লাটভিয়া (Latvia) ইউরোপ মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ছোট কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এটি বল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এবং এটি তিনটি বল্টিক রাষ্ট্রের (Baltic States) মধ্যে একটি — অন্য দুটি হলো এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া।
মোট আয়তন: প্রায় ৬৪,৫৮৯ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা: আনুমানিক ১৮ লাখ (২০২4 সালের তথ্য অনুযায়ী)
রাজধানী: রিগা (Riga)
ভাষা: লাটভিয়ান (Latvian)
সীমান্তবর্তী দেশসমূহ:
উত্তর: এস্তোনিয়া
দক্ষিণ: লিথুয়ানিয়া
পূর্ব: রাশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব: বেলারুশ
আবহাওয়া: গ্রীষ্মকালে হালকা উষ্ণ এবং শীতকালে ঠান্ডা ও তুষারপূর্ণ।
লাটভিয়া অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই বল্টিক জাতিগোষ্ঠী যেমন লাটগালিয়ান, কুরোনিয়ান, সেলোনিয়ান ও সেমিগালিয়ান বসবাস করত।
১৩শ শতকে জার্মান ক্রুসেডারদের আগমনের মাধ্যমে লাটভিয়া বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন বিদেশি শক্তির শাসনের অধীনে ছিল:
জার্মান শাসন (১৩শ–১৬শ শতক)
পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া কমনওয়েলথ (১৬শ শতক)
সুইডিশ সাম্রাজ্য (১৭শ শতক)
রাশিয়ান সাম্রাজ্য (১৮শ শতক থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত)
১৯১৮ সালের ১৮ নভেম্বর, প্রথমবারের মতো লাটভিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
WWII চলাকালে দেশটি প্রথমে সোভিয়েত, তারপর নাৎসি জার্মানির, এবং পরবর্তীতে আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে চলে যায়।
অবশেষে ১৯৯১ সালের ২১ আগস্ট, লাটভিয়া পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করে।
লাটভিয়ার সংস্কৃতিতে লোকসংগীত, নৃত্য, ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“জাতীয় গান ও নৃত্য উৎসব” (Latvian Song and Dance Festival): প্রতিটি ৫ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয় এবং হাজার হাজার গায়ক-নৃত্যশিল্পী অংশগ্রহণ করেন।
জানি উৎসব (Jāņi): মধ্যগ্রীষ্মের রাত উদযাপনের ঐতিহ্য, ফুলের মালা, আগুন ও লোকগান দিয়ে পালন করা হয়।
রিগা শহর তার অনন্য আর্ট নুভো (Art Nouveau) স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
পুরাতন রিগা (Old Riga) ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।
লাটভিয়া বর্তমানে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ, যার অর্থনীতি ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতে উন্নয়ন করছে।
তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি)
পরিবহন ও লজিস্টিকস
কৃষি ও বনজ সম্পদ
পর্যটন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) – ২০০৪ সাল থেকে
নেটো (NATO) – ২০০৪ সাল থেকে
শেনজেন অঞ্চল, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (WTO)
লাটভিয়া প্রকৃতি-প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ।
গাউজা ন্যাশনাল পার্ক (Gauja National Park) — পাহাড়, গুহা ও মধ্যযুগীয় দুর্গে ভরা।
কেমেরি ন্যাশনাল পার্ক — জলাভূমি ও পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য জনপ্রিয়।
জুরমালা (Jurmala) — বালুকাময় সৈকত ও হেলথ রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত।
সিগুলদা (Sigulda) — পাহাড়ি এলাকা ও প্রাকৃতিক গুহার জন্য পরিচিত।
লাটভিয়ায় ইন্টারনেট গতি বিশ্বের দ্রুততমগুলোর মধ্যে একটি।
দেশটির ৫২ শতাংশ জমি বনভূমিতে আবৃত।
লাটভিয়ান ভাষা অন্যতম প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা।
রিগা শহরে রয়েছে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ আর্ট নুভো স্থাপত্য সংগ্রহ।
লাটভিয়া একটি শান্তিপূর্ণ, ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং প্রযুক্তি-অগ্রসর দেশ যা তার নিজস্ব পরিচয়, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। যারা ইউরোপের ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে শান্তি ও সংস্কৃতির সন্ধানে আছেন, তাদের জন্য লাটভিয়া হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।