শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

শীতের মধ্যে কানাডায় যারা আউটডোরে ডিউটি করে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন কানাডার হিরো

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

মাইনাস 35 ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতের মধ্যে কানাডায় যারা আউটডোরে ডিউটি করে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন কানাডার হিরো। একটুখানি বের হওয়া যায় না, আর সেখানে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বা সাইকেল চালিয়ে এসব হিরোরা জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। ভাবা যায় না।

গতকালকে পরপর তিন/চার দৃশ্য আমার চোখে পড়েছে। সেগুলো আপনাকে সঙ্গে আমি শেয়ার করতে চাই।

# 1 পুলিশ অফিসার।

তখন বাজে সকাল সাতটা। আমি গাড়ির গ্যাসে পা চেপে টান দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম কাজে। দেরি করতে চাই না। অন্যকে কাজে সময় মতো আসতে বলে নিজে দেরি করে পৌঁছাব তা হবে একেবারে বেমানান। তাই তাড়াহুড়ো। তবে খানিকটা পথ গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো রেড লাইট সিগন্যালে। জায়গাটা হলো Eglinton & pharmacy. তখনো কিন্তু চারিদিক ভোরের ঘোর আঁধার কাটে নি। গাড়ির রেডিও সব সময় অন থাকে। খবর শুনি। Cold alert এর সতর্কতা করছে বারবার। ঠিক সে সময়ে তাপমাত্রা ছিল ফিল লাইক -27° Celsius.  বস্ত্রহীন মানুষের বেঁচে থাকার কথা না শীত এতটাই ফিল হচ্ছে তখন। আমি তো গাড়ির মধ্যে হিটিং সিস্টেমে বসা। গায়ে ফিল না হলেও মনে অনুভব হচ্ছিল ভালোভাবেই।

কানাডার হিরো!

হঠাৎ করে সামনে দৃষ্টি আটকালো। বেশ উঁচু-লম্বা দুইজন পুলিশ অফিসার রাস্তার মধ্যে একটা পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশের ড্রেস পরা ওনাদের। আমি কয়েক মিটার দূরে থাকলেও বেশ ভালোই বুঝছিলাম তাদের কার্যকলাপ। মানে ওনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতেছিলেন হাত নেড়েচেড়ে ও খুব হাসিখুশি ছিলেন পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম।

ওনারা হয়তো হঠাৎ কোনো emergency ইনফরমেশন পেয়ে ওখানে এসে দাঁড়িয়েছেন। ওনাদের ডিউটি এটা। তবে কোনো এ্যাকসিডেন্ট ঘটে নি। অন্য কোনো কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাধারণত এভাবে থাকেন না।

যাই হোক, যে কারণেই আসুন না কেন, তারা যে এসেছেন ডিউটিতে তা তো পরিস্কার। এত শীতে, তাও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে খোলা রাস্তায়। এরই নাম কর্তব্য। তাছাড়া একটা বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে যে তারা কতোটা উৎসাহ, আনন্দচিত্তে দায়িত্ব পালন করতেছেন।

আমরা তো একটু স্নো দেখলেই বলে ফেলি “দেশ ছেড়ে ঐখানে এতটা কষ্ট করে থাকার কী দরকার ছিল আপনাদের?” কেউ কেউ চিমটি দিয়ে বলে ওঠেন, “আপনার লেখায় কোথায় যেন  বাংলাদেশ কে  সময়ের দিক থেকে  তাচ্ছিল্য করেছেন ,  বুঝিয়েছেন  যে আপনারা  ভোর থেকে  বরফের  মাঝে  ডুবে কাজ করেন” ইত্যাদি।

দেখুন, ঐ দুইজন পুলিশকে। -27 বা তারও বেশি। ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন। কর্তব্য পালন করছেন। পৃথিবীর যে দেশই বলুন না কেন আছে সমস্যা, লাগামবিহীন কাজ, কাজের গুরু দায়িত্ব। সুতরাং যত দোষ কানাডার দিয়ে লাভ নেই। আমরা এদেশে নিজের ইচ্ছাতেই থাকি। এদেশের সরকার আমাদের পা বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন নি। কাজ আছে বলেই কষ্ট। তবে সে কষ্ট আনন্দের। কাজ না থাকলে কষ্টটা হতাশায় ঢেকে থাকত।

# 2 সাইকেলে ফুড ডেলিভারি।

গতকালই আরেকটা দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছি। তখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। আমি কাজ থেকে সোজা গিয়েছিলাম একটা দোকানে। গাড়িটা পার্ক করে দোকানের মধ্যে ঢুকব সে সময় দেখলাম আরেক দৃশ্য। আমার সামনে দিয়ে একজন মানুষ তার ফুড ডেলিভারির সাইকেলটা হাতে ধরে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তখন শীতের তীব্রতা ভয়াবহ। -28 ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কানাডার হিরো!

ফুড ডেলিভারির জন্য সাইকেলে ছুটে চলেছেন মিনিটে তিন-চারজন। এগুলো এখন প্রচুর হচ্ছে টরন্টোয়।

কিন্তু যিনি সাইকেলটা ধরে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন গন্তব্যে ওনাকে দেখে অনেক কিছু অনুভব হয়ে গেল যেন মনের গভীরে। শীতের কারণে তিনি মাথা-মুখ ঢেকে রেখেছেন খুব করে। তারপরেও বয়স বুঝতে খুব সমস্যা হয় নি। উনি এতটা ইয়াং না। পঞ্চাশের অনেক বেশি হবে। ওনার চোখে আমার চোখ পড়ল। এক বিশাল অনিশ্চয়তার প্রশ্নচিহ্ন যেন চোখের চাহনীতে।

নিশ্চুপ ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। হাতে ধরে রেখেছেন আয়ের উৎস ফুড ডেলিভারির সাইকেলটা। তিনিও কমিউনিটির সেবা করছেন। এই শীতে। উনিও ফুল গ্রেডের হিরো। তবে উনি এটা করছেন বাধ্য হয়ে। অন্য কাজ না পেয়ে। তাতে সমস্যা নেই। এগিয়ে যেতে হবে কিছু একটা অবলম্বন করে।

# 3. Crossing guard.

শীত যতই বাড়ুক স্কুল খোলা থাকলেই স্কুলের এরিয়ায় crossing guard দাঁড়িয়ে ডিউটি পালন করেন। -27 ডিগ্রি সিলসিয়াসে আউটডোরে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কমিউনিটির সেবা করে যাচ্ছেন। কঠিন শীতে দায়িত্ব পালন করছেন আনন্দচিত্তে।

ইনাদের অনেকেই অনেক দামি গাড়ি চালিয়ে আসেন। ওনাদের মনে কাজের রকমফের নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com