কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটালে শিগগিরই মানুষের মতো সক্ষমতাওয়ালা রোবটের দেখা মিলবে, এমনই দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল।
সম্প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটিং ও মেকানিকাল নকশায় যে অগ্রগতি দেখা গেছে, তা নিয়ে নতুন একটি গবেষণাপত্র লিখেছেন এ বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, শিগগিরই ‘কোয়ান্টাম রোবটিক্স’-এর মতো নতুন খাত আবির্ভূত হবে, যা প্রচলিত রোবটিক্সের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
“কোয়ান্টাম গণনা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দুটিই এমন যুগান্তকারী প্রযুক্তি হিসাবে দেখা হচ্ছে, যা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে পাল্টে দেবে। আর এ দুই প্রযুক্তির সমন্বয়ে রোমাঞ্চকর কম্পিউটিং সক্ষমতা এবং মানব-স্তরের বুদ্ধিমত্তা তৈরির সম্ভাবনা আছে,” ‘কোয়ান্টাম রোবটিক্স: এ রিভিউ অফ ইমার্জিং ট্রেন্ডস’ শীর্ষক নতুন এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন গবেষকরা।
“এ দুই প্রযুক্তি মেলালে সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত ফলাফল মিলবে রোবটিক্স খাতে। এমনকি এতে করে এমন উন্নত রোবটও তৈরি করা যেতে পারে, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে।”
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ধারণাটি বেশ কয়েক দশক পুরোনো হলেও কেবল সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই এর থেকে কার্যকরী মেশিন তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের সুযোগ নিয়ে হালের শীর্ষস্থানীয় সুপারকম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির সম্ভাবনা আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এগুলো কাজ করে প্রচলিত বাইনারি ‘বিট’-এর জায়গায় কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট ব্যবহার করে। ডিজিটাল ডেটা সংরক্ষণ ও স্থানান্তরের জন্য যেখানে ব্যবহার করা হয় ‘ওয়ান’ ও ‘জিরো’, কোয়ান্টাম ব্যবস্থায় যেগুলো একইসঙ্গে চলমান থাকতে ‘সুপারপজিশন’ নামে পরিচিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
এর মানে, কিউবিট একইসঙ্গে ‘ওয়ান’ ও ‘জিরো’ উভয়ের কাজ করতে পারে। ফলে, এ ব্যবস্থায় প্রতিটি কিউবিট যোগ করলে এদের সক্ষমতা প্রচলিত বিভিন্ন কম্পিউটারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
গবেষকরা বলেছেন, কোয়ান্টাম রোবট তৈরির আগে এ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উভয় ক্ষেত্রেই বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
বেশিরভাগ শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি ও গোটা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার এরইমধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বড় পরিসরে বিনিয়োগ করছে। তবে, এদের সমন্বিত করার ক্ষেত্রে বড় পরিসরে কোনো প্রচেষ্টা এখনও দেখা যায়নি।
“কোয়ান্টাম তথ্য ও কোয়ান্টাম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন তত্ত্ব ধীরে ধীরে পরিপক্ক হচ্ছে, যেখানে ‘কিউবট’ আদৌ আসবে কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কবে নাগাদ আসবে।”