শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

শ্রীমঙ্গলে সবুজ চাদরে ঢাকা ‘দার্জিলিং টিলা’ পর্যটকদের মুগ্ধ করছে

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩
প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান আর চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা এবং টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি একটি অন্যতম পর্যটন নগরী। পাহাড়, অরণ্য, পাখির অভয়ারণ্য, হাওর, চা-বাগান আর উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত সবুজ চাদরে ঢাকা শ্রীমঙ্গলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে প্রতিনিয়তই মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা।
পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দার্জিলিং টিলা। শ্রীমঙ্গলের এমআর খান চা বাগানের অনিন্দ্য সুন্দর ‘দার্জিলিং টিলা’ আগত পর্যটকদের মাঝে শ্রীমঙ্গলের ‘শ্রী’ আরও বৃদ্ধি করেছে। এমআরখান চা বাগান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত মনোরম ও উপভোগ্য দর্শনীয় এক স্থান। নীলাভ সবুজ চা এর সমারোহে যে কোনো মানুষ গেলেই সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে চাইবে। প্রকৃতির প্রায় সব রূপ-রং যেন এখানে এসে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বিশাল এই সবুজের ভিড় কার না ভালো লাগবে?
বিকেলের ফুরফুরে বাতাসের সাথে এমন সবুজে ঘেরা স্থানে কাটানো মুহূর্ত অনেকটা আলাদা হয়েই স্মরণ হবে পরবর্তী সময়গুলোতে। শুধু স্থানীয়দের ভিড়ই না, জায়গাটি অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকদেরও আকর্ষণে করেছে। তাই সারা বছরই  পর্যটকদেরও আনাগোনা থাকে এ জায়গাটিতে। শুক্রবার (৮ জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকায় অবস্থিত এমআর খান চা বাগানের ৭ নং সেকশনে  দার্জিলিং টিলা’র অবস্থান।
সবুজের সমারোহে মুগ্ধতা ছড়ানো দৃষ্টিনন্দন এ টিলা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে। এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার এম আর খান চা বাগান। যেখানে রয়েছে ছবির মতো চা-বাগান। চতুর্দিকে সবুজ গাছগাছালি। দৃষ্টিজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। দেখতে অনেকটা দার্জিলিং এর চা-বাগানের মতো। সবুজের সমারোহ, চা-বাগানের আঁকাবাঁকা পথ, ঢেউ খেলানো সমান্তরাল রাস্তা নিমেষেই যে কারও বিষণ্ন মনে প্রশান্তির ঢেউ এনে দিতে পারে। সবুজ গালিচা মোড়ানো চা-বাগানের প্রকৃতির এমন সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা।
স্থানীয় লোকজন এই টিলার নাম দিয়েছেন দার্জিলিং টিলা। তাঁরা জানান, এই টিলা এবং চা বাগানটি দেখতে দার্জিলিং এর মতো। তাই পর্যটকদের কাছেও এটা দার্জিলিং টিলা নামেই অধিক পরিচিত। এমআর খান চা-বাগানে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোড পেট্রল পাম্প চত্বর থেকে রাধানগর হয়ে মহাজেরাবাদের সিএনজি অটোরিকশায় উঠে এমআর খানের রাস্তায় নেমে এক থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আর রিজার্ভ নিলে এমআর খানের দার্জিলিং টিলায় সরাসরি গাড়ি এবং মটর সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে।
এ টিলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। অন্যান্য দিনের ন্যায় আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এমআর খান চা বাগানের বাসিন্দা দ্বীপ বুনার্জি জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ এই চা বাগান এবং দার্জিলিং টিলা দেখতে আসেন। বিশেষ করে ঈদ, ছুটি এবং শীতের শুরুতে এখানে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।
নয়নাভিরাম এ টিলা দেখতে কমলগঞ্জ  থেকে আগত অভিষেক দাশ স্বপ্নীল বলেন, অসাধারণ একটি সুন্দর স্পট। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ভেতরের দার্জিলিং এর মতো দৃষ্টিনন্দন জায়গা আছে। টিলা দেখতে আসা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তন্তু দেবনাথ  বলেন চা বাগান আর টিলার অপরূপ সৌন্দর্যে ভীষণ মুগ্ধ। যেকোনো দর্শনার্থী মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।
সিলেটের মইয়ারচর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক শাকির আহমদ মাসুম বলেন, অনিন্দ্যসুন্দর এ টিলার সারি সারি চা বাগান আর সবুজাভ সবকিছুই অসাধারণ সৌন্দর্য আরও মনোমুগ্ধকর। টিলা ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর চিত্র ধারণ করতে ব্যস্ত দেখা যায় কয়েকজন দর্শনার্থীদের। কথা হলো আল আমিন, জয়নাল, সুমন, জাহিদ, বাড়ন্তি, লাবণী নামের দর্শনার্থীদের সাথে।
তারা বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অন্যতম একটি স্পট এই দার্জিলিং টিলা। মনজুড়ানো চা-বাগান আর টিলার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই জায়গায় কেউ না আসলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাকে বুঝানো যাবে না।
এমআর খান চা-বাগানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এমআর খান চা বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ চমৎকার। বিশেষ করে এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এটি দেখার জন্য বিভিন্ন সময় মানুষ ঘুরতে আসেন। পর্যটকদের রেস্ট এবং বসার  জন্য এখানে বেশ কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে টুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গলের ওসি প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, শ্রীমঙ্গল অন্যতম একটি পর্যটন শিল্পাঞ্চল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যাতে সুন্দর এবং নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে। পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এহসান বিন মুজাহির

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com