শ্রীলঙ্কা, ভারত মহাসাগরের সুন্দর দ্বীপদেশ, তার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এই দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হলো বন্দারনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (BIA), যা কাটুনায়েকে শহরে অবস্থিত। এটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ধরনের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
বন্দারনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৪৪ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্স স্টেশন হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৭০ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এস ডব্লিউ আর ডি বন্দারনায়েকে এর নাম অনুসারে বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়। ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিমানবন্দরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে পরবর্তীতে পুনরুদ্ধার ও আধুনিকীকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃত।
বিমান সংস্থা ও ফ্লাইট অপারেশন
বন্দারনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে প্রায় ৪০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে প্রধান সংস্থাগুলি হলো:
শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স: শ্রীলঙ্কার জাতীয় বিমান সংস্থা।
এমিরেটস: শ্রীলঙ্কা থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে যাতায়াত।
কাতার এয়ারওয়েজ: মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান সংস্থা।
এতিহাদ এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া, এবং আরও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে।
যাত্রী সেবা ও গ্রাহক সেবা
বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সুশৃঙ্খল গ্রাহক সেবা প্রদান করা হয়। তথ্য ডেস্ক, ট্যাক্স ফ্রি শপিং, এবং ভিআইপি লাউঞ্জসহ বিভিন্ন সুবিধা এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া, যাত্রীদের সুবিধার্থে ভ্রমণ তথ্য সরবরাহ, ট্যাক্সি সার্ভিস, এবং ইন্টারনেট সুবিধাও উপলব্ধ।
বিমানবন্দরের ট্রাফিক ও যাত্রী সংখ্যা
বন্দারনায়েকে বিমানবন্দর প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা প্রদান করে। প্রতিদিন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্য থেকে শতাধিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বিমানবন্দরটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, এবং দিনের যে কোনো সময় ফ্লাইটে আসা-যাওয়া করা যায়।
এয়ারলাইন কাউন্টার ও চেক-ইন প্রক্রিয়া
বিমানবন্দরের চেক-ইন প্রক্রিয়া খুবই সুশৃঙ্খল। এয়ারলাইনের নির্দিষ্ট কাউন্টারগুলোয় চেক-ইন করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং সরঞ্জাম রয়েছে। এখানে যাত্রীরা স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন মেশিন ব্যবহার করতেও পারেন, যা সময় সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। ফ্লাইটের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে পৌঁছানো এবং চেক-ইন করা প্রয়োজন।
আগমন ও প্রস্থান
আগমন এবং প্রস্থান এলাকাগুলি পরিষ্কার এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। যাত্রীরা পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ এবং কাস্টমস পার হওয়ার পরে তাদের লাগেজ সংগ্রহ করতে পারেন। আগমন এলাকায় দ্রুততম সময়ে লাগেজ সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত বেল্ট সিস্টেম আছে। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা রয়েছে।
খাবার-দাবার ও রেস্টুরেন্ট
বিমানবন্দরে বিভিন্ন খাবার-দাবার এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবার সরবরাহ করে। ভ্রমণকালে যাত্রীরা স্ন্যাকস থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ খাবার উপভোগ করতে পারেন। কফিশপ এবং জুস বারগুলোও এখানে বেশ জনপ্রিয়।
দোকানপাট ও কেনাকাটা
বন্দারনায়েকে বিমানবন্দরটি ট্যাক্স ফ্রি শপিং এর জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে ব্র্যান্ডেড পোশাক, পারফিউম, কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্স এবং গয়না সহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। এছাড়া, শ্রীলঙ্কার চা, স্থানীয় হস্তশিল্প, এবং স্মারক পণ্য কিনতে বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
বিমানবন্দরের পরিবহন ব্যবস্থা
বিমানবন্দরের সাথে শ্রীলঙ্কার প্রধান শহরগুলোতে পৌঁছানোর জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে আপনি ট্যাক্সি, বাস এবং কার রেন্টাল সার্ভিস পেতে পারেন। ডাবলিন শহরে পৌঁছাতে বা কাটুনায়েকে থেকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য এই পরিবহন ব্যবস্থাগুলি ব্যবহার করা হয়।
শ্রীলঙ্কার বন্দারনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং গ্রাহক সেবার জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার সুশৃঙ্খল চেক-ইন, যাত্রীসেবা, খাবার-দাবার এবং কেনাকাটা যেকোনো যাত্রীর ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তোলে। শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রস্থান এবং প্রবেশদ্বার।