গন্ডোলায় খাল ভ্রমণ ও পুরনো সেতু ইতালির এ শহরের প্রধান আকর্ষণ। প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি পর্যটক ভেনিসে ঘুরতে আসেন, অথচ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ৫০ হাজারের কম।
সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি ও বাসস্থানের তীব্র সংকট এখন এ দুই চাপের কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের নিজস্ব চরিত্র ও জীবনধারা।
পর্যটন থেকে মুনাফার আশায় ছুটির দিনগুলোয় অনেকে নিজেদের ঘর ভাড়া দিচ্ছেন। আবার অনেকে একাধিক বাড়ি কিনে পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের থাকার জায়গার সংকট তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ পর্যটক শহরে থাকেন মাত্র একদিন, তেমন কিছু কেনাকাটাও করেন না। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান সামান্যই বলা যেতে পারে।
ইনসাইড এয়ারবিএনবির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ভেনিসে ৮ হাজার ৩০০টিরও বেশি এয়ারবিএনবি তালিকাভুক্ত বাড়ি রয়েছে, যার ৭৭ শতাংশই একাধিক ঘরবিশিষ্ট ইউনিট। অধিকাংশ বাড়িওয়ালা একাধিক ইউনিটের মালিক। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
এ চিত্র বদলাতে ২০১৮ সালে ভেনিসের উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী ইমানুয়েলে দাল কারলো শুরু করেন ‘ফেয়ারবিএনবি’ প্লাটফর্ম, যেখানে শুধু জলনগরীর স্থানীয় মালিকানাধীন বাড়িগুলো ভাড়া দেয়া হয়। এছাড়া প্লাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৫০ শতাংশ স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হয়।
দাল কারলো বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরুদ্ধে নই। তবে কেউ যদি ২০টি বাড়ি কিনে শুধু পর্যটকদের ভাড়া দেন, তবে তিনি সমাজের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান।’
ভেনিস শহরের প্রশাসনও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৪ সালে শহরে প্রবেশের জন্য দিনভিত্তিক ৫ ইউরো ফি নেয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের চলাচল নজরে রাখতে চালু হয়েছে ‘স্মার্ট কন্ট্রোল রুম’ ব্যবস্থা।
অনেকে মনে করছেন, ভেনিসকে বাঁচানোর সময় খুবই সীমিত। একদিকে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, অন্যদিকে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। যদি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তবে ভেনিসের ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য একদিন চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে