবায়ু গ্রীষ্মপ্রধান ও আর্দ্র। সারা বছর ধরে এখানে উষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজ করে, যা পর্যটকদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
সেশেলসের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ইউরোপীয়রা ১৫০২ সালে প্রথম এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা। পরবর্তীতে ১৭৫৬ সালে ফরাসিরা এখানকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং দ্বীপের নামকরণ করে “সেশেলস”। তবে ১৭৯৪ সালে ব্রিটিশরা এটি দখল করে এবং ১৯৭৬ সালে সেশেলস স্বাধীনতা লাভ করে।
সেশেলসের সংস্কৃতিতে আফ্রিকান, ফরাসি, ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট। এখানকার জনগণ প্রধানত ক্রেওল ভাষায় কথা বলে, তবে ইংরেজি ও ফরাসিও সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত।
সেশেলসের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন ও মৎস্য শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
প্রাসলিন দ্বীপে অবস্থিত এই সৈকতকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর সৈকত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সেশেলসের রাজধানী ভিক্টোরিয়া একটি ছোট কিন্তু আকর্ষণীয় শহর, যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের ছোঁয়া স্পষ্ট।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই পার্কটি “কোকো ডি মের” গাছের জন্য বিখ্যাত।
এখানে সেশেলসের বিখ্যাত দৈত্যাকার কচ্ছপ দেখা যায়।
সেশেলসের খাবারে মূলত সামুদ্রিক মাছ, নারকেল, ভাত এবং মসলার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
সেশেলস প্রকৃতি ও সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নের গন্তব্য। এটি শুধু পর্যটনের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা নির্জনতা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য সেশেলস নিঃসন্দেহে এক আদর্শ স্থান।