লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এটি দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে সিয়েরা লিওন, উত্তর-পূর্বে গিনি এবং পূর্বে আইভরি কোস্ট দ্বারা বেষ্টিত। আফ্রিকার ইতিহাসে এই দেশটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি ছিল উপনিবেশবাদ থেকে মুক্ত হওয়া প্রথম আফ্রিকান রাষ্ট্র এবং কালো আমেরিকানদের দ্বারা গঠিত একমাত্র রাষ্ট্র।
ভৌগোলিক অবস্থান
লাইবেরিয়ার মোট আয়তন প্রায় ১,১১,৩৬৯ বর্গকিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়নের মতো। দেশটি প্রধানত নিম্নভূমি ও উপকূলীয় বনভূমিতে গঠিত, তবে কিছু পাহাড় এবং মালভূমিও রয়েছে।
ইতিহাস
লাইবেরিয়ার ইতিহাস শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, যখন আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটি (ACS) আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের জন্য এই অঞ্চলটি ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং এটি আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাজধানী মনরোভিয়ার নামকরণ করা হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নামানুসারে।
লাইবেরিয়া দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থাকলেও ১৯৮০ সাল থেকে দেশটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সামরিক অভ্যুত্থান এবং দুটি বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে (১৯৮৯–১৯৯৬ ও ১৯৯৯–২০০৩)। এই সংঘর্ষের ফলে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এবং লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়।
সরকার ও প্রশাসন
লাইবেরিয়া একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র। দেশটির সংবিধান ১৯৮৬ সালে প্রণীত হয়। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান উভয়ই। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফ্রিকার প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে এলেন জনসন স্যারলিফ নির্বাচিত হন, যা দেশটির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
অর্থনীতি
লাইবেরিয়ার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক। কফি, কাকাও, রাবার এবং তেলখাদ্য উৎপাদনে এটি সমৃদ্ধ। তবে গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল অবস্থায় ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। তবুও বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
সংস্কৃতি
লাইবেরিয়ার সংস্কৃতি আফ্রিকান ঐতিহ্য এবং আমেরিকান প্রভাবের মিশেলে গঠিত। দেশের প্রধান ভাষা ইংরেজি, তবে প্রায় ২০টির মতো স্থানীয় ভাষা প্রচলিত। লাইবেরিয়ান সমাজে সংগীত, নৃত্য, ধর্মীয় উৎসব এবং জাতীয় ঐতিহ্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ এবং সামাজিক বন্ধনে দৃঢ়।
ধর্ম
লাইবেরিয়ায় খ্রিস্টান ধর্ম সবচেয়ে প্রচলিত (প্রায় ৮৫%), তবে মুসলিম জনগণও একটি বড় অংশ (প্রায় ১২%)। এছাড়াও ঐতিহ্যগত আদিবাসী ধর্ম ও বিশ্বাসও বিদ্যমান।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
গৃহযুদ্ধের কারণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজ চলছে। সাক্ষরতার হার ধীরে ধীরে উন্নতি করছে, তবে এখনো অনেক কাজ বাকি।
লাইবেরিয়ার দর্শনীয় স্থানসমূহ