কক্সবাজার জেলায় এই সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আরো অনেক কিছু দেখার আছে।
কক্সবাজার জেলায় এই সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আরো অনেক কিছু দেখার আছে।
এ ছাড়া আরো অনেক কিছু রয়েছে এই জেলায়।
কক্সবাজার ভ্রমণের উৎকৃষ্ট সময়
কক্সবাজারের ভ্রমণের উৎকৃষ্ট সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এ সময়টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং গরম কম থাকায় পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে।
ট্রেনেও যাওয়া যাবে কক্সবাজারে। প্রতিদিন ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেনে ওঠা যাবে। চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যেতে এসব বিরতিহীন ট্রেনের সময় লাগতে পারে সাড়ে ৮ ঘণ্টার মতো। এ ছাড়া বিমানেও চাইলে যাওয়া যেতে পারে।
বাসস্ট্যান্ড বা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে হোটেল পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
কক্সবাজারে থাকার হোটেল এবং রিসোর্ট
কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। এ ছাড়া সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন মানের অনেক রিসোর্ট, হোটেল ও বোর্ডিং হাউস। বর্তমানে কক্সবাজারে হোটেলগুলোতে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা আছে। তাই বুকিং না দিয়ে গেলেও হোটেল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে এবং নতুন বছরের শুরুতে এটা ঝুঁকি হয়ে যাবে। তবে সব সময় মনে রাখবেন, অফসিজনে হোটেল ভাড়া অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়। তবে রিকশাওয়ালা কিংবা সিএনজিওয়ালার পরামর্শে হোটেল নেওয়া উচিত নয়, এতে ভাড়া বেশি পড়বে।
কক্সবাজারে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল রয়েছে। বাজেট হোটেলগুলো ৫০০ থেকে শুরু হয়ে৩০০০ টাকায় পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। মাঝারিগুলো মানের হোটেলগুলো ৩০০০ টাকা থেকে ৬০০০টাকায় পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আরো ভালো হোটেলেও চাইলে উঠতে পারেন। তবে অফ সিজনে ভাড়া ৩০-৬০% পর্যন্ত কমে যায়।
খাওয়াদাওয়া কোথায় করবেন
প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেলে অথবা হোটেলের কাছেই খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে সাগরের বিভিন্ন মাছের দ্বারা তৈরি আকর্ষণীয় মেন্যুর প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুঁটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে।
বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে ঝাউবন ও পৌষির নাম সবার আগে চলে আসে। এর মধ্যে পৌষি বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া আছে রোদেলা, ধানসিঁড়ি ও নিরিবিলি, শালিক, কয়লা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্টও রয়েছে কক্সবাজারে।
লাবণী পয়েন্ট ও কলাতলী বিচ
কক্সবাজার শহর থেকে কাছে হওয়ার কারণে এই দুই বিচে পর্যটকরা বেশি যান। এ দুই এলাকায় নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে ছোট বড় অনেক দোকান রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। হোটেল থেকে এই দুই বিচে চাইলে হেঁটেই যেতে পারেন।
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত একটি ফিশ অ্যাকুরিয়াম ও মিউজিয়াম। অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে আছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। বিরল প্রজাতির মাছসহ এখানে আছে হাঙর, পিরানহা, শাপলাপাতা, পানপাতা, কাছিম, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙাস, আউসসহ আরো অনেক মাছ এবং জলজ প্রাণী।
ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সাগরের তলদেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। ভেতরের সুন্দর ডেকোরেশন অ্যাকুরিয়ামটিকে আরো নান্দনিক করে তুলেছে। অ্যাকুরিয়ামে ঢুকলে মনে হবে আপনি সাগরের তলদেশে আছেন, আর আপনার চারপাশে খেলা করছে বর্ণিল প্রজাতির নানা মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী। ইচ্ছে করলে দেখতে পারবেন থ্রিডি শো। পুরো অ্যাকুরিয়ামটি ভালো করে ঘুরে দেখতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষা কেন্দ্র।
এই ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ফি দিতে হবে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া থ্রিডি শোয়ের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ও ইনানী
কক্সবাজারের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ। এই সড়ক ধরেই যাওয়া যাবে হিমছড়ি, ইনানী ও দক্ষিণের সৈকতগুলোতে। মেরিন ড্রাইভ ধরে গেলে শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পড়বে এই পাহাড়ি ঝর্ণা। এই পথে যাওয়ার সময় বাঁ দিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডান দিকে সমুদ্রের নীল জলে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
বর্ষার সময়ে হিমছড়ির ঝর্ণাকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত পাওয়া যায়। হিমছড়ির পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য কয়েক শ সিঁড়ি রয়েছে। পাহাড়ের ওপরে বসে নিচের গ্রাম ও সমুদ্র দেখতে ভালো লাগে। হিমছড়ি যাওয়ার একটু আগে পাহাড় চূড়ায় দেখতে পাবেন ‘দরিয়ানগর’ পর্যটনপল্লী। এই পল্লীর উঁচু পাহাড়ের নিচে রয়েছে এক কিলোমিটার দীর্ঘ কয়েক শ বছরের পুরনো একটি সুড়ঙ্গপথ। রয়েছে একাধিক আদিগুহা ও ঝর্ণা।
ইনানী সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাথুরে সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্রসৈকত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।
পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত
ইনানী সমুদ্রসৈকতের পর একটু যেতেই পাটুয়ারটেক সৈকত। বর্ষায় পাহাড় অরণ্যের এ রূপ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় থাকে। বাতাসে অধিক পরিমাণে জলীয়বাষ্প জমলে, তার সাথে ব্যাকটেরিয়ার বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় উজ্জ্বল আলোর। প্রকৃতিতে রাতে নির্জন সৈকত ও গভীর অরণ্যে এনে দেয় আলো ঝলমলে উজ্জ্বলতা। বিশাল আকাশের নিচে এক অপরূপ লীলাভূমি উখিয়ার পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত।
শামলাপুর সমুদ্রসৈকত
মেরিন ড্রাইভ ধরে ঘণ্টা দুয়েক সামনে গেলে শামলাপুর বা বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত। মাছধরার নৌকা আর জেলেরা ছাড়া সেইভাবে কোনো মানুষজন চোখে পড়বে না। ঝাউবনে পাওয়া যাবে সবুজ ছোঁয়া। কেউ কেউ একে বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত নামেও ডেকে থাকে। এখানকার দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনে ঘেরা অপরূপে শোভিত নির্জন সৈকতে এসে ভালো লাগার ১৬ আনাই পাবেন!
এখানে নির্জনতাও একটা বড় ব্যাপার। কক্সবাজার, হিমছড়ি বা ইনানীতে অনেক মানুষের ভিড় আর হৈ-হুল্লোড়। এখানে তার কিছুই নেই।
পড়ন্ত বেলায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো টেনে তীরে তোলার দৃশ্য, জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা, স্থানীয় শিশুদের চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চোখে পড়বে শুধুই সমুদ্র আর তার নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জন।