এখনও বিশ্বের বেশ কিছু দেশ রয়েছে, সেই দেশগুলো যদি ভাঙতে শুরু করে তবে ছোট ছোট আরও অনেকগুলো দেশ হবে। সেই দেশগুলো যেমন আমেরিকা, রাশিয়া, গণচীন এবং ভারত। দেশগুলোর আয়তন এবং জনবহুলের দিক বিবেচনা করলে একের বেশি দেশ হতে পারে। কিন্তু না, দেশগুলো বেশ শক্তভাবে শাসিত হয়ে চলেছে।
অন্যদিকে পুরো ইউরোপকে যদি একত্রিত করা হয়, জনসংখ্যা এবং আয়তনে ওপরের দেশগুলোর চেয়ে ছোটো বই বড় হবে না কিন্তু তারপরও পুরো ইউরোপের ছোটো ছোটো দেশগুলো ভিন্ন ভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। দেশগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিলেমিশে থাকতে। যদিও তাদের ভাষা, শাসন পদ্ধতি, ফরেন পলিসি, নৈতিকতা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভিন্ন। সুইজারল্যান্ড যেমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত না তবে শেনজেন কান্ট্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
নিরপেক্ষতা হলো সুইজারল্যান্ডের বৈদেশিক নীতির একটি প্রধান নীতি যা নির্দেশ করে যে সুইজারল্যান্ড অন্য রাষ্ট্রের মধ্যে সশস্ত্র বা রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়িত নয়। এই নীতিটি বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শান্তির প্রচারের জন্য স্ব-চাপানো ডিজাইন যা অতীতে সুইডেনও বলেছে কিন্তু এখন বলছে ঐক্য ও সংহতি সুইডেনের জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।
আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের সম্ভাবনা বর্তমান বিশ্বে খুবই সম্ভব। এটা সবার কাছেই স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন পুতিন। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া কারিগরি এবং কৌশলগত দিক থেকে পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এমতাবস্থায় কখন শুনবো সুইজারল্যান্ডও জড়িয়ে গেছে কোনো এক জোটে।
হঠাৎ সুইজারল্যান্ড নিয়ে কেন এত কথা? কারণ আমি এখন বৃষ্টিভেজা মিষ্টি দুই রমণীর সঙ্গে দেশটি এবং দেশটির আশপাশের দেশগুলো ভ্রমণ করছি। ভ্রমণে দুই রমণীর একজন আমার সহধর্মিণী মারিয়া অন্যজন তার বোনের মেয়ে হেলেনা। তারা সমবয়সী, সেক্ষেত্রে ছোটবেলার বন্ধুও বটে। ৯ বছর বয়সে তারা দুজন সুইডেন ছেড়ে বসবাস করে আসছে স্পেন এবং সুইজারল্যান্ডে।
মারিয়া দীর্ঘ ৯ বছর স্পেনে বসবাস করার পর ফিরে আসে সুইডেনে অন্যদিকে হেলেনা সুইজারল্যান্ডেই থেকে যায়। আমি যখন হেলেনাকে চিনেছি (১৯৯২) তখন জানতাম না এসব কথা, চিনতাম না মারিয়াকেও। সে এক নতুন দেশে প্রথম দেখা হয়েছিল হেলেনার সঙ্গে। সে কাহিনি জানতে হলে পড়তে হবে (‘স্মৃতির জানালা খুলে’ লেখাটি গুগলে সার্চ করলে পাওয়া যাবে)।
আমি সুইজারল্যান্ডে জীবনে অনেকবার এসেছি তবে এবারের আসা বেশ ভিন্ন। প্রায় তিনযুগ পর এই প্রথম আমি, মারিয়া এবং হেলেনা একসঙ্গে ঘুরবো, এক বাসায় বসত করবো এবং অতীতকে সামনে এনে বর্তমানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের সময় কাটাবো। এটা কিন্তু বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা জুরিক এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করি গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় (১৫/৩/২০২৪)। হেলেনা নিজেই এসেছিল আমাদের রিসিভ করতে। তারপর থেকে আমরা তার সঙ্গেই আছি। শুরুতেই বলে রাখি হেলেনার স্বামী আমেরিকান, তাদের এক ছেলে এবং সবাই প্রতিষ্ঠিত। আমার সঙ্গে হেলেনার জীবনের স্বল্প সময়ের পরিচয় এ যুগে শুধু ‘just a drop of water’ অতএব সে এখন মারিয়ার ভাগ্নি হিসেবেই পরিচিত, সেক্ষেত্রে অতীত এখন ইতিহাস।
আজ এই মুহূর্তে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে হেলেনার বাড়ির ছাদের নিচে কাঁচের জানালার ওপর কখনও মুষলধারে কখনও রিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বাইরের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড, এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি কখন এবং কোথায় বেড়াতে যাবো। হঠাৎ এক কাপ চা নিয়ে হেলেনা আমাদের বিছানায় এসে হাজির। এসেই শুরু করলো নানা কথা যেমন আমাদের ঘুম কেমন হলো, কী করবো আজ, কোথায় যাবো ইত্যাদি।
মারিয়া উত্তরে বললো, আজ আমরা জুরিখ শহরে সময় কাটাবো সারাদিন এবং সন্ধ্যায় সবাই শহরে ডিনার শেরে তারপর বাসায় ফিরবো। কিছুক্ষণ পর সবাই শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কতদিন পর দেখা, যেতে যেতে পথে কত কথা। শহরে ঢুকে অলিগলি ঘোরা হলো, ভিডিও করলাম বাকিদের জন্য, যারা হয়তো কোনোদিন আসতে পারবে না। আবার অনেকে স্বপ্ন দেখবে এবং ভাববে একদিন আমার মতো বিশ্ব ঘুরবে, মূলত তাদের জন্য।
অনেকবার ভাবনায় ঢুকেছে বিশ্বের কত মানুষের রিজিক মেরে একদল দুর্নীতিবাজ এখানকার ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রেখেছে! জিনিসের যে দাম তাতে বুঝতে অসুবিধে হলো না। কারণ দুর্নীতির টাকা খরচ করতে সমস্যা কোথায়? আমরা কেনাকাটা করতে শহরে আসিনি, এসেছি মূলতে শহর ঘুরে দেখতে, শহরের কথা জানতে। শহর বয়ে চলেছে সিন নদী, কী চমৎকার পরিষ্কার পানি! দেখে বার বার বুড়িগঙ্গার কখা মনে পড়ে গেলো, কী অবস্থা বুড়িগঙ্গা নদীর?
হতভাগা নদীটার কত রূপ ছিল, অথচ সে রূপের চর্চা কেউ না করার কারণে আজ সেটি বিষন্ন, মৃত, দুর্গন্ধযুক্ত। দেখে মনে হয় কেউ তার জন্য ভালো কিছু করতে চায় না, কেবল তাকে নষ্টই করতে চায়। দেশটাই যেখানে নষ্ট হয়ে গেছে সেখানে নদীর কথা কী বলবো! সবাই দুর্নীতি-অনীতির অন্ধকারে দেশটিকে ঢেকে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে। জানি না বর্তমান কী অবস্থা দেশটির!
বুড়িগঙ্গার অভিশাপে দেশটি যেন পিছে পড়ে না থাকে সেদিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। বুড়িগঙ্গার পাড় দিয়ে নতুন প্রজন্ম ভালোবাসার সহপাঠীকে নিয়ে হাতে হাত ধরে হাঁটবে। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখবে নিজেদের দিয়ে, স্বপ্ন দেখবে সোনার বাংলা গড়ার অথচ মানুষ সেই বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে নাক বন্ধ করে তাড়াহুড়ো করে পাশ কেটে চলে যায়। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, হাজারও সমস্যা রয়েছে দেশে তারপরও অনেক উন্নতি হচ্ছে দেশে সেগুলো ভুললে চলবে না।
আমরা শহর ঘুরছি, কিছুক্ষণ পর ফিফার হেড অফিসের পাশ দিয়ে যেতে মনে পড়ে গেলো মেয়েদের ফুটবলে অংশগ্রহণ না করতে পারার কারণের কথা। কী করবো দুশ্চিন্তা করতে চাই না, তারপরও যখন সিন নদী, ফিফা অফিস নজর কেড়ে নিলো তখনই স্মৃতির জানালা খুলে গেলো আর মনে পড়ে গেলো বুড়িগঙ্গা আর দেশের ফুটবলের করুণ পরিণতির কথা। মনটা খারাপ হয়ে গেলো, শেষে শহর ছেড়ে জুরিখ লেকের দিকে চলে গেলাম। এখানে দেখি একঝাঁক রাজহাঁস, কিছুক্ষণ তাদের সাথে সময় কাটিয়ে লঞ্চে করে চলে গেলাম লেক ভ্রমণে।
ভ্রমণে আনন্দ, ভ্রমণে বিষাদ—হঠাৎ ভাবনায় এলো নতুন করে আবারও দেশের কথা। দেশ স্বাধীনের শুরুতেই আমরা বেছে নিয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আমার ‘সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালেবাসি’। সেই জাতীয় সংগীতের মূলমন্ত্র ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন আসলে কী ছিল? পাকিস্তানে ৯ মাস কারাবরণ শেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে, বাংলার মানুষ খেলবে, বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে, বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে—এই আমার সাধনা, এই আমার জীবনের কাম্য, আমি যেন এই কথা চিন্তা করেই মরতে পারি; এই আশীর্বাদ, এই দোয়া আপনারা আমাকে করবেন।’
আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর কথাগুলোর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে এবং সময়ের সঙ্গে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রূপান্তরিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় জেগে স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ লঞ্চ ঘাটে থেমে গেলো, দিনের ভ্রমণশেষে সন্ধ্যার অ্যাক্টিভিটি শুরু হলো। ডিনারে জড় হয়েছে আমাদের সঙ্গে হেলেনার স্বামী এবং ছেলে উদি। উদি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী।
একথা-সেকথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলাম তার প্রেমের কথা। শুরু হলো নতুন প্রজন্মের বিরহ-বিচ্ছেদসহ বর্তমানের রিলেশনশিপ নিয়ে কথা। অবাক হবার কিছু নেই, যদি ভাবি যে যুগে আমরা বসবাস করছি সে যুগে সবকিছু ডিজিটাল, সেক্ষেত্রে সম্পর্কও। ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মতো যাচাই বাছাই করে সম্পর্ক করছে সত্ত্বেও ঘর বাঁধতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। উদির প্রেমিকার সঙ্গে তিন বছরের ইনটিম সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কথায় মনে হলো তারা একে অপর থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে।
কারণ তারা জানে না আসলে তারা কী চায়! বাড়ির মুরব্বিরাই যখন কনফিউজড তখন তরুণদের কী দোষ! এই দেখো এদিকে রাত প্রায় ১২টা বাজে, তাড়াহুড়ো করে বাসায় ফিরলাম সকালে যেতে হবে রাইনফল ( Rheinfall ) দেখতে।
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মান্না দের সেই গান, ‘ঝরনা কেমনে হয় নদী, সাগর না ডাকে কভু যদি, তাই যেতে যেতে থামলো সে বয়ে চললো না’ – এ কথার মিল পাওয়া গেলো দেখে সুইজারল্যান্ডের উচু পাহাড় থেকে ঝর্ণা যখন জমে জমে ছোট বড় লেকে পরিণত হয়ে আছে। লিন্ডট লেক (Lindt lake) তারই একটা জলন্ত উদাহরণ।
তাছাড়াও অনেক ছোট বড় লেকে ভরা সুইজারল্যান্ড যা দেখলে সত্যি মন ভরে যায়। এই লিন্ডট লেকের নামে নামকরণ করা হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত সুইজ চকলেট যা কে না খেয়েছে? লিন্ডট চকলেট ছাড়াও কিন্তু তাদের আরেকটি চকলেট রয়েছে যা মূলত ডোমেস্টিক এবং বিশেষভাবে অর্ডার দিয়ে কেনা সম্ভব। স্প্রুংলি চকলেট সুইজারল্যান্ডের প্রিমিয়াম চকলেট নামে পরিচিত।
সুইজারল্যান্ডের পাহাড় উঁচু হওয়ায় এর মাথায় মেঘ আটকে যায়। পরে সেই মেঘ গলে ঝর্ণা হয়ে নেমে আসে নিচে এবং কখনও সে ঝরণা গিয়ে মেশে নদীতে এবং শেষে সাগরে। মজার ঘটনা হলো ইউরোপের সবচেয়ে বড় নদী যার নাম রাইনরিভার (Rhein river)। এই নদীটি বয়ে চলেছে ইউরোপের নানা দেশের মধ্য দিয়ে তার মধ্যে সুইজারল্যান্ড অন্যতম। রাইনরিভার যেতে যেতে পথে জুরিখের অদূরে এসে হঠাৎ ঢলে পড়েছে এবং প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।
মূলত সেই সৌন্দর্য দেখতেই আমি, মারিয়া এবং হেলেনা এসেছিলাম রাইনফল দেখতে। পুরো দিনটাই কেটেছিল মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। সারাদিন ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং মুহূর্তটির বর্ণনা করা, সে যেন ছিল আমার জন্য দায়িত্ব এবং কর্তব্য, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগানোর এক দায়ভার। কেউ আমাকে এ কাজটি করতে অনুরোধ করেনি, যা কিছু করেছি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা থেকে। দিনটি হবে বহু বছরের জন্য এক মধুময় স্মরণীয় ঘটনা যা বয়ে চলবে আমার বাকি জীবনে।
সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ের সৌন্দর্য যা শুধু মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নয় যেন পৃথিবীর প্যারাডাইস। পাহাড়ের গায়ে মস্তবড় একখানি মেঘ জমা বেঁধেছে। দূর থেকে মনে হলো মেঘ তো নয় আরেক সাদা পাহাড়, আস্তে আস্তে পাহাড়ের ওপরে উঠতে পথে আমি নিজেই অদৃশ্য হয়ে গেলাম। কোনো এক সময় মারিয়া এবং হেলেনারও দেখা নেই। আমরা সবাই হারিয়ে গেছি মেঘের আড়ালে। বেশ মনে পড়তে লাগলো মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে কথাটি।
আমরা সবাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিজে গেলাম। কী আর করা, নিচের দিকে নেমে শেষে একটি কান্ট্রি ক্লাবে ঢুকে গেলাম। সেখানে দেখি গ্রামের সকল মুরব্বি জমা হয়েছে। তারা নানা ধরনের এক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত, কেও খেলছে তাস, কেও খেলছে বিঙ্গ লট্টো, কেও নিউজপেপার হাতে নিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখছে। আমরা বাথরুমে গিয়ে ভেজা কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় পরে গাড়িতে করে নিচের দিকে নামতে শুরু করলাম।
সুইজারল্যান্ডের গ্রামের মানুষের মহানুভবতা দেখে মনে পড়ে গেলো আমার ছোটবেলার স্মৃতি। আমরা যখন ভিনদেশি কাউকে দেখেছি গ্রামে, তাকে ঘিরে কতই না রহস্যে মগ্ন হয়েছি। ভদ্রতা বা শালীনতার কোনো অভাব কিন্তু তখন ছিল না। গ্রামের মানুষ বিশ্বের সবখানেই দয়াময় হয় যা সুইজাল্যান্ডেও দেখলাম।
সুইজারল্যান্ড কিন্তু আয়তনে বাংলাদেশের অর্ধেক হবে, তার মধ্যে ৪০ শতাংশ ই বড় বড় পাহাড়। পাহাড়ের মাঝখানে ছোট বড় লেক, লেক ভরা পানি, পানি তো নয় যেন অমৃত। দেশটির চারপাশ দিয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশ এবং সে সকল দেশের ভাষা, কালচার, ট্র্যাডিশনজুড়ে পুরো দেশটি, তারপরও কী সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজেদের মতো করে বসবাসের উপযোগী করেছে যা দেখলে মন সত্যিই ভরে যায়।
কোনো বর্ডার গার্ড নেই, কেউ দেশের সম্পদ পাচার করে দেশটাকে দেউলিয়া করে ফেলছে না। বরং দেখে মনে হলো যেন বিশ্বমেলা বসেছে, কোন অংশ কত সুন্দর এবং কে কত উন্নত সেটাই দেখাতে তারা ব্যস্ত। তাছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি এবং অস্ট্রিয়ার সকল দিক ঘুরে দেখে মনে হলো প্রত্যেকেই যার যার দিক থেকে সেরাদের মধ্যে সেরা। কী চমৎকার পরিবেশ, তারপর প্রকৃতিও মাশাআল্লাহ রূপে-গুণে ভরপুর।
এতকিছুর মধ্যে মজার জিনিস যেটা সেটা ছিল এখানেও ফ্রান্সের মোনাকোর মতো ছোট একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ রয়েছে যার নাম লিচটেনস্টাইন (Liechtenstein) এবং দেশটির রাজধানীর নাম ভেদাস (Vedus )। দেশটির অফিসিয়াল ভাষা জার্মান। দেশটির মোট লোকসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার, এবং এর ৬৭% লিচটেনস্টাইনি, বাকি ১০% সুইজারল্যান্ড্যার, ৫.৭% অস্ট্রিয়ান, ৩.৪% জার্মান, ৯.৯% ইতালীয় এবং অন্যান্য।
এছাড়াও প্রায় ২০ হাজার বিদেশি প্রতিদিন কাজের সুবাদে আশপাশের দেশ থেকে আসা যাওয়া করে। পুরো সুইজারল্যান্ড সত্যি একটি অপূর্ব সুন্দর দেশ তবে জিনিসপত্রের দাম খুব চড়া। এদের কাছে তেমন চড়া বলে মনে হলো না। কারণ সবারই ভালো বেতন, কিন্তু আমরা যারা ট্যুরিস্ট আমাদের পক্ষে এখানে বেশিদিন থাকা সম্ভব না। তারপর ছুটিও শেষ অতএব আগামীকাল দুপুরে সুইডেনের উদ্দেশ্যে আমাদেরকে রওনা দিতে হবে।
আজ আমাদের সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের চতুর্থ দিন। আজ হেলেনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের মূসহা (Moosach, Switzerland) নিয়ে যাবে। এক ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটের গাড়ি ভ্রমণ বটে, তবে চোখ বন্ধ করার কোনো উপায় ছিল না। পর্বতের পর পর্বত তারপর পাহাড় থেকে ঝর্ণা বয়ে যে পরিষ্কার পানি গড়িয়ে নিচে জমা হয়েছে তা দেখলেই কিন্তু মন ভরে যায়, তারপর কী চমৎকার পাহাড়ের দৃশ্য যা শুধু মন ভরানো সৌন্দর্য নয়, যেন পৃথিবীর প্যারাডাইস।
রহমান মৃধা