বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন

সততার পরিচয় দিয়ে প্রশংসিত প্রবাসী আল আমিন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

সম্প্রতি জার্মান দম্পতি যাত্রীর মানিব্যাগে থাকা মূল্যবান ইউরো ও ব্যাংক কার্ড ফেরত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রশংসিত হয়েছেন দুবাই টেক্সিতে কর্মরত প্রবাসী আল আমিন হোসেন। রংপুর পীরগঞ্জের এই প্রবাসী প্রায় ৮ বছর ধরে দুবাই টেক্সিতে চালক হিসেবে কাজ করছেন।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে এক রাতে দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে টেক্সিতে যাত্রী তোলেন আল আমিন। জার্মান দম্পতি ও তাদের দুই সন্তানের গন্তব্য ছিল আবুধাবির শেরাটন হোটেল। হোটেলে পৌঁছে মালপত্র বুঝিয়ে দিয়ে দুবাই ফেরার পথে কোম্পানি থেকে ফোন পান আল আমিন। জানতে পারেন ওই যাত্রীর ‘মানিব্যাগ’ হারানোর কথা। টেক্সি তল্লাশি করে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের নিচে পেয়ে যান মানিব্যাগ। ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানে যাত্রীর কাছে এটি ফেরতও দেন তিনি। এই ঘটনায় ওই জার্মান দম্পতি বেশ খুশি হন। আল আমিনকে বকশিশ দেন ১০০ ইউরো।

আল আমিন হোসেন সমকালকে বলেন, মাত্র ৫২৫ দিরহাম বেসিক বেতনে তার প্রবাসী জীবনের শুরু হয়। দুই বছর সেখানে কাজ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন তিনি। এরপর ২ হাজার দিরহামে চাকরি পান। চালক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে তার। তবে সেই রাতে দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রীদের আবুধাবি নামিয়ে দেয়ার পর ভাড়া হয় ৩৮১ দিরহাম। কার্ডের মাধ্যমে তারা ৪০০ দিরহাম পরিশোধ করেন। পরে ফিরতি পথে কোম্পানির মাধ্যমে জানতে পারি, তার মানিব্যাগ গাড়িতে ফেলে গেছেন। ফেলে যাওয়া মানিব্যাগে প্রায় চার হাজার ইউরো ছিল। এছাড়াও ডেবিট কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিল। তার মানিব্যাগটি ফেরত দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। সততা জীবনের মূল্যবান সম্পদ।

আল আমিনের মতো অনেকেরই অভিজ্ঞতা একই রকম। জানা গেল- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, মিশরসহ বেশকিছু দেশের কয়েক হাজার প্রবাসী দুবাইয়ে টেক্সিচালক হিসেবে নিয়মিত চাকরি করছেন। অধিকাংশের বেতন হয় কমিশনের ভিত্তিতে। একেকজন চালককে দৈনিক কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টা। যাত্রাপথে যাত্রীর মূল্যবান জিনিসপত্র ফেলে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

কুমিল্লা দাউদকান্দির রবি উল্লাহ আমিরাতে আছেন ১৩ বছর। দুবাই টেক্সিতে কাজ করছেন প্রায় ৮ বছর। কয়েক সপ্তাহ আগে তার গাড়িতেও একটি আইফোন ফেলে যান যাত্রী। পরে যাত্রীর ফোন পেয়ে নিজে গিয়ে সেটি ফেরত দেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর সঞ্জিত কুমার দুবাই টেক্সিতে যোগ দিয়েছেন দুই বছর। তিনিও একই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন।

রবি উল্লাহ ও সঞ্জিত কুমার জানান, যাত্রীরা গাড়িতে কিছু ফেলে গেলে রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) ও টেক্সি কোম্পানি মালপত্র ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে। আমরা গাড়িতে কিছু পেলে যত্ন সহকারে রেখে দিই। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চালকের কাছে রাখা যায়। পরে কোম্পানি থেকে জানালে আমরা যাত্রী কিংবা কাছের থানায় সেগুলো বুঝিয়ে দিই।

চালকরা জানান, মূলত ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় প্রাতিষ্ঠানিক দিকনির্দেশনা ও কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলার ওপর প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন তারা। এছাড়া টেক্সি কোম্পানির রয়েছে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ নামে আলাদা দপ্তর। সেখানে যাত্রীর হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রের খোঁজ পাওয়া যায়। গাড়িতে যাত্রীর রেখে যাওয়া জিনিসপত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই দপ্তরে জমা করতে হয় চালকদের। ক্যামেরার মাধ্যমে চালকদের সার্বক্ষণিক মনিটর করে প্রতিষ্ঠান। এখানে নিয়মই শিক্ষা দেয় সততার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com