ভিয়েনার ম্যাগডাসের হোটেলের প্রবেশ পথে রয়েছে হোটেলটির নিজস্ব রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁর দেয়ালে লেখা “আপনার চিন্তা প্রসারিত করুন।”
এই হোটেলের ৪০ জন কর্মচারীর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই শরণার্থী। যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান অভিবাসীদের নিয়োগ দিতে অনেক চিন্তা ভাবনা করেন, সেখানে শরণার্থীদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ভূমিকা রাখছে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি।
মূলত প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার গ্যাব্রিয়েলা সোনলেইটনার হোটেলটিতে শরণার্থীদের নিয়োগ দিতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন।
গ্যাব্রিয়েলা সোনলেইটনার আরএফআইকে ব্যাখ্যা করেন, “অস্ট্রিয়াতে এই লোকেদের প্রতি অনেকের বিরক্তি রয়েছে। লোকেরা তাদের সম্ভাবনা দেখার চেয়ে তাদের ত্রুটিগুলির দিকে মনোনিবেশ করতে পছন্দ করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শরণার্থীদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। সে লক্ষ্যে আমরা ২০১৫ সালে এই হোটেলটি চালু করেছিলাম। এই চেষ্টা খুব ভালভাবে কাজ করেছে। আমরা এ পর্যন্ত মোট ৮০ জনেরও বেশি শরণার্থীকে বিভিন্ন সময়ে এই হোটেলে কাজ লাগাতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি যোগ করেন, “কিন্তু এটি এখনও সমগ্র অস্ট্রিয়ার পরিবেশ নয়। এসব ব্যক্তিরা অন্য কোথাও আবেদন করলে অস্ট্রিয়ায় বেড়ে ওঠা লোকেদের মতো তাদের একই সম্ভাবনা থাকে না। অনেকেই বলেন বিদেশিরা এসে আমাদের কাজ কেড়ে নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের এখানে যথেষ্ট কাজের সুযোগ রয়েছে এবং এই লোকদের আমাদের প্রয়োজন।”
“আমি আমার জায়গা খুঁজে পেয়েছি”
হোটেলের রিসেপশন বা অভ্যর্থনার দায়িত্বে আছেন শরণার্থী জানকিন হাসান। যিনি নিয়মিত হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে হোটেলের গ্রাহকদের স্বাগত জানান।
এই কুর্দি অভিবাসী মূলত সিরিয়ার নাগরিক। তিনি ২০১৯ সাল থেকে ম্যাগডাস হোটেলে কাজ করেছেন। কিন্তু তার শুরুর দিকের দিনগুলো মনে আছে। যখন একটি কোম্পানিতে কাজ খুঁজে পাওয়া তার জন্য বেশ কঠিন ছিল।
জানকিন হাসান স্মরণ করে বলেন, “সে সময় এমন একটি কোম্পানি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল যারা আমাকে স্বল্প জার্মান ভাষার দক্ষতা দিয়ে গ্রহণ করবে। তখন আমি এখনকার মতো জার্মান বলতে পারতাম না। এছাড়া আমি শরণার্থী এটিও চাকরি না পেতে ভূমিকা রেখেছে।”
তার মতে, “দুর্ভাগ্যবশত অস্ট্রিয়ার কিছু কোম্পানির শরণার্থীদের নিয়োগ দেয় না। আমি এটিকে অন্যায্য মনে করি। কারণ আমি আমার জাতীয়তা, আমার ধর্ম বা আমার ত্বকের রঙ আমি নিজে বেছে নিইনি। আমি এটি নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “শেষ পর্যন্ত, আমি ম্যাগডাস হোটেলে একটি কাজ খুঁজে পেয়েছিলাম এবং আমি এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ চাকরিটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি আপনাকে কেবল আপনার ভাড়া এবং সমস্ত কিছু পরিশোধ করতে সহায়তা করে না বরং সারাদিন বাসায় বেকার বসে থাকা থেকেও বাঁচিয়ে দেয়।”
নতুন জীবন
কিশোর বয়সে সিরিয়া থেকে পালাতে হয়েছিল আরেক শরণার্থী মোহাম্মদ দুভাকে। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ম্যাগডাস হোটেল-রেস্তোরাঁয় শিক্ষানবিশ ওয়েটার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। এখানে কাজ করা তার কাছে নতুন জীবনের সমার্থক।
এই সিরীয় বলেন, “এখানকার গ্রাহকরা দুর্দান্ত! মাঝে মাঝে কিছু বয়স্ক ব্যক্তিরা আসেন যারা খাবার পরিবশনের সময় আমাকে মন থেকে সত্যিই পছন্দ করেন না। তবে গুটিকয়েক এমন কয়েকজন ছাড়া বাকি লোকেরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। এখন এই পরিবেশকে আমার নিজের বাড়ির মতো মনে হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সিরিয়া থেকে আসা লোকজন খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আমি অনেক খারাপ পরিস্থিতি দেখেছি। এটা ভুলে যাওয়া কঠিন তবে আমরা অতীত থেকে ইতিবাচক কিছু শিক্ষা নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। সেজন্য আমি আশা করি ম্যাগডাস হোটেলের মতো আরও অনেক জায়গা তৈরি হবে।”
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত নভেম্বর থেকে ৩৬ হাজার শরণার্থী এবং অস্থায়ী সুরক্ষাপ্রাপ্ত অভিবাসী অস্ট্রিয়ান কর্মসংস্থান কেন্দ্রের সাথে নিবন্ধিত হয়ে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে৷