তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা বন্ধু-বান্ধব, পরিবার–পরিজন নিয়ে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন বনসংলগ্ন নদীতে। হরিণ ও বানরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আকর্ষণ করছে পর্যটকদের। সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী ও দুবলার চরে ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা। ’
এ উপলক্ষে খুলনা ও মোংলার হোটেল-মোটেলগুলো নতুন সাজে সেজেছে। থার্টিফার্স্ট নাইট ও নতুন বছর বরণ করতে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রূপসী বাংলা ট্যুরিজমের স্বত্ত্বাধিকারী কাজী মনজুর-উল-আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন খাতেও ধস নেমেছিল, কিন্তু বর্তমানে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এ শিল্প। কর্মব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে মানুষ শীতেও সুন্দরবনে ছুটছেন। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পরিচ্ছন্ন ভ্রমণের জন্য আমাদের রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টুরিস্ট ভ্যাসেল এম ভি জেরিন। এ ভ্যাসেলে করে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে আমরা যাই সুন্দরবন। ’
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে বনে দর্শনার্থীদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে জানান বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
সুন্দরবনের করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র, হারবারিয়া, কোকিলমনি, কটকা, হিরন পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধুর চর পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। পশুর নদী দিয়ে প্রতিদিন সারি সারি ট্যুরিস্ট বোট ও লঞ্চ সুন্দরবনে আসতে দেখা যায়।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র দেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। পর্যটকবাহী লঞ্চে করে দর্শনার্থীরা বনের গহীনে প্রবেশ করছেন। তবে করোনার কারণে বিদেশি পর্যটক খুবই কম। করমজলে যারা আসছেন তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীই বেশি। ’
যেভাবে যাবেন: যদি একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান, তাহলে করমজল পর্যটনকেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এছাড়া, সায়েদাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত প্লেনে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে।
মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, ভ্রমণে খরচও তুলনামূলক কম। খুলনার বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চ ঘাট থেকে সুন্দরবনে যাওয়া যায়।
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সাধারণত তিনদিন দু’রাতের প্যাকেজ থাকে। তারাই ভ্রমণের অনুমতিসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেবে। খুলনা ও মোংলায় এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর রয়েছে। ঢাকাতেও মিলবে। প্যাকেজের আওতায় সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, জামতলা সমুদ্রসৈকত, দুবলারচর, হিরণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে যাওয়ার। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনিও সময় করে বেড়িয়ে যেতে পারেন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে।