শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন

সেন্টমার্টিন নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা কতটা সত্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একটা প্রবাল দ্বীপ পেয়েছি। কারণ পৃথিবীর সমুদ্রের তলদেশের মাত্র ০.১ ভাগ জায়গায় প্রবাল প্রাচীর কিংবা প্রবাল দ্বীপ রয়েছে। অথচ এই সামান্য জায়গাজুড়ে সমুদ্রের ২৫ ভাগ প্রাণী বাস করে।
এছাড়া ফ্লোরিডা, বাহামা, মেক্সিকো, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড তাদের প্রবাল দ্বীপগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে কারি কারি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।আমাদের সেন্টমার্টিন দ্বীপও নান্দনিকতা আর জীববৈচিত্রে অনন্য। এখানে চতুর্পাশে সাগর আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার। সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়া বন আর সাগরলতার মায়াময় স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় নিমিষেই।
ভাটায় জেগে ওঠা নান্দনিক প্রবাল প্রাচীর, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল, পশ্চিম বিচ থেকে দেখা সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য, সৈকতে বসে নরম কোমল স্নিগ্ধ বাতাসে গা জুড়িয়ে নেয়া, অগভীর সাগরের স্বচ্ছ নীল জলে দল বেঁধে বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার লোভে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে প্রায় ১ মিলিয়ন পর্যটক পদচিহ্ন আঁকেন স্বপ্নের দারুচিনি দ্বীপে।
সেন্টমার্টনের এই পর্যটন সেখানের সাড়ে সাত হাজার অধিবাসী সহ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত আরো হাজারো লোকের জীবিকার উৎস। কিন্তু পরিতাপের বিষয়-প্রবাল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে সেন্টমার্টিনে পর্যটক উপস্থিতি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থাকার পরও কীভাবে এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর কোথাও এমন অজুহাতে কোন প্রবাল দ্বীপে পর্যটন বাধাগ্রস্ত হয়নি।
পৃথিবীর অন্যান্য প্রবাল প্রাচীরের মত সেন্টমার্টিনের প্রবাল ও জীববৈচিত্র নষ্ট হবার অনেকগুলো কারণ রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রাকৃতিক। সেসবে মধ্যে মূল কারণ হলো সমুদ্রের উপরিভাগের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ায় প্রবাল তাদের গায়ে জড়িয়ে থাকা শ্যাওলা বা অ্যালজি ছেড়ে দিচ্ছে। এই শ্যাওলাগুলো প্রবালকে বর্ণিল করার পাশাপাশি পুষ্টিরও যোগানদাতা। শ্যাওলা ছেড়ে দেওয়ায় প্রবালগুলো সাদা হয়ে একসময় মরে যায়। এই প্রক্রিয়াকে কোরাল ব্লিচিং বলে।এছাড়া স্টারফিশ ও কিছু অমেরুদণ্ডি প্রাণী প্রবালের নরম অংশকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করায় প্রবালের বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত হয়। প্রবাল নষ্টের এইসব প্রাকৃতিক কারণ রুখে দেওয়া আমাদের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা আরো একটি যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, সেটি হল সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন বাধাঁগ্রস্থ হওয়া। এটিও একটি অমূলক ধারণা। কারণ সামুদ্রিক কচ্ছপেরা ডিম পাড়ার আগে উপযুক্ত যায়গার সন্ধান পেতে শত শত মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। সেন্টমার্টিনে সুবিধা করতে না পারলে ডিম পাড়তে তারা খুব সহজে টেকনাফ কিংবা মিয়ানমারের উপকূলে যেতে পারবে। এছাড়া সেন্টমার্টিনের আশেপাশে আরো কিছু দ্বীপ রয়েছে। প্রকৃতিগতভাবেই কচ্ছপেরা ডিম পাড়তে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যায়গা খুঁজে নেবে।

প্রবাল নষ্টের মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবাদে মৎস শিকার, পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ, প্রবাল সংগ্রহ ও বিক্রয়, মানুষের অবাদ বিচরণ ইত্যাদি। কিছু বিধিনিষেধ জারি ও সচেতনতা বৃদ্ধির মধ্যমেই এইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

তাই সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিষিদ্ধ কিংবা সীমিত করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ রক্ষায় অস্ট্রেলিয় সরকারের গৃহীত গুচ্ছ পদক্ষেপের কোথাও পর্যটক সীমিত করার কথা নেই। তেমনি নেই মালদ্বীপেও। তবে সেন্টমার্টিনে কেনো?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com