বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

‘লোকসানি’ ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফের ফ্লাইট চালু করতে চায় বিমান

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফের ফ্লাইট চালু করতে চায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয়টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তর থেকে ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার পারমিট’ পেতে আবেদনও করেছে। বড় অঙ্কের লোকসানের কারণে ১৭ বছর আগে এ রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে বিমান। নতুন সমীক্ষাও দিচ্ছে লোকসানের আভাস।

নতুন করে এই অনুমোদন পেতে হলে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) থেকে ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র পেতে হবে। এ ছাড়পত্রের জন্য পূরণ করতে হবে বেসামরিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিএওর সব মানদণ্ড। এখন ক্যাটাগরি-২ এ অবস্থান করছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বেবিচক। এছাড়া আইসিএওর অনেক মানদণ্ডে ঘাটতি রয়েছে।

বেবিচকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ক্যাটাগরি-১ এ আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে বেবিচক। এই বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে সব মানদণ্ড পূরণ হবে। তখন নিজস্ব দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালানো সম্ভব।

এর আগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ৭৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বিমান। তখন যাত্রী সংকটে লোকসানের কারণে এই পথে ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল বেবিচক। পরে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ থাকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ফ্লাইট। এখন ১৭ বছর পর ফের এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হলে বিমান ঠিক কতটা লাভ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট

বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘতম আকাশপথ ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট। এই রুটের দূরত্ব প্রায় ১২ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার। গত ৫ সেপ্টেম্বর এই রুটের যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তর থেকে ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার পারমিট’ পেতে আবেদন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমান সূত্র জানায়, বর্তমানে এই দূরত্বে বিমানের কোনো ফ্লাইট নেই। তাই আবেদনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের ইজমির বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল নেওয়ার জন্য যাত্রা বিরতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সময়ে কোনো যাত্রী উড়োজাহাজে ওঠা-নামা করবে না। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করবে।

বিমানের অর্থ পরিদপ্তর বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-নিউইয়র্কে ফের ফ্লাইট চালুর আবেদনের আগে সমীক্ষা করা হয়েছে। এই সমীক্ষায় ফের যাত্রী পরিবহন শুরু হলে বিমানকে সপ্তাহে প্রায় ১১ কোটি বা বছরে ৫৮৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিতে হবে। তারপরও দুই দেশের যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় এই রুটে সপ্তাহে পাঁচটি করে ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে উড়োজাহাজের মোট আসনের ৭০ শতাংশ যাত্রী পেলে লাভ হবে। এর কম যাত্রী হলে বিমানকে ফের গুনতে হবে লোকসান।

তবে এ রুটে এফএএ ক্যাটাগরি-১ এ বেবিচকের অবস্থান নেওয়াই কঠিন হবে বলে মনে করে বিমান। সংস্থাটির নথি অনুযায়ী, এখন বেবিচককে বেসামরিক বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিএওর সব মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এছাড়া নিশ্চিত করতে হবে আইসিএওর মানদণ্ড অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা। বেবিচক এসব শর্ত পূরণ করতে পারলেই ক্যাটাগরি-১ এ আসতে পারবে।

জানতে চাইলে ফ্লাইট অপারেশন পরিদপ্তরের পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ আবেদনে বিমানের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এখন এফএএ এবং বেবিচকের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন পাওয়া যাবে। তারপর ফ্লাইট পরিচালনায় লাভ-লোকসানের বিষয়টি সামনে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাটাগরি-১ এ যাওয়ার জন্য ১৫ বছর ধরে বেবিচককে বলা হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি হয়নি। এখন ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি সম্পূর্ণ বেবিচকের ওপর নির্ভর করছে।’

আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করা হবে। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে গত ২ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলন করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রীরা। তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রীসেবার মান সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের মতো হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের এফএএ এর যত শর্ত আছে, সব পূরণ করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই বেবিচক কাজ করছে।

ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় বিমান

ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে (ডিওটি) যে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, একই আবেদনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লসএঞ্জেলস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হোস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সিতে ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির জন্য ১০টি বিমানবন্দরের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের নিউ দিল্লি এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। এসব বিমানবন্দর থেকে বিমান জেট ফুয়েল নেবে। সেখানে কোনো যাত্রী ওঠা-নামা করবে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com