বাঙালি খাবার থেকে ভিন্নতর হওয়ায় পাহাড়ি বা আদিবাসীদের খাবার বরাবরই আমাদের আগ্রহের কারণ। পাহাড়ে ঘুরতে গেলে তাই পর্যটকদের একটি সাধারণ কাজ হলো সেই এলাকার খাবারের সাথে পরিচিত হওয়া। পাহাড়ি খাবারের টানে তাই বলে ইচ্ছা হলেই তো আর পাহাড়ে ছুটে যাওয়া যায় না।
তাই পাহাড়ি খাবার না খেতে পাওয়ার দুঃখ ঘোচাতে ঢাকাতে স্থাপিত হয়েছে পাহাড়ি খাবারের রেস্টুরেন্ট। এতে করে সময়-সুযোগ-ইচ্ছার মিলন হলেই আপনি যেকোনো সময় খেয়ে আসতে পারেন আদিবাসীদের নিজস্ব খাবার। এমনই একটি রেস্টুরেন্ট হলো ঢাকার সিএইচটি এক্সপ্রেস রেস্টুরেন্ট।
সিএইচটি এক্সপ্রেস এর পুরো নাম হলো চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস এক্সপ্রেস। মিরপুর কাজীপাড়ায় পথচারী সেতুটির পাশে সামনেই পড়বে স্বপ্ন। স্বপ্ন’র পাশে দিয়ে যে গলি গেছে সেখানেই পাবেন পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ সিএইচটি এক্সপ্রেস। রেস্তোরাঁটি দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ২০১৭ সালে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে শুরু হলেও খাবারের সুনাম বৃদ্ধি পেলে ২০১৮ সালে সিএইচটি এক্সপ্রেস রেস্তোরাঁ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
স্বল্প পরিসরে সাজানো রেস্তোরাঁটি। প্যান এশিয়াটিক খাবারের সাথে পার্বত্য অঞ্চলের খাবারগুলোর সংমিশ্রণে সাজানো হয়েছে মেন্যু কার্ড। ব্যাম্বো চিকেন প্রতি প্লেট ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, পুরো বাঁশ ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, মারমা সম্প্রদায়ের স্পেশাল ব্রয়লার মুরগীর মাংস ও লাকসু সালাদ ১৫০ টাকা, কাঁকড়ার বিভিন্ন পদ (পদ প্রতি ১৫০ টাকা), ছুরি বা চিংড়ি মাছের তৈরি পদ ড্রাই ফিস (পদ প্রতি ১৮০ টাকা)। এছাড়া, আদিবাসীদের নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করা স্যুপ বা নুডলস বেশ জনপ্রিয় ও সুস্বাদু।
সিএইচটি-তে সেই নুডলস এর স্বাদ চেখে দেখতে পারেন। মুন্ডি (নুডলস এর নাম) পাওয়া যাবে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে, থুকপা (তিব্বতীয় অঞ্চলের স্যুপ) পাবেন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ১৮০ টাকা। মোটামুটি কম খরচে বিভিন্ন ধরণের পাহাড়ি খাবারের সাথে এখানে পরিচিত হওয়া যাবে। মেইন আইটেমের সাথে স্ন্যাকস হিসেবে পাওয়া যাবে গরু বা মুরগীর তিন ধরণের মমো ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, বিশেষ বার্গার ‘বাও’ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, নানান ধরণের ভর্তা ইত্যাদি।
রেস্তোরাঁর ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও রাখা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্বতার ছাপ। মাটির পাত্র, কাঠের ট্রে, বাঁশের ঝুড়ি, কলাপাতা—এমন সব প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে বানানো তৈজসপত্রেই পরিবেশিত হয় এখানকার পাহাড়ি স্বাদের আহার। চেয়ার-টেবিলগুলো কাঠের। আবার আরেকরকমের বসারও ব্যবস্থা আছে, তা হল মাটিতে মাদুর বিছানো আর তার সামনে নিচু টেবিল।
দেয়াল সাজানো হয়েছে চাকমা, মারমা, খাসিয়াদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক দিয়ে। এছাড়া দেয়াল আরও সাজানো হয়েছে চাকমা, মারমা, খাসিয়াদের নিজস্ব বর্ণমালা দিয়েও। এছাড়াও চোখে পড়বে বিখ্যাত চান্দের গাড়ির ছবি। যারা পাহাড়ে গিয়েছেন তারা অবশ্যই এই গাড়িটির সাথে পরিচিত, আর সেই অভিজ্ঞতাই আরও একবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে সিএইচটি এক্সপ্রেসে।
সূত্র : ট্রাভেল বাংলাদেশ