শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

সাইপ্রাস যাওয়ার ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

ভূমধ্যসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ। অনেকটা গীটার আকৃতির ছোট দ্বীপটা শুধু দ্বীপই নয়। একটা দেশও। নাম তার সাইপ্রাস। সাইপ্রাস নামের একটা দ্বীপ বা দেশ আছে তা অনেক বাংলাদেশীর কাছেই অজানা। তবুও এই দ্বীপ এ রয়েছে হাজারও বাংলাদেশীর বসবাস।

প্রথমে সাইপ্রাস সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ ছোট এই দ্বীপ দেশটি আয়তনে অনেক ছোট। আমাদের দেশের এক দশমাংশের মত। তারপরও এটা আবার সমান দুই ভাগে বিভক্ত। এক অংশ স্বাধীন দেশ সাইপ্রাস নামে পরিচিত। এখানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখের মত। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই বিদেশী। সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০৪ সালে ।মোট আয়তন ৯২৫১ বর্গ কিলোমিটার. তারও মধ্যে আবার ২ ভাবে বিভক্ত।

একটি রিপাবলিক অব সাইপ্রাস যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত।অন্য অংশ উত্তর সাইপ্রাস নামে পরিচিত হলেও অনেকে তূর্কী সাইপ্রাস হিসেবে জানে। কারন এটা তুরস্কের অধীনস্থ। ৬০% এরিয়া গ্রিক সাইপ্রাস এর দখলে র ৪০% এরিয়া উত্তর সাইপ্রাস বা নর্থ সাইপ্রাস এর অধীনে। ১৯৭৪ সালের যুদ্ধের পর দুই ভুখন্ড কে একত্রিত করতে অনেক কিছু হয় কিন্তু কেউ কারো প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজ পর্যন্ত বিভক্ত ই রয়ে গেল। উল্লেখ্য ইতিমধ্যে আমিওপারিতে “কেমন আছেন সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা?” এরকম একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছিলো, চাইলে এখানে ক্লিক করে আমাদের সেই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন। লেখাটি পড়ার পরেও যারা সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য আগ্রহী তারা নিন্মের বিস্তারিত পড়ে জেনে নিন।

কোন বাংলাদেশী নাগরিক সাইপ্রাস যেতে চাইলে তাকে অবশ্যই ভিসা নিতে হবে। ঢাকাস্থ কনস্যুলেট অফিস থেকে ভিসা ইস্যু করা হয়।

শর্ট স্টে বা ট্রাভেল ভিসা

অল্প সময়ের জন্য সাইপ্রাস যেতে চাইলে শর্ট স্টে বা ট্রাভেল ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এসব ভিসায় সর্বোচ্চ তিন মাস অবস্থান করা সম্ভব। একই ভ্রমণ ভিসায় একাধিকবার প্রবেশ করা যায় তবে সব মিলিয়ে তিন মাসের বেশি অবস্থান করা যাবে না।ব্যবসা বা অন্য কোন কারণে যাদের ঘন ঘন সাইপ্রাস যেতে হয় তারা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নিতে পারে। এসব ভিসার নিয়ম অনেকটা ট্রাভেল ভিসার মতই। সাধারণত এসব ভিসার মেয়াদ এক বছর হয়। তবে বিশেষ কিছু ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে এ মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

শর্ট স্টে ভিসা আবেদনের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে সরাসরি ভিসা আবেদন জমা দিতে হবে। কনস্যুলেট অফিসের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের বেশি হলে রেজিস্টার্ড ডাকেও ফেরত খামসহ আবেদন পাঠানোর সুযোগ থাকে। তবে কোন এলাকায় এভাবে আবেদনের সুযোগ আছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

যে মেয়াদের ভিসার জন্য আবেদন করা হচ্ছে পাসপোর্টের মেয়াদ তার চেয়ে অন্তত তিন মাস বেশি হতে হবে। তবে ভিসা মেয়াদের পরও অন্তত ছয় মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্টের ওপর জোর দেয়া হয়।ভ্রমণ সংক্রান্ত বুকিং প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।হোটেল রিজার্ভেশন নিশ্চিত করে হোটেল ম্যানেজারের পাঠানো ফ্যাক্স দেখাতে হবে।বন্ধু-বান্ধব বা আত্নীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাইপ্রাসে অবস্থানকারীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, পেশা ইত্যাদি উল্লেখ করে আমন্ত্রণ-পত্র পাঠাতে হবে।

এছাড়া নির্ধারিত ফর্মে ভ্রমণকারীর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাক্ষর করতে হবে।“সাইপ্রাস ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষমতা আছে”- এর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্রাভেলার্স চেক বা ক্রেডিট কার্ড লিমিট উল্লেখ করে দেয়া স্টেটমেন্ট দিতে হবে। নগদ অর্থকে আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয় না।চাকুরীজীবী হলে চাকুরীদাতার তরফ থেকে বেতন উল্লেখ করে সাইপ্রাস কনস্যুলেট বরাবর লেখা চিঠি প্রয়োজন হবে। ব্যবসায়ী বা এরকম ক্ষেত্রে সলিসিটর বা ব্যাংক ম্যানেজারের তরফে লেখা চিঠি দিতে হবে। আর শিক্ষার্থী হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে লেখা চিঠি প্রয়োজন হবে, যাতে শিক্ষার্থীর কোর্সের মেয়াদ, উপস্থিতি ইত্যাদি তথ্য থাকতে হবে।হোস্ট যা যার সাথে দেখা করতে যাওয়া হচ্ছে তার তরফে ব্যাংক গ্যারান্টি চাওয়া হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এর পরিমাণ ৫০০ ইউরো।আরও তথ্যের জন্য সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র দফতরে যোগাযোগ করা যেতে পারে:

ঠিকানা:

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস এভিনিউ, ১৪৪৭ নিকোসিয়া, সাইপ্রাস।

টেলিফোন: +357 22 401124 / 401131

ফ্যাক্স: +357 22 661881 / 665313 / 665778

ই-মেইল: [email protected]

লং স্টে ভিসা

তিন মাসের বেশি সময় সাইপ্রাসে থাকতে হলে লং স্টে ভিসা নিতে হবে।

সাইপ্রাস স্টুডেন্ট ভিসা

সকল শিক্ষার্থীর জন্য সিভিল আর্কাইভ এন্ড মাইগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমতিপত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদল করলে নতুন করে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে পড়াশোনার বিষয়টি অনুমোদন করে। বাংলাদেশ বা ইউরোপের বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের কেবল পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী ভিসা দেয়া হয়। প্রতি সেমিস্টারে অন্তত ১২ ক্রেডিট নিলে তাকে পূর্ণকালীন কোর্স হিসেবে ধরা হয়।সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কাজের সুযোগ পায় না। তবে যেসব কোর্সের সাথে কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি জড়িত সেসব ক্ষেত্রে গ্রীষ্মের ছুটিতে কাজের অনুমতি দেয়া হয়।শিক্ষার্থীরা বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাইপ্রাস ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানাতে পারে। তবে প্রতি ভ্রমণকারীর জন্য ৩০০ সাইপ্রাস পাউন্ড ব্যাংক জামানত প্রয়োজন হয়।

স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত আরও তথ্যের জন্য সাইপ্রাসের সিভিল আর্কাইভ এন্ড মাইগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

ফোন:+357-22-403933/4/5

ফ্যাক্স: +357-22-403948

এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসা

সাইপ্রাসের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ না করেও বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকা থেকে ফ্লাইট বদল করলে বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের জন্য এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন হবে।

ট্রানজিট ভিসা

এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় যদি সাইপ্রাসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তবে ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। এ ভিসায় সর্বোচ্চ পাঁচ দিন সাইপ্রাসে অবস্থান করা যায়। আবার একাধিকবার প্রবেশের অনুমতি সম্বলিত ট্রানজিট ভিসাও দেয়া হয়। ভ্রমণকারী সাইপ্রাস ত্যাগের পর যে দেশে প্রবেশ করবে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি ট্রানজিট ভিসার পূর্ব শর্ত।

ওয়ার্ক পারমিট

সাইপ্রাসে কাজের ক্ষেত্রে চাকুরীদাতা ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেন। এক্ষেত্রে চাকুরীপ্রার্থীর যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:

পাসপোর্টের ফটোকপি,
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট,
মেডিকেল সার্টিফিকেট,
প্রয়োজনে চাকুরীরত ব্যক্তিকে দেশে ফেরত পাঠানোর খরচের নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাংক লেটার এবং
আবেদন মাশুল ২০ সাইপ্রাস পাউন্ড।
ওয়ার্ক পারমিটের বিস্তারিত জানতে ফোনেও যোগাযোগ করা যাবে 22804425, 22804424, 22804412, 22804414, 22804415

চাকুরী সংক্রান্ত সাধারণ তথ্যের জন্য ফ্যাক্স করা যাবে 22804595 নম্বরে আর ফোন করা যাবে 22804580, 22804431, 22804432, 22804481 নম্বরগুলোতে।

রেসিডেন্স ভিসা

ছয় ক্যাটাগরিতে রেসিডেন্স ভিসা দেয়া হয়। ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল বোর্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করলেই কেবল এ ধরনের ইমিগ্রেশন পারমিট দেয়া হয়। সব ক্ষেত্রেই আবেদনকারীর কর্মকাণ্ড যে সাইপ্রাসের অর্থনীতির ক্ষতি করবে না সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

ক্যাটাগরি এ

যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য সাইপ্রাসে কৃষিকাজ, পশুপালন বা মাছ চাষ করতে চান এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি তাদের মালিকানায় আছে, বা কেনার অনুমতি আছে এবং আড়াই লাখ পাউন্ড সাইপ্রাস পাউন্ড পুঁজি আছে তারা এ ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারেন।

ক্যাটাগরি বি

দেশটির খনিজ সম্পদ খাতে যারা কাজ করতে চান তাদের অনুমোদনের পাশাপাশি দুই লাখ সাইপ্রাস পাউন্ড পুঁজি থাকতে হবে।

ক্যাটাগরি সি

সাইপ্রাসে ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসার অনুমোদনের পাশাপাশি দেড় লাখ সাইপ্রাস পাউন্ড পুঁজি থাকতে হবে।

ক্যাটাগরি ডি

সাইপ্রাসে বিজ্ঞান শিক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কাজ করতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি সাইপ্রাসে সেটির চাহিদা থাকতে হবে।

ক্যাটাগরি ই

সাইপ্রাসে কোন স্থায়ী চাকুরী।

ক্যাটাগরি এফ

ব্যবসা বা চাকুরী ছাড়াও রেসিডেন্স ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। চাকুরী বা ব্যবসা না করেও সাইপ্রাসে জীবনযাপনের আর্থিক সঙ্গতি আছে সেটা দেখাতে হবে। বাৎসরিক আয় অন্তত ৫,৬০০ সাইপ্রাস পাউন্ড হতে হবে এবং আবেদনকারীর ওপর নির্ভরশীল কেউ থাকলে জনপ্রতি আরও ২,৭০০ সাইপ্রাস পাউন্ড লাগবে। ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল বোর্ড আরও অতিরিক্ত অর্থের শর্ত জুড়ে দিতে পারে।

কনস্যুলেট অফিসের মাধ্যমে এ আবেদন করা যায়। ইমিগ্রেশন পারমিট অনুমোদনের পর মাশুল হিসেবে ৭০ সাইপ্রাস পাউন্ড দিতে হয়।

প্রয়োজনীয় কয়েকটি ওয়েবসাইট

সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: http://www.mfa.gov.cy/
শ্রম মন্ত্রণালয়: http://www.mfa.gov.cy/
সিটিজেন চার্টার: http://www.moi.gov.cy/moi/citizenscharter/citizenscharter.nsf/dmlindex_en/dmlindex_en
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: http://moi.gov.cy/
সাইপ্রাসের সরকারি ওয়েব পোর্টাল: http://www.cyprus.gov.cy/portal/portal.nsf/dmlaliens_en/dmlaliens_en

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com