বিশ্বায়নের এ যুগে দেশ আর এখন কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আবদ্ধ নেই। বরং তা ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী। বলা হয়ে থাকে, সমগ্র পৃথিবী যেন এখন একটা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। আর সেই আদিকাল থেকেই মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিভ্রমণ করে চলেছে। এভাবেই দেশের বাইরে তৈরি হয়েছে তাদের বসতি। তৈরি হয়েছে দেশের বাইরে দেশ।
অস্ট্রেলিয়াতেও অনেক বাংলাদেশি বসবাস করেন। বিশেষ করে সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা এখন বেশ বড়। সেই জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গেই এখানে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের আদলে অনেক সুযোগ-সুবিধা। সিডনির লাকেম্বাকে বলা হয় একখণ্ড ঢাকা। লাকেম্বা স্টেশনের রেলওয়ে প্যারাডে সারি ধরে বাংলাদেশিদের দোকান। সপ্তাহান্তগুলোয় বাংলাদেশিরা এখানে ভিড় করেন খাবারের স্বাদ পরিবর্তন বা বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দিতে।
এ ছাড়া রকডেলে বসবাস করেন বাংলাদেশিদের অনেকেই। সেখানেও রকডেল স্টেশনের পাশেই আছে বাংলাদেশিদের অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ বসবাস করে সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমের সবার্ব মিন্টোতে। আরও ঠিক করে বললে ক্যাম্বেলটাউন এলাকায়। ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের অধীন অনেকগুলো সবার্বের একটি হচ্ছে মিন্টো।
ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে দেশ থেকে এসে সবাই শুরুতে লাকেম্বা বা রকডেল এলাকায় থাকেন। কারণ, এই দুটি এলাকা সিডনি শহরের কাছাকাছি। আবার এ দুই জায়গায় কাজও সহজে পাওয়া যায়। তাই প্রবাসজীবন শুরুর ট্রানজিশন সময়টাতে মানুষ এই এলাকাগুলোয় বসবাস করেন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন জীবনে স্থিরতা আসে, তখন সবাই একটা বাসা কিনে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
সেদিক দিয়ে মিন্টো এখন বাংলাদেশিদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। তাই হয়তোবা মিন্টোর বাড়িঘরের দাম সমগোত্রীয় অন্য যেকোনো সবার্বের তুলনায় অনেক বেশি। এখানে বাংলাদেশিদের জন্য দরকারি প্রায় সমস্ত সুযোগ-সুবিধাই আছে। একেবারে বাংলাদেশি দোকান থেকে শুরু করে স্থানীয় লাইব্রেরিতে বাংলা বই পর্যন্ত পাওয়া যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মিন্টো এখন যেন সিডনির বুকে একটা লিটল বাংলাদেশ।
প্রথমেই নজর দেওয়া যাক বাংলাদেশি দোকানের দিকে। মিন্টো স্টেশনের পাশেই মিন্টো রোডে এবং রেড ফার্ন রোডে রয়েছে বেশ কটি বাংলাদেশি দোকান। সেসব দোকানে বাংলাদেশের সমস্ত পণ্যই পাওয়া যায়। একটাই তফাত, জিনিসটা থাকে ফ্রোজেন। একটু তালিকা করা যাক। ফ্রোজেন শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কচুর লতি, শাপলা ফুলের ডাঁটা, লালশাক, এমনকি ফ্রোজেন তালের রস পর্যন্ত পাওয়া যায়। আর মাছের মধ্যে এমন সব মাছ পাওয়া যায়, যেগুলোর নাম এখন হয়তোবা বাংলাদেশের অনেক শহুরে অধিবাসীও জানেন না। ইলিশ, রুই, মৃগেল, কাতল, চিতল, কই, টাকি, আইড়, পুঁটি, সরপুঁটি, দাড়কিনা, শিং, মাগুর—কী নেই সেখানে! ফ্রোজেন মাংসের মধ্যে কবুতর, কোয়েল, হার্ড চিকেন, হাঁস—এগুলোর প্রায় সবই পাওয়া যায়। যেহেতু গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস এখানে সরাসরি পাওয়া যায়, তাই আর এগুলো আমদানি হয় না।
পাশাপাশি বাংলাদেশের কুলফি মালাই থেকে শুরু করে ডাবের পানি, তোকমার শরবত—সবই পাওয়া যায়। এ ছাড়া আছে বাংলাদেশের চিপস ও বিস্কুটের সমাহার। আর হেঁশেলের প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে সেখানে। সব প্রকার চাল, ডাল, মসলা, এমনকি শিলপাটা পর্যন্তও পাওয়া যায়। পাশাপাশি শলার ঝাড়ু, ফুলের ঝাড়ু—এগুলোও পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে যেটা দরকারি, সেই বদনাও এখানে পাওয়া যায়। আমার মনে আছে, আমরা এখানে আসার পর প্রথম প্রথম এখানকার বাগানে পানি দেওয়ার একটা পাত্র দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতাম। পরে একদিন বাংলাদেশি দোকানে বদনা পেয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। এ ছাড়া মিন্টো শপিং মলের পাশেই আছে আরও একটা বাংলাদেশি দোকান।
মিন্টোতে রয়েছে বেশ কয়টি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ। আছে ক্যাফেও। এ ছাড়া বাংলাদেশি মালিকানায় আছে অন্যান্য স্বাদের রেস্তোরাঁ। বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোয় জিবে জল আনা সব বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব রকমের পিঠাও পাওয়া যায় এসব রেস্তোরাঁয়। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ থাকে। ইদানীং সকালের বুফে নাশতা সবার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিকেল বা সন্ধ্যায় হালকা নাশতা বা কফি পাওয়া যায় ক্যাফেগুলোয়। সেখানে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ির পাশাপাশি পাওয়া যায় চা-কফি।
প্রায় প্রত্যেক বাংলাদেশির বাড়িতেই একখণ্ড সবজিবাগান আছে। এর বাইরে বাংলাদেশের সব তরতাজা সবজিও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা হয় লেপিংটনে। লেপিংটনের রামিনস ফার্ম সেই ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশি সবজির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। পাশাপাশি অনেক অস্ট্রেলিয়ান, উপজাতীয়, ভারতীয়, নেপালি এবং ফিজিয়ানরাও এখানে আসেন তরতাজা সবজির আশায়। রামিনস ফার্ম তাদের উদ্বৃত্ত সবজি বাংলাদেশি দোকানগুলোতেও সরবরাহ করেন। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন রকমের লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, শিম, ঢ্যাঁড়স, কচুশাক, কচু, কচুর লতি, শসা, ক্ষীরা, পুঁইশাক, লালশাক, বৈথার শাক, ধনেপাতা, উচ্ছে, টমেটো, মরিচ, বিভিন্ন রকমের বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কলমি শাক, মিষ্টিকুমড়ার ফুল, ডাঁটা শাক এমনকি বাঙ্গিও পাওয়া যায়। সপ্তাহান্তগুলোয় সবাই পরিবার নিয়ে এখানে ভিড় করেন। সবজির চাহিদার পাশাপাশি দেশে ফেলে আসা সবুজের স্পর্শও খুঁজে পান এখানে।
মিন্টোতেই আছে ২০ বছরের পুরোনো বাংলা ভাষার কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটা এখন পর্যন্ত তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পাঠ নেয়। বাংলা স্কুল প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় সব কটি জাতীয় দিবস যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে উদ্যাপন করে থাকে। অমর একুশে বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের বিজয় দিবসসহ সবই পালন করা হয় সেখানে। এ ছাড়া বার্ষিক পিঠা উৎসব বাঙালি ঐতিহ্যের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আর বার্ষিক বনভোজন যেন বাংলাদেশের চড়ুইভাতির ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল সরকারের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের অধীন পরিচালিত হয়। বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়া সরকারিভাবে এসব কার্যক্রমকে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে।
এ ছাড়া মিন্টোতে রয়েছে বাংলাদেশি প্রবাসী মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংস্থা ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টার ইনক’। মিন্টোর ইগল ভিউ রোডে রয়েছে এ সংস্থার কার্যালয়। সেখানে ওয়াক্তিয়া নামাজের পাশাপাশি জুম্মার নামাজ এবং তারাবির নামাজ পড়ানো হয়। এ ছাড়া এলাকার কেউ মারা গেলে তাঁর জানাজাও পড়ানো হয়। এখানে দুই ঈদের জামাতও অনুষ্ঠিত হয়। কখনো এক জামাতে জায়গার সংকুলান না হলে দুই বা ততোধিক জামাত করা হয়। ঈদের জামাতে সব বয়সের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নারীদের জন্য আলাদা কক্ষের সুব্যবস্থা আছে। নামাজ শেষে শিরনি হিসেবে থাকে বিভিন্ন রকমের খাবার। এখানে ঈদের নামাজ পড়লে মনে হয় না যে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় আছি। মনে হয়, আমরা বাংলাদেশের কোনো ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করছি। নামাজ শেষে ছোট–বড় সবাই যখন কোলাকুলি করে, তখন এক আবেগঘন ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
ওই এলাকায় বছরব্যাপী আয়োজন করা হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব আচার–অনুষ্ঠানও। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয় বাংলাদেশের পঞ্জিকার সঙ্গে মিলিয়ে। এ ছাড়া সরস্বতীপূজা ও কালীপূজারও আয়োজন করা হয়। সরস্বতীপূজায় উৎসব করে বাচ্চাদের হাতেখড়ি দেওয়ার চলও আছে এখানে। বেশ কয়টি সংগঠন এসব উৎসব উদ্যাপন করে থাকে। দুর্গাপূজার সময় এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখা হয় ঠিক বাংলাদেশের আদলে। আর সেখানে ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি প্রবাসী ছাড়াও স্থানীয় মানুষে অংশগ্রহণ করেন। সবাই মিলে পূজার প্রসাদ খাওয়াটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া মিন্টোতে আছে দুটি মন্দির। সেখানেও সারা বছর ধরে চলে বিভিন্ন প্রকারের পূজা–অর্চনা।
এখানে স্থানীয় লাইব্রেরিগুলোয় অন্যান্য ভাষার বইয়ের পাশাপাশি পাওয়া যায় বাংলা ভাষার বই। যে কেউ চাইলেই ধার নিয়ে পড়তে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার লাইব্রেরিতে বাংলা ভাষার বই পাওয়া যাওয়ার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে বাংলাভাষীদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ ছাড়া ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিবছর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেদিন অস্ট্রেলিয়ার পতাকার পাশাপাশি বাতাসে ওড়ে বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা। ইতিমধ্যেই ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলরদের মধ্যে বাংলাদেশিরা জায়গা করে নিয়েছেন। এত দিন মাত্র একজন বাংলাদেশি কাউন্সিলর ছিলেন। গত বছর দুজন বাংলাদেশি নিজ যোগ্যতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, মিন্টোতে অস্ট্রেলিয়ানদের পর সবচেয়ে বেশি বাস করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ। তাই এখানে বিকেলে হাঁটতে বের হলে বা পার্কে বেড়াতে গেলে আশপাশে বাংলাদেশিদের পাওয়া যায় সহজেই। আর পাড়াপ্রতিবেশীদের মধ্যেও অনেকেই বাংলাদেশি পাওয়া যায়। এতে বাংলাদেশের একটা অসাম্প্রদায়িক ও পরস্পর সহানুভূতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন উৎসবে–দাওয়াতে প্রতিবেশীদের দেখা পাওয়া যায়। এমনকি অনেক সময় ভালো কিছু রান্না হলেও প্রতিবেশীদের মধ্যে সেটা বিতরণ করা হয়। এর বাগানের সবজি ওর বাসায় যায়। আবার ওর বাসার তরকারি এর বাসায় আসে। স্টেশনের পাশের এরিকা লেনের দেয়ালে সভা পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতির চিত্র। আর অন্য পাশের শোভা পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতির চিত্র। আর পুরো ফুটপাতে বাংলাদেশের মতো আলপনা আঁকা। খেলার মাঠে দিন শেষে চলে দল বেঁধে ফুটবল খেলা। অনেক সময় বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা বৃষ্টির মধ্যে দল বেঁধে নেমে পড়ে ফুটবল খেলতে।
এ ছাড়া দিন শেষে বা সপ্তাহান্তে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা ক্যাফেতে জড়ো হয়ে আড্ডা দেন অনেক রাত পর্যন্ত। যেখানে মূল বিষয় থাকে বাংলাদেশের অবস্থা। প্রবাসীরা সবাই কমবেশি বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবেন। কারণ, সবারই শিকড়টা বাংলাদেশে গ্রোথিত। এ ছাড়া দল বেঁধে চলে বাংলা চলচ্চিত্র দেখা। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের এখন অনেক বড় বাজার বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা। সেদিক দিয়েও পিছিয়ে নেই ওই অঞ্চলের বাংলাদেশি বাসিন্দারা। বাংলাদেশি একাধিক চলচ্চিত্রের অনেক শো আয়োজন করা হয়েছে দর্শকসংখ্যার আধিক্যে। আসলে মায়ের সঙ্গে যেমন সন্তানের বন্ধন, দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশিদের থাকে তেমন বিনিসুতার বাঁধন। এ বাঁধন কখনো ছিঁড়ে যায় না, তারা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, সবার মনের কোণেই বেজে চলে সেই চিরচেনা সুর—‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।