শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনাকে কবে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলাও হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সাথে ভারত ও থাইল্যান্ড এই দুটি দেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে বিচার করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ কেন দুই মাসেও কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল না কিংবা তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নিল না সেই প্রশ্নও রয়েছে।

এই প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া। ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং সেটি যে খুব শিগগিরই হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোর্ট বসলে প্রথম দিনই আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ চাইব। কোর্ট যদি তাকে গ্রেপ্তারের ইনিশিয়াল অর্ডার দেয় তখন তাকে ফেরত আনতে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইব।

তবে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ও, তারপরও বাংলাদেশ চাইলেই যে তাকে ফেরত পাবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, “চুক্তি অনুযায়ী আইনগতভাবে ভারতের কাছে বাংলাদেশ অনুরোধ করতেই পারে। কিন্তু এখানে ভারতেরও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার অনেক বিষয় আছে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটার তাজুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন যে দেশে আছেন সে দেশের সাথে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য।

যদি সেটি হয় তাহলে বাংলাদেশ কবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে দেশের রাজনীতিতে।

জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আদালত যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তখনই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ।

হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান ভারত সরকারের সাথে শেখ হাসিনার যে সম্পর্ক রয়েছে সেদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়া খুব বেশি কাজে নাও আসতে পারে। কারণটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরারি আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকেই। চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তির নামে মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয় বা তিনি দোষী সাব্যস্ত হন অথবা দেশের আদালত কর্তৃক প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ করার জন্য ফেরত চাওয়া হয় তাহলে তাকে ফেরত দেবে বাংলাদেশ ও ভারত।

প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ বলতে চুক্তিতে সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড হয় এমন অপরাধকে বলা হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক অপরাধও রয়েছে। তবে কোনো অপরাধ প্রত্যর্পণযোগ্য হওয়ার জন্য দ্বৈত অপরাধের নীতি অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। এর মানে হলো কৃত অপরাধটি অবশ্যই দুই দেশে শাস্তিযোগ্য হতে হবে।

এই চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হলে যে কোনো দেশ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তবে চুক্তি অনুযায়ী হত্যা, নরহত্যা বা অপরাধমূলক হত্যা, আক্রমণ, বিস্ফোরণের কারণ, জীবন বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক পদার্থ বা অস্ত্র তৈরি বা নিজের কাছে রাখাসহ বেশ কিছু অপরাধকে রাজনৈতিক বলার সুযোগ নেই।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটি ২০১৩ সালে করা হলেও ২০১৬ সালে মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। সংশোধনের সময় এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করে তুলেছিল। সংশোধিত চুক্তির ১০ এর (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।

গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুইশোরও বেশি মামলা হয়েছে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে। চুক্তি অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে মামলার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের এই চুক্তি থাকলেও এখানে যদি শেখ হাসিনার লাইফ থ্রেটের বিষয় থাকে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকে তাহলে তাকে ফেরত দেয়ার আগে ভারত অবশ্যই সেটা ভাববে।

এই প্রশ্নে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, চুক্তি অনুযায়ী যদি আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেও তাকে ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দরকার হতে পারে।

অর্থাৎ এই কূটনীতিক বিশ্লেষকের মতে, আইন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে সমন্বয়ক হলেই কেবল শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করেছে ভারত সরকার। এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট মূলত ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট বা আইসি। বিশেষ ধরনের এই পরিচয়পত্রধারীরা বিদেশ সফর করতে পারেন।

কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারতে ‘রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গত আগস্টেই তিনিসহ তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য সবার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

যৌথ অভিযানে ৩১৮ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১৭৪যৌথ অভিযানে ৩১৮ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১৭৪
কূটনীতিকরা বলছেন, এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশই দিয়ে থাকে। যাদের পাসপোর্ট থাকে না তাদের নির্দিষ্ট একটা দেশে যেতে বা সেখান থেকে ফেরত আসার জন্য এটা দেয়া হয়ে থাকে। যদি শেখ হাসিনাকে সত্যি ভারত থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেয়া হয় তাহলে তিনি যদি অন্য কোনো দেশে যান, সেখান থেকে তাকে ফেরত আনা যাবে কি না সেই প্রশ্নও উঠছে দেশের রাজনীতিতে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যখন পরোয়ানা জারি হবে তখন তিনি যে দেশে থাকবেন, সেই রাষ্ট্রের সাথে যদি প্রত্যর্পণ চুক্তি বা অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি থাকে তাহলে তারা এই চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য।”

সম্প্রতি নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, কোনো মামলায় যদি শেখ হাসিনাকে আদালত হাজির করতে নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com