সপ্তাহান্তে কিংবা দিন কয়েক ছুটি হাতে বেরিয়ে পড়া বাঙালীদের ভ্রমণ তালিকার ওপরের দিকে থাকা সিলেটের স্থানীয়দের রয়েছে খাবারদাবারের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। তাই ঘোরার পাশাপাশি এসব খাবারের স্বাদ চেখে দেখাটা হতে পারে ভ্রমণের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। স্থানীয় কিছু খাবারের পাশাপাশি এখানকার দুটি হোটেল স্বল্প বাজেটে আদি সিলেটি রেসিপির খাবার পরিবেশনের জন্য বেশ বিখ্যাত। পানসী এবং পাঁচ ভাই নামের এই রেস্টুরেন্ট দুইটিতে প্রায় সকল স্থানীয় খাবারই পাওয়া যায় বেশ কম দামে।
সিলেটে আগত ভ্রমণপিয়াসুদের মাঝে নগরীর পানসী রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয়। সাতকরা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার ছাড়াও এখানে পাওয়া যাবে আখনির বিভিন্ন পদ। হাওড়ের চিতল মাছ, বোয়াল মাছ কিংবা ২০/২৫ রকমের ভর্তাও মিলবে আহারে। স্বল্প বাজেটে দৈনন্দিন খাবার পাওয়া যায় বলে সিলেট বেড়াতে আসা পর্যটকদের খাবারের তালিকায় থাকে পানসীর স্পেশাল চা এবং বিভিন্ন স্থানীয় স্বাদের খাবার। এছাড়া, সন্ধ্যা থেকে রাতে এখানে মিলবে বটি কাবাব, সিক কাবাব, জালিকাবাব, টিক্কা, গ্রিল, চিকেন ফ্রাইসহ অন্যান্য খাবার। এছাড়া এখানকার পানসী জুস কর্নার এবং আইসক্রিম পার্লারও বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে।
নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে ওসমানী মেডিকেলের পথ ধরে দুশ’ গজ দূরে এই রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। প্রায় সবসময়ই ভোজন রসিকদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। বাহারি ভর্তা, নানা জাতের মাছ- মাংস ছাড়াও নেহারি, সবজি, গিলা- কলিজা, গরুর হাড়ের বিভিন্ন আইটেম ইত্যাদি সবকিছুই মিলবে পছন্দ অনুযায়ী। তাই সিলেট ভ্রমণে এই রেস্টুরেন্টে হতেই পারে একবেলা তৃপ্তিদায়ক আহার। এছাড়াও সিলেটে এসে ভাল আখনি পোলাও খেতে চাইলে যেতে হবে নগরীর পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে। রান্নায় সিলেটিদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের হাত ধরে জন্ম নেয়া কিছু খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল এই লেখায়।
সিলেটের রসনাবিলাসের শীর্ষে থাকবে সাতকরা দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস। টক-মিষ্টি লেবুজাতীয় এই সাতকরায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। জানা যায়, সাতকরার জন্ম ভারতের আসামে। সেখান থেকে সিলেটে প্রবেশ এবং স্থানীয়দের খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে বহু আগেই। সাতকরা দিয়ে তৈরি মাংসের বিভিন্ন আইটেমের জন্য বিখ্যাত সিলেটের পূর্ব জিন্দাবাজারের হোটেল উন্দাল।
ঐতিহ্যবাহী আখনি
সিলেটের স্থানীয় খাবারের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই আখনি পোলাও। রমজানে এর বিশেষ কদর থাকলেও অন্য সময়েও এর চাহিদা কিছু কম নয়। আখনি মূলত পোলাও এর চাল দিয়ে তৈরি হয়। তাই সচরাচর একে আখনি পোলাও বলেই ডাকা হয়। এর সাথে গরু-খাসি কিংবা মুরগীর মাংস যোগ করে একে সেই নামে বিক্রি করা হয়। মাংসভেদে আখনি পরিচিতি পায় গরুর আখনি, খাসির আখনি প্রভৃতি নামে। এছাড়া আখনির তৈরি ভুনা খিচুড়িও বেশ জনপ্রিয় এখানকার বাসিন্দাদের কাছে।
জিন্দাবাজারে অবস্থিত পাঁচ ভাই হোটেলে আখনি বিরিয়ানি বা খিচুড়ির পাশাপাশি মিলবে বিখ্যাত কোয়েল পাখির রোস্ট হতে পারে একবেলা ভোজনের জন্য উপাদেয়। এছাড়া, এখানে স্বল্প বাজেটে মিলবে বিভিন্ন খাবার। বিভিন্ন ভর্তা ছাড়াও কাবাব কিংবা নানের দেখাও পাওয়া যাবে এখানে।
সিলেটের বিভিন্ন খাবারদাবারের মধ্যে আরেক ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে চুঙ্গা পিঠা। ভিজিয়ে রাখা বিরইন চাল নরম করে বাঁশের চুঙ্গায় ভরে খড়কুটো পুড়িয়ে এই পিঠা বানানো হয়। চুঙ্গা পিঠা খেজুরের গুড়, মালাই ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া হয়। শীতকালে কিংবা বিভিন্ন উপলক্ষে অন্যান্য পিঠার সাথে এই পিঠারও কদর বেড়ে যায়। এছাড়া শাহ পরান মাজারের সামনের মালাই চাও চা প্রেমীদের মন জয় করে নিতে পারে।