শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

সুইডেনের প্রত্যন্ত দ্বীপে পর্যটনের আনন্দ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪

লন্ডন, প্যারিস, নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহর অনেক পর্যটক আকর্ষণ করে। কিন্তু সুইডেনের কিছু মানুষ ক্ষুদ্র এক দ্বীপে ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে হামনেসকেয়ার দ্বীপ থেকে ছবির মতো সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু সেখানে দিন এভাবেও শুরু হতে পারে। ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে স্পিডবোটে করে ২০ মিনিটে দ্বীপে পৌঁছানো গেল। 

তবে সৌভাগ্যবশত হোটেল সে ক্ষেত্রে বর্ষাতি ধার দেয়। পর্যটক হিসেবে ইয়োহানা ও ইয়োনাস ভিবার্গ সেই যাত্রার পর বলেন, ‘অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তবে বেশ ভিজে গেছি। কিন্তু সুন্দর। উত্তাল আবহাওয়ার মাঝে ঢেউ ও পানির ছিটে। আমার কাছে জাদুময়।’

ইয়োহানা ও ইয়োনাস ইয়োটেবর্গ শহরের কাছে থাকেন। সবার আগে হোটেলে চেক-ইন করে বৃষ্টির পানি মুছে ফেলতে চান তাঁরা। আগে সেই ঘরে লাইটহাউস রক্ষী সপরিবারে বাস করতেন। সংরক্ষিত ভবনের তালিকাভুক্ত সেই স্থাপনা তাই সংস্কারের পরেও আগের মতোই রয়ে গেছে।

সে দিন আবহাওয়ারও দ্রুত উন্নতি হলো। দ্বীপটি ঘুরে দেখার জন্য ভালো সুযোগ। দ্বীপটি মাত্র আড়াই শ মিটার দীর্ঘ ও ১২০ মিটার চওড়া হওয়ায় ঘুরে দেখতে বেশি সময় লাগে না।

২০২০ সালে মিরইয়া লিলইয়া হাগ্সইয়ো পাটার নস্টার হোটেলটি খোলেন। আজ সেখানে ২৪ জন অতিথির থাকার জায়গা রয়েছে। অতীতে জাহাজডুবি কিছু নাবিক দ্বীপে আশ্রয় নিতেন। লিলইয়া বলেন, ‘কাছেই সমুদ্রে প্রায় এক হাজার জাহাজের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। সেই সব নিদর্শন উপকূলের এই অংশের ইতিহাস তুলে ধরে। এই লাইটহাউস তৈরির সিদ্ধান্তের পর সেটির নাম ‘পাটার নস্টার’ বা ‘আওয়ার ফাদার’ রাখা হলো। কারণ জাহাজের নাবিকেরা বিপজ্জনক এই টিলার দ্বীপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপদে থাকার জন্য প্রার্থনা করত। মার্সস্ট্রান্ড আর ইয়োটেবর্গ বাণিজ্যকেন্দ্রে যাওয়ার এটাই ছিল পথ।’

লাইটহাউসের উচ্চতা ৩২ মিটার। ১৮৬৮ সালে নির্মাণের সময়ে সেটা ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিদর্শন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সেটি জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তারপর লাইটহাউস বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাঁচ বছর ধরে সংস্কারের পর এখন সেখানকার ভিউইং প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরের দৃশ্য দেখা যায়। ইয়োহানা ও ইয়োনাস ভিবার্গ বলেন, ‘প্রকৃতি, সমুদ্র, বাতাসের সামনে নিজেদের ক্ষুদ্র মনে হয়। এখানে উঠতে বেশ বেগ পেতে হলেও সেই পরিশ্রম অবশ্যই সার্থক হয়েছে।’

চাইলে রাঁধুনি ইয়োহান বেংটসসনের সঙ্গে সমুদ্রে ডুব দিয়ে স্নংর্কেলিংও করা যায়। সেই সঙ্গে পানির মধ্যে নৈশভোজের উপকরণ খোঁজার সুযোগও রয়েছে। ইয়োহান বলেন, ‘আমরা অনেক জাতের দারুণ ট্যাং অ্যালজি তুলেছি। যেমন এগুলো স্পাগেটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। খুব সুন্দর। এখানে সুগার ট্যাং রয়েছে, সেটি দ্রুত বেড়ে ওঠে। অতি সুস্বাদু! আর আছে ফিংগার ট্যাং, সেটি দিয়ে আমি মিসো স্যুপ বানাই।’

এবার রান্নাঘরে যাওয়ার পালা। তালিকার প্রথম পদে অ্যালজির ভিত্তিতে এক স্টার্টার পরিবেশন করা হচ্ছে। হাতে একপাত্র ওয়াইন নিয়ে সারা দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। ইয়োহানা ভিবার্গের মতে, ‘এই আবহাওয়া, এই দ্বীপ, প্রথমদিকের বৃষ্টি থেকে শুরু করে উষ্ণতা, তারপর সূর্যাস্ত গোটা জায়গাটাকে অসাধারণ করে তুলেছে। লাইটহাউস ও সেখান থেকে জাদুময় দৃশ্য তো আছেই।’

খোলা আকাশের নিচে সুইডেনের সবচেয়ে প্রত্যন্ত হোটেলে দিন শেষ হচ্ছে। আজ সুইডেনের পশ্চিম উপকূলের সেরা পদ পরিবেশন করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com