রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ৩৫ দিনে ইউরোপ দেখলেন এই দম্পতি

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর দেশে ভ্রমণ পৃথিবীজুড়েই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবছর দেশটি থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যান। যেমনটা গিয়েছিলেন জয়পুরের দম্পতি রুচিকা সামদান ও রোহিত নিয়াতি। পাঁচ সপ্তাহের স্মরণীয় এক যাত্রায় বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাবে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাঁরা ইউরোপের ১৫টি দেশ ঘুরে এসেছেন। দুজন মিলে এত কম খরচে কীভাবে দীর্ঘদিন ইউরোপে ঘুরে বেড়ালেন, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।

খুব কম টাকায় রুচিকা ও রোহিতের ইউরোপ ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে বুধবার একটি প্রতিবেদন ছেপেছে ভারতের ‘মিন্ট’ পত্রিকা। এতে জানানো হয়, একটি সতর্ক পরিকল্পনার মাধ্যমে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ওই দম্পতি। পুরো যাত্রায় তাঁদের খরচ হয়েছে মাত্র ৪ লাখ রুপি।

রুচিকা ও রোহিতের স্মরণীয় সেই যাত্রাটি শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের গ্রীষ্মে। দিল্লি থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে। ভ্রমণে তাঁদের প্রথম কৌশলটি ছিল সাশ্রয়ী ফ্লাইট এবং নৈসর্গিক ট্রেন ভ্রমণকে বেছে নেওয়া। এর ফলে একদিকে যেমন খরচ বেঁচেছে, অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং দুর্দান্ত সব দৃশ্যাবলির ভেতর দিয়ে রোমাঞ্চকর এক অভিযান শুরু হয়েছিল তাঁদের।

বিদেশ ভ্রমণে খরচ বাঁচানোর বিষয়ে রোহিত প্রাথমিক পরিকল্পনার ওপরই জোর দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। ১০ দিনের ট্রেন যাত্রাকে তাঁরা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন, যেন ইউরোপের বিভিন্ন শহরগামী বাজেট ফ্লাইটগুলোকে তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে ভ্রমণ করে মৌসুমি ছাড়ের মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের অর্ধেক খরচই বেঁচে গিয়েছিল।

শহরগুলোতে থাকার দু-এক দিনের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতেও বেশ কৌশলী ছিলেন রোহিত-রুচিকা দম্পতি। দেখা গেছে, তাঁরা ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, জার্মানির বার্লিন এবং ফ্রান্সের প্যারিসের মতো শহরগুলোতে থাকা বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনের বাসায় তাঁরা আতিথ্য নিয়েছেন। এভাবে তাঁরা তাঁদের সম্ভাব্য হোটেল খরচের ৭০ ভাগই বাঁচাতে পেরেছিলেন। এর ফলে একদিকে যেমন কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ ঘটেছে, তেমনি এর মাধ্যমে স্থানীয় অভিজ্ঞতাগুলোও আরও ভালো হয়েছে।

দীর্ঘ ভ্রমণে খাবারের খরচও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ক্ষেত্রে কৌশলী না হলে ভ্রমণ খরচ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। রুচিকা আর রোহিত অবশ্য বিষয়টি পরিচিত মানুষদের ঘরোয়া পার্টি কিংবা আড্ডাতেই সেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আর বাইরে খাবারের জন্য তাঁরা ‘দ্য ফর্ক’-এর মতো ইউরোপে জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যাপের সুবিধা নিয়েছিলেন। এর ফলে তাঁরা ডিসকাউন্টে স্থানীয় ঐতিহ্য মিশ্রিত খাবারের স্বাদ নিতে পেরেছেন।

শহরগুলোতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পারতপক্ষে ট্যাক্সি কিংবা বেশি খরচের যানবাহনে চড়েননি ওই দম্পতি। সব সময় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এতে ইউরোপের সাধারণ পরিবেশ এবং রীতিনীতিকে তাঁরা খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা হেঁটেও বহু পথ পাড়ি দিয়েছেন। দেখা গেছে, ইউরোপের বাতাস গায়ে লাগিয়ে তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার পদক্ষেপ ফেলেছেন।

ইউরোপের শহর থেকে শহরে পুরো যাত্রাজুড়ে তাঁরা নরওয়েতে সাগর আর উপত্যকার মিতালি, বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত পোল্যান্ডের ক্র্যাকো শহর কিংবা প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডের মতো বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে ভ্রমণ করেছেন। এই বিষয়গুলো প্রতিটি শহরের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। পুরো যাত্রায় বিনা মূল্যের হাঁটার অভিজ্ঞতাকেই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বলে মনে হয়েছে তাঁদের। এর ফলে তাঁরা আরও বেশি এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পেয়েছেন।

ভারত থেকে ডেনমার্ক পৌঁছানোর পর তাঁরা একে একে সুইডেন, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়া এবং সবশেষে ক্রোয়েশিয়ায় গিয়ে ভ্রমণের সমাপ্তি টানেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com