 
														
							 
                    বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় নোবেল শান্তি পুরস্কারকে। শুক্রবার (০৮ অক্টোবর) নরওয়ের অসলোতে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেল প্রথম যে ছয়টি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তার মধ্যে শান্তিতে নোবেলও রয়েছে। মানবজাতির জন্য সবচেয়ে উপকারী কিংবা কল্যাণকর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেল। কিন্তু এ পদক অন্য পাঁচটি ক্যাটাগরির চেয়ে অনেক বেশি বিতর্ক তৈরি করেছে বিভিন্ন সময়ে।
বারাক ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। ওবামা নোবেল পাওয়ায় ধাক্কা খেয়েছিলেন অনেকেই। তাদের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং নোবেল বিজয়ী ওবামা নিজেও। ওবামা এমনকি ২০২০ সালে নিজের স্মৃতিকথায় ওই ঘোষণার প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে লিখেছেন ‘কিসের জন্য?’
তখন তার ক্ষমতায় আসার মাত্র নয় মাস ছিল এবং সমালোচকরা তাকে মনোনয়নের সিদ্ধান্তকে ‘অপরিপক্ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। সত্যি কথা বলতে ওবামার শপথ নেওয়ার ১২ দিনের মধ্যেই পুরস্কারের জন্য নাম জমা দেওয়ার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
এরপর ২০১৫ সালে নোবেল ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক গের লান্ডেটস্ট্যাড বিবিসিকে বলেছিলেন যে, যে কমিটি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। ওবামার দুই মেয়াদের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধরত ছিল।
ইয়াসির আরাফাত
১৯৯৪ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় প্রয়াত এই ফিলিস্তিনি নেতাকে। একই সঙ্গে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তখনকার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন প্যারেজকে।
মূলত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব অবসানে অসলো শান্তি চুক্তির জন্য তাদের যৌথভাবে পদক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক সময়ে প্যারামিলিটারির সঙ্গে জড়িত থাকা ইয়াসির আরাফাতকে পুরস্কার দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয় ইসরায়েল ও এর বাইরে। এমনকি এ মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয় নোবেল কমিটির মধ্যেই। কমিটির একজন সদস্য প্রতিবাদে পদত্যাগও করেন।
অং সান সুচি
মিয়ানমারের এই রাজনীতিক দেশটির সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল পান। কিন্তু এর ২০ বছর পর তার দেশে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। রাখাইনের ঘটনাকে জাতিসংঘ একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এমনকি তার পদক প্রত্যাহারের দাবিও উঠেছে যদিও নিয়মানুযায়ী সেটি করা যায় না।
আবি আহমেদ
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নোবেল দেওয়া হয়। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সীমান্ত সংঘাত নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই এ পুরস্কারের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কারণ নিজে দেশের টাইগ্রের উত্তরাঞ্চলে সেনা মোতায়েন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সেখানে লড়াইয়ে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হন এবং জাতিসংঘ একে ‘হৃদয় বিদারক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
ওয়াঙ্গারি মাথাই
প্রয়াত এই কেনিয়ান পরিবেশবাদী ছিলেন প্রথম আফ্রিকান নারী, যিনি ২০০৪ সালে নোবেল জয় করেন। কিন্তু তার বিজয় নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে যখন এইচআইভি ও এইডস নিয়ে তার একটি মন্তব্য সামনে চলে আসে।
ওয়াঙ্গারি মাথাই বলেছিলেন, এইচআইভি ভাইরাস জীবাণু অস্ত্র হিসেবে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের শেষ করা। তার দাবির স্বপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না।
হেনরি কিসিঞ্জার
১৯৭৩ সালে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। কিন্তু কম্বোডিয়ায় বোমা বর্ষণ, দক্ষিণ আমেরিকায় সামরিক শাসনকে সমর্থনসহ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাসে সবেচেয় বিতর্কিত অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকা কিসিঞ্জারকে এই পুরষ্কার দেওয়ায় অনেকের চোখ কপালে ওঠে। প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন নোবেল কমিটির দু’জন সদস্য। নিউইয়র্ক টাইমস পুরস্কারটিকে আখ্যায়িত করেছিল ‘নোবেল ওয়ার প্রাইজ’ হিসেবে।
শূন্য হাতে গান্ধী
পুরস্কার না পাওয়া নিয়েও আলোচনা আছে এই পদক নিয়ে। শান্তি ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বড় যে নামটি নেই তা হলো- মহাত্মা গান্ধী। কয়েকবার মনোনয়নের জন্য নাম আসলে এই ভারতীয় রাজনীতিক তা পাননি যদিও বিংশ শতকের সব চেয়ে অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা